Inqilab Logo

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কুষ্টিয়া চিনিকলের কর্তারা দিন কাটাচ্ছেন পুকুর-জমি লিজ দিয়ে

কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোটার | প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০২২, ৬:৫৮ পিএম

৫৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে ২০২০-২১ অর্থ বছরে আনুষ্ঠানিকভাবে মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় এক সময়ের লাভজনক প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া চিনিকলের। সেই থেকে কুষ্টিয়া চিনিকলের চাকা বন্ধ রয়েছে।

শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক হলেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত লোকবল নিয়োগ, চুরি, ট্রেড ইউনিয়ন, দুর্নীতি-অনিয়মসহ নানা কারণে ৯০ দশকের পর থেকে ধারাবাহিক লোকসানের মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। এ ধারাবাহিকতায় আনুষ্ঠানিকভাবে আখ মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ হওয়া পর্যন্ত কুষ্টিয়া চিনিকলের লোকসানের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৬০৬ কোটি ৫ লাখ টাকা। ধারাবাহিক লোকসানের কারণে দিন দিন রুগ্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপ নেওয়ায় ২০২০-২১ আখ মাড়াই মৌসুম শেষ হওয়ার পর সরকার কুষ্টিয়াসহ বেশ কয়েকটি চিনিকল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই থেকে কুষ্টিয়া চিনিকলের চাকা বন্ধ রয়েছে।

সরেজমিনে কুষ্টিয়া চিনিকল পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে ৫৫ জন স্থায়ী স্টাফসহ অস্থায়ী স্টাফ নিয়ে সব মিলিয়ে ১০৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতিষ্ঠানটিতে এখনো কর্মরত রয়েছেন। তবে সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠানটির মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করায় অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী বসে বসে খোশ গল্প করে সময় পার করছেন। আবার হাতে তেমন কোনো কাজ না থাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই নিজেদের ইচ্ছামতো অফিসে আসেন যান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিষ্ঠানটি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ২১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা খরচ করেছে। যদিও কুষ্টিয়া চিনিকলের কাছে দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রায় ২৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিক-কর্মচারীদের এই বকেয়া পাওনা টাকা নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির চাকা বন্ধ থাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে বর্তমানে মিলের জায়গা-জমি এবং পুকুর জলাশয় সাধারণ মানুষের কাছে লিজ দেওয়া ছাড়া কার্যত আর তেমন কোনো কাজ নেই।

কুষ্টিয়া চিনিকলের মহা-ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান জানান, কুষ্টিয়া চিনিকলের চাষযোগ্য প্রায় ৮৫ একর জায়গা গত কয়েক বছর ধরে লিজ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ৪টি পুকুর-জলাশয়ও মাছচাষের জন্য লিজ দেওয়া হচ্ছে। এখান থেকে প্রতি বছর প্রায় ১৮ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। তবে চিনিকলের চাকা না ঘুরলেও গোডাউনে রক্ষিত প্রায় ৩০৩ টন চিটাগুড় পাহারা দিতে হচ্ছে। এসব চিটাগুড় সরকার থেকে দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির অনুকূলে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।

এদিকে গত বছরের ৩ জুন রহস্যজনকভাবে কুষ্টিয়া চিনিকলের গোডাউন থেকে ৫২ দশমিক ৭ টন চিনি গায়েব হয়ে যাওয়ার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। এ ঘটনায় সেদিনই গুদামের স্টোরকিপার ফরিদুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বন্ধ চিনিকলের গোডাউন থেকে বিপুল পরিমাণ এই চিনি গায়েবের ঘটনা সে সময় দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়।

পরবর্তীতে চিনিকলের গুদাম থেকে বিপুল পরিমাণ এই চিনি গায়েবের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মামলার আসামিরা হলেন- কুষ্টিয়া চিনিকলের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আল-আমীন, গুদাম রক্ষক ফরিদুল হক ও সর্দার বশির উদ্দিন।

কুষ্টিয়া চিনিকলের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ফেব্রুয়ারি মাসে যোগদান করা প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. মাহমুদুল হক জানান, কুষ্টিয়াসহ যেসব চিনিকল বন্ধ রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করার বিষয়ে সরকারের যথেষ্ট সদিচ্ছা আছে। সরকার যৌথ উদ্যোগে এসব প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করার চিন্তা ভাবনা করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ