পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
১৪৪৩ হিজরি সনের পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলা জমে ওঠেনি। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ ইসলামী বইমেলা সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অন্যান্য বছর বইমেলার প্রচারের লক্ষ্যে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মাইকযোগে নামাজের আগে বইমেলা সম্পর্কে ঘোষণা দেয়া হতো এবার সে ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ইসলামী বইমেলা চত্বরে বইমেলা কমিটির সদস্যদের খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। গতবারের চেয়ে স্টলপ্রতি দুই হাজার টাকা ভাড়া বৃদ্ধির ঘটনায় অনেক বই বিক্রেতাই ক্ষুব্ধ।
কাগজের মূল্য দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকাশনাগুলো চাহিদানুযায়ী ইসলামী বই সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে বইমেলার স্টলগুলোতে হাতেগোনা কয়েকটি স্টলে নতুন বই স্থান পেয়েছে। রোজার আগে পুস্তক প্রকাশক সমবায় সমিতি নেতৃবৃন্দ পুস্তক ব্যবসায়ীদের ডেকে কাগজের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বই সঙ্কটের কথা তুলে ধরে বইয়ের দাম কিছুটা বৃদ্ধির ঘোষণা করেন।
গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বইমেলা কমিটি প্রথমে যাচাই-বাছাই করে ৬২টি স্টল বরাদ্দ দেয়। কিন্তু একটি মহলের তদবিরে মেলা চত্বরের পূর্ব পাশে বিভিন্ন স্টলের স্থান এক ফুট করে কমিয়ে গার্ডিয়ান প্রকাশনী ও মাকতাবুত হেজাজ নামে আরো দু’টি স্টলকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এতে ৬০ নম্বর স্টলের মালিক বি এম এমদাদিয়া লাইব্রেরির মাওলানা নূরে আলম ও ৬১ নম্বর স্টলের মালিক শাহাদাত লাইব্রেরির শাহাদাত হোসেনকে বইমেলার চিপার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়। ফলে তারা সুবিধামতো বইয়ের দোকান করতে না পেরে অন্যত্র দোকান করছে। শাহাদাত হোসেন ২৫ নম্বর স্টল দারুত তাহলীল প্রকাশনীতে বইয়ের দোকান ভাড়ায় বই বিক্রি করছে। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মহিউদ্দিন মজুমদার ও বেলা কমিটির সদস্য সচিব এবং ইফার প্রকৌশলী মিজানের কাছে এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করেও কোনো সুরাহা পাননি। তিনি বলেন, আগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মাইকে নামাজের সময়ে ইসলামী বইমেলা সম্পর্কে প্রচার করা হতো। বর্তমানে প্রচার-প্রচারণার অভাবে ইসলামী বইমেলা জমে উঠছে না। তিনি বইমেলা সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণার উদ্যোগ নেয়ার জোর দাবি জানান।
এদিকে করোনা-উত্তর ইসলামী বইমেলার স্টল বরাদ্দের ক্ষেত্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ব্যবসায়িক মনোভাব নিয়ে বিগত বইমেলার চেয়ে এবার কোনো কারণ ছাড়াই দু’হাজার টাকা বাড়িয়ে দশ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। বইমেলার স্টল বরাদ্দের ফরম ৫শ’ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। এছাড়া স্টলের পরিমাণ ছয় ফুটের পরিবর্তে কমিয়ে পাঁচ ফুট করা হয়েছে। ইফার ইসলামী বইমেলা কমিটির সদস্য সচিব ডি ডি শাহরুল হুদাকে তার দপ্তরে পাওয়া যায়নি। ইসলামী বইমেলার ভুক্তভোগী স্টল মালিকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ফুটপাথের হকার জাহিদ সুমনরাও ইসলামী বইমেলায় স্টল পেয়েছে। আবার অনেক প্রকৃত বই ব্যবসায়ীরা মেলায় স্টল পায়নি। নানা অনিয়মের সুবাদে সোলেমানিয়া লাইব্রেরি চৌধুরী অ্যান্ড সন্স, দারুল তাহলীলসহ চারটি স্টল বরাদ্দ পেয়েছে। ইসলামী বইমেলার স্টল বরাদ্দে নানা অনিয়ম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইফার বইমেলা কমিটির সভাপতি পরিচালক ড. আব্দুস সালাম ইনকিলাবকে বলেন, ইসলামী বইমেলার স্টল বরাদ্দে কোনো দুর্নীতি-অনিয়ম হয়নি। বিধি অনুসরণ করেই স্টল বরাদ্দ দেয়ার দাবি করেন তিনি। তবে বিগত বইমেলার চেয়ে এবার প্রতি স্টলের ভাড়া ৮ হাজার টাকার পরিবর্তে ১০ হাজার টাকায় বৃদ্ধি এবং ৫শ’ টাকার ফরম এবার ১ হাজার টাকায় বিক্রির কথা তিনি স্বীকার করেছেন। বইমেলার স্টলের জায়গার পরিমাণ এক ফিট করে কমিয়ে দুই হাজার টাকা ভাড়া বৃদ্ধি করে জুলুম করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডেকোরেশনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় স্টলপ্রতি এবার দুই হাজার টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এই বইমেলা রমজান মাসজুড়ে চলবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য বইমেলা উন্মুক্ত থাকবে। এবারের মেলায় মোট ৬৪টি স্টল রয়েছে। বইমেলায় পবিত্র কোরআনের অনুবাদ, তাফসীর, হাদিসগ্রন্থসহ ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর মৌলিক ও গবেষণামূলক গ্রন্থ এবং বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বিভিন্ন বই স্থান পেয়েছে। মেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের স্টলে সকল বইয়ে ৩৫% কমিশন এবং বিশেষ কিছু বই ৫০-৭০% কমিশনে পাওয়া যাবে। মেলার ২৩ নম্বর স্টল নূরে এমদাদিয়া লাইব্্েররিতে মাওলানা সফিউর রহমান মুবারকপুরী (রহ.) লেখা নতুন বই আর রাহীকুল মাখতুম নামের বই বাজারে এসেছে। সোলেমানিয়া বুক হাউজের সেলসম্যান মো. শাহ আলম জানান, কাগজের দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন বইয়ের সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করছে। তিনি বলেন, লেখক ড. আয়েয আল কারণী (রহ.) লেখা বই লা-তাহয়ান হতাশ হবেন না বই ও নূর নূরানী সহজ কোরআন এসেছে। মাকতাবাতুল আসলাফ স্টলের জোয়ায়ের আহসান জানান, ৬টি প্রখ্যাত ইসলামী নতুন বই এসেছে। এসব বই ৩৫% কমিশনে বিক্রি করা হচ্ছে। ৫২ নম্বর স্টল ইসলামিয়া কোরআন মহলের প্রতিনিধি হাসান জানান, কাগজের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন প্রকাশনী বই ছাপাতে পারছে না। বইঘর স্টলের এজেন্ট লতিফুজ্জামান জানান, মুহিব খানের লেখা আল কোরআনের কাব্যানুবাদ নতুন বই বাজারে এসেছে। এছাড়া সাতজন লেখকের লেখা কেয়ামত (১-৭) খণ্ড বই, ইতিহাসের মহানায়ক নতুন বইয়ের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রচারণার অভাবে ইসলামী বইমেলা জমে উঠতে বিলম্ব হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।