বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
দিন দিন নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে। শিবিরগুলোতে মিয়ানমারের নিষিদ্ধ ঘোষিত কথিত ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেসন আর্মি' (আরসা) নামের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠায় নিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়ছে সাধারণ রোহিঙ্গারা। ইতোমধ্যে নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে থাকা কয়েকশ রোহিঙ্গাকে বিভিন্ন শিবির থেকে সরিয়ে নিরাপদ স্থান হিসাবে কুতুপালং ট্রানজিট শিবিরে রাখা হয়েছে। ট্রানজিট শিবিরটিতে বর্তমানে ৬ শতাধিক রোহিঙ্গা রয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের বেশীর ভাগই হচ্ছে ক্যাম্পগুলোতে আরসা সন্ত্রাসীদের হাতে খুন-গুমের শিকার হওয়ার ভয়ে আশ্রয় নেওয়া নিরীহ রোহিঙ্গা।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার ও সরকারের উপসচিব মোঃ শামছুদ্দৌজা নয়ন জানান আকস্মিক বিপদ সংকুলের মুখে পড়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থান হিসাবেই ট্রাজিট শিবিরটি করা হয়েছে। এখানে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
তিনি আরো জানান, দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা অথবা অন্য কোন দেশ থেকে আইডি কার্ডবিহীন রোহিঙ্গা যদি থাকে তাদেরও এখানে রাখা হয় সাময়িকভাবে। তিনি বলেন, মূলত ট্রানজিট শিবিরটি হচ্ছে-অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের নিরাপদ আশ্রয় স্থান। এই ট্রানজিট শিবিরে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার জন্য তিন ব্যাটালিয়ান আনসার সদস্য নিয়োজিত রয়েছে। তবে শিবিরগুলোতে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হুমকির কারণে কত সংখ্যক রোহিঙ্গা নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন তার সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেননি অতিরিক্ত এই আরআরআরসি।
এই নিরাপত্তাহীনতার কারণে আরসা সদস্যদের গুলিতে ৬ মাস আগে নিহত রোহিঙ্গা নেতা মাষ্টার মুহিব উল্লাহ’র পরিবার সদস্যরা ইতোমধ্যে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন। জানা গেছে, নিহত রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহর স্ত্রী নাসিমা খাতুন তার ৫ ছেলে, ৪ কন্যা এবং এক মেয়ে জামাইকে নিয়ে গত বৃহষ্পতিবার রাতেই কানাডার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছেন। এক প্রকার গোপনেই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় এই রোহিঙ্গা পরিবারটি দেশ ছেড়ে গেছে। তবে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা প্রশাসনের কোন সরকারি কর্মকর্তাই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নন। এমনকি আরসা নামের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যদের পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের পর নিহত মুহিব উল্লাহর পরিবারকে নিরাপত্তাহীনতার কারণে যেখানে রাখা হয়েছিল সেখানকার লোকজনও বিষয়টি জানেন না।
বেশ কিছুদিন ধরে একই স্থানে নিরাপদে আশ্রয় নেওয়া একজন নিরাপত্তাহীন রোহিঙ্গা জানান, রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহর পরিবারের সদস্যদের কয়েক দিন আগে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। তবে এখনো পর্যন্ত তারা তাদের আশ্রয় নেওয়া বস্তিতে ফিরে আসেনি।'
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ৯ টার দিকে কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে নিজ অফিসে সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহ। তিনি রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসসিএইচ) নামের একটি সংগঠনের সভাপতি ছিলেন।
এ ঘটনার পর নিহত মুহিব উল্লাহর ভাই হাবিবুল্লাহ বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসতে শুরু করে হত্যাকান্ডে আরসা জড়িত থাকায় বিষয়টি। আর তখন থেকেই মুহিব উল্লাহর পরিবার এবং সাধারণ রোহিঙ্গাদের উপর আরসা সদস্যদের হুমকি নেমে আসে।
আইন শৃখলা রক্ষাকারি সংস্থা নিরাপত্তাজনিত কারণে নিহত মুহিব উল্লাহর স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি, হত্যা মামলার বাদি হাবিবুল্লাহ সহ ৬ টি পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে নিয়ে যায় কুতুপালং ট্রানজিট শিবিরের নিরাপদ স্থানে।
জানা গেছে, এ সময়ে নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ পূর্বক মুহিব উল্লাহর পরিবারটি তৃতীয় কোন দেশে আশ্রয় নেওয়ার ইচ্ছায় জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক সংস্থা-ইউএনএইচসিআর এবং আন্তর্জাতিক অভিভাসন সংস্থা আইওএম'র কাছে আবেদন করে। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে কানাডায় স্থানান্তর করা হয় ওই পরিবারটিকে।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের একজন পদস্থ কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন-' বিষয়টি নিয়ে কোন কিছু জানানো আপাতত নিষেধ রয়েছে।'
অপরদিকে মাষ্টার মুহিব উল্লাহ হত্যা মামলার বাদী (মুহিব উল্লাহর ভাই) হাবিবুল্লাহও হত্যা মামলার পর থেকে আরসা সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকি নিয়ে গত ৬ মাস ধরে কুতুপালং ট্রানজিট শিবিরের নিরাপদ অবস্থানে ছিলেন। ট্রানজিট শিবিরটিতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠি আরসার হুমকির মুখে নিরাপত্তার আশ্রয় নেওয়া বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার সাথে আলাপ করে যে তথ্য পাওয়া গেছে তা রিতীমত উদ্বেগজনক।
কুতুপালং শিবিরে আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহ হত্যাকান্ডের মাত্র তিন সপ্তাহ পর উখিয়ার বালুখালী শিবিরের একটি মাদ্রাসায় আরসা সন্ত্রাসীদের হাতে ৬ রোহিঙ্গা হত্যার আরেক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছিল। গত বছরের ২২ অক্টোবর রাতে সংঘটিত নারকীয় এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় উখিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী রোহিঙ্গা নুরুল ইসলাম ঘটনার জন্য ২৫ জন আরসা নেতার নাম পরিচয় উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২৫০ জনকে আসামী করেন তিনি। আসামীরা সবাই আরসা সন্ত্রাসী গোষ্ঠির সদস্য বলে জানা গেছে।
মামলাটির তদন্তকারি সংস্থা কক্সবাজারের পিবিআই পুলিশ সুপার (এসপি) সরোয়ার আলমের মতে, হত্যাকান্ডে জড়িত এ পর্যন্ত ২১ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩ জন আসামী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
সেই হত্যাকান্ডের ঘটনার পর মামলার বাদী নুরুল ইসলামকেও আরসা সন্ত্রাসীরা হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে বলে জানা গেছে। বাদী নুরুল ইসলাম আত্মরক্ষার্থে এখন ট্রানজিট শিবিরের নিরাপদ স্থানে রয়েছেন। মামলার বাদী রোহিঙ্গা নুরুল ইসলাম জানান, তিনি এক স্ত্রী সহ ৬ সন্তানের পরিবার নিয়ে রয়েছেন নিরাপদ স্থানে। তার আরেকজন স্ত্রী এক সন্তান নিয়ে শিবিরে রয়েছেন। তিনি উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, আরসা সদস্যরাও রোহিঙ্গা মুসলিম। কিন্তু তারা সাংঘাতিক উগ্র। তাদের কাছে 'মা বোনেরও যেন পরিচয় নেই।' তিনি জানান, আরসা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কেউ টু শব্দটি করতে পারবে না। তিনি ৬ জন নিরীহ রোহিঙ্গার হত্যা মামলার বাদী হওয়ার কারণেই এখন নিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়েছেন। নিহত মুহিব উল্লাহর পরিবারের মত সুযোগ পেলে তিনিও অন্য কোন দেশে পাড়ি দেবেন বলে জানান।
এভাবে উখিয়া টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হাজারো রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ভয়ে নিরাপত্তাহীন বলে জানা গেছে। তারা না পরছে এই নিরাপত্তাহীনতার কথা প্রকাশ করতে। আর না পারছে সেই ভয় কাটিয়ে উঠতে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।