Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিষিদ্ধ জাটকা আহরনে উপকূলে ৪ কোটি মিটার জাল বাজেয়াপ্ত ৪২৬ জেলের কারাদন্ড

বেকার ৩.৯০ লাখ জেলে পরিবারের মাঝে ৩১ হাজার টন চাল বিতরন চলছে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০২২, ৮:০৩ এএম

দেশের উপক’লভাগের প্রজনন এলাকায় অক্টোবরের প্রথমভাগে সাগর থেকে ছুটে আসা মা ইলিশের ডিম ছাড়ার পরে ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা আহরনে নিষেধাজ্ঞার গত ৫ মাসে সাড়ে ৪ কোটি মিটারেরও বেশী কারেন্ট জাল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এসময়ে প্রায় ৭ হাজার অভিযান ছাড়াও প্রশাসনের সহযোগীতায় ১২শ ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে জাটকা সহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় ২শ টন মাছ আটক করেছে মৎস্য বিভাগ। প্রায় ৮০ কোটি টাকা মূল্যের আটকৃত সাড়ে ৪ কোটি মিটার কারেন্ট জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এছাড়া আরো প্রায় ১০ হাজারটি বিভিন্ন অবৈধ জাল আটক করা হয়েছে। জাটকা নিধন বন্ধে এসব অভিযান ও ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে ৭০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় ছাড়াও ৪২৬ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডাদেশ দিয়েছে আদালত।
এবার গত ৩১ মার্চ থেকে দক্ষিনাঞ্চল সহ উপক’লের ৮টি জেলায় জাটকা নিধন প্রতিরোধ সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। বরিশালের মেহেদিগঞ্জ, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, ভোলার লালমোহন, ঝালকাঠীর রাজাপুর এবং পিরোজপুর ও বরগুনার সদর উপজেলায় জাটকা নিধন প্রতিরোধ সপ্তাহের অনুষ্ঠান সমুহ পালিত হচ্ছে।
উপক’লের ২০ জেলার ৯৬টি উপজেলায় জাটকা আহরনে বিরত ৩ লাখ ৯০ হাজার জেলে পরিবারের মাঝে ৪০ কেজি করে দুমাস চাল বিতরন করছে সরকার। এরমধ্যে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার ৪৩টি মধ্যে ৪১টি উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ জেলে পরিবারের মাঝে ২০ হাজার টন চাল বিতরন শেষ পর্যায়ে। চলতি মাসেই উপক’লভাগের ৩ লাখ ৯০ হাজার জেলের মাঝে আরো ৪০ কেজি করে চাল বিতরনের কথা জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
‘হিলসা ফিসারিজ ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশন প্লান’র আওতায় ২০০৫ সালেই দেশে সর্ব প্রথম ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে দশ দিনের আহরন নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি জাটকা আহরনেও বিধি নিষেধ জারী করে সরকার। সে সময় থেকে প্রজনন মৌসুমে ও পরবর্তী মাসগুলোতে জাটকা আহরনে নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশে ইলিশের উৎপাদন এক সময়ের ২ লাখ টন থেকে গত অর্থ বছরে সাড়ে ৫ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। যার প্রায় ৬৬% বা ৩ লাখ ৫৮ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন ও আহরন হয়েছে দক্ষিনাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ এবং উপক’লীয় নদী ও সাগর মোহনায়।
বাংলাদেশের ইকাসিষ্টেমে সারা বছরই ৩০% ইলিশ ডিম বহন করে। পরিপক্ক হয়ে এসব ডিম ছাড়লেও যে ডিমগুলো পুরুষ ইলিশ দ্বারা নিষিক্ত হয়ে থাকে, তা নতুন প্রজন্ম গঠন করে। নজরদারী বৃদ্ধির ফলে দেশে জাটকা’র উৎপাদন ২০১৫ সালে ৩৯ হাজার ২৬৮ কোটি থেকে ২০১৭ সালে ৪২ হাজার ২৭৪ কোটিতে উন্নীত হয় বলে মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউট জানিয়েছে। যা পরবর্তি বছরগুলোতেও আনুপাতিকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে ইলিশের উৎপাদনও ১৯৯৮Ñ’৯৯ সালের ১.৯৮ লাখ টন থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরে ৫ লাখ ৬০ হাজার টনে উন্নীত হবার সম্ভবনার কথা জানিয়েছেন মৎস্য বিজ্ঞানীগন।
মৎস্য গবেষনা ইনষ্টিটিউট-এর গবেষনায় দেখা গেছে, প্রজননক্ষম মা ইলিশের হার ২০১৭ সালে ৭৩% থেকে ’১৮ সালে ৯৩%-এ উন্নীত হবার সাথে প্রজনন সাফল্যও ৮০%-উন্নীত হয়। কিন্তু জাটকা আহরনে ইলিশের বংশ বিস্তৃতি ব্যাহত হচ্ছে। যা প্রতিরোধে প্রতিবছরের মত এবারো ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা আহরন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ইলিশের একক অবদান ১%-এর বেশী। আর মৎস্য খাতে অবদান প্রায় ১২.৫০%। সারা বিশ্বে আহরিত ইলিশের প্রায় ৬৫% এখন বাংলাদেশে উৎপাদন ও আহরিত হচ্ছে।
ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র ও মাইগ্রেশন পথ নির্বিঘœ রাখা সহ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের মজুত ও জীব বৈচিত্রকে সমৃদ্ধ করতে ২০১৯ সালে হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন ৩ হাজার ১৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে দেশের প্রথম ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা বা মেরিন রিজর্ভ এরিয়া’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
মৎস্য বিজ্ঞানীগনের সুপারিশে সমুদ্রে যাবার সময় পর্যন্ত যেসব এলাকায় ইলিশ পোনাÑজাটকা খাদ্য গ্রহন করে বেড়ে ওঠে, সেগুলোকে ‘গুরুত্বপূর্ণ নার্সারী ক্ষেত্র’ হিসেবে চিহিৃত করে ‘অভয়াশম’ ঘোষনা করেছে সরকার। বরিশালের হিজলা, মেহদিগঞ্জ ও সদর উপজেলার কালাবদর, গজারিয়া ও মেঘনা নদীর প্রায় ৮২ কিলোমিটার এলাকার ৬ষ্ঠ অভয়াশ্রম সহ ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালী চর রুস্তম পর্যন্ত তেতুুলিয়া নদীর ১শ কিলোমিটার এবং শরিয়তপুরের নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জে নিম্ন পদ্মার ১২০ কিলোমিটার এলাকা, চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১শ কিলোমিটার, মদনপুর থেকে ভোলার চর ইলিশা হয়ে চর পিয়াল পর্যন্ত মেঘনার শাহবাজপুর চ্যানেলের ৯০ কিলোমিটার এবং পটুয়াখালীর কলাপাড়ার আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার এলাকায় পর্যয়ক্রমে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ইলিশ সহ সব ধরনের মৎস্য আহরন নিষিদ্ধ থাকায় প্রতি বছরই আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ