Inqilab Logo

রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

শুরু হয়নি সড়ক প্রশস্তকরণ

কালনা সেতুর কাজ এগিয়ে চলেছে সেতু চালু হলে দুর্ঘটনা ও ভোগান্তির শঙ্কা

আবদুস ছালাম খান, লোহাগড়া (নড়াইল) থেকে | প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০২২, ১২:১৪ এএম

ঢাকা-বেনাপোল ভায়া নড়াইল-লোহাগড়া-যশোর মহাসড়কের কালনা পয়েন্টে মধুমতি নদীর ওপর নির্মাণাধীন কালনা সেতুর কাজ দ্রুত এগিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট মহাসড়কটি প্রশস্তকরণের কাজ এখনও শুরু হয়নি। অথচ নির্ধারিত সময়ের আগেই অর্থাৎ পদ্মা সেতুর সাথেই চালুর লক্ষ্যমাত্রা ধরে কালনা সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। মহাসড়কের বিদ্যমান ১৮ ফুট সড়কের সাথে আরো ৬ ফুট প্রশস্তকরণের সিদ্ধান্ত হলেও তা বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগ নেই। ফলে কালনা সেতু চালু হলে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে দুর্ঘটনা ও ভোগান্তি বেড়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে।
কালনা সেতুর পশ্চিম পারে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা এবং পূর্ব পারে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা। পদ্মা সেতুর চেয়ে দুই লেন বেশি প্রশস্ত এবং দেশের প্রথম ছয় লেন এই কালনা সেতু চালু হলে লোহাগড়া নড়াইলসহ যশোর বেনাপোল খুলনা সাতক্ষীরা থেকে ঢাকাগামী যানবাহন মাগুরা-ফরিদপুর দৌলতদিয়া আরিচা পার হয়ে যাতায়াতের পরিবর্তে কালনা সেতু পার হয়ে সংক্ষিপ্ত পথেই ঢাকা যাবে। এছাড়া স্থলবন্দর বেনাপোলের আমদানী-রফতানি পণ্যাদি পরিবহনেও এই সেতু ব্যবহার করা হবে। ফলে কালনা সেতু চালুর আগেই কালনাঘাট-যশোর ভায়া লোহাগড়া নড়াইল যশোর সড়ক প্রশস্ত করা না হলে সড়কে যানজটসহ নানা ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে। এশিয়ান হাইওয়ে-১ এর অংশ ছয়লেনের দৃষ্টিনন্দন এই সেতু চালু হলে দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। ‘ক্রস বর্ডার রোড নেট ওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টে’র আওতায় জাইকার অর্থায়নে জাপানের টেককেন কর্পোরেশন ও ওয়াইবিসি এবং আবদুল মোনেম লি. যৌথভাবে সেতু নির্মাণের কাজ করছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর পূর্ব পাড়ের সংযোগ সড়কের ১৩টি কালভার্টের ১২টির কাজ শেষ হয়েছে। ভাটিয়াপাড়া গোল চক্করের কাছে একটি কালভার্টের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। আটটি আন্ডারপাস নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। নদীর পূর্বপাড়ে টোল প্লাজা নির্মাণ কাজ চলছে। এটি হবে ডিজিটাল টোল প্লাজা। উভয় পাশে মোট পৌনে চার কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণে মাটির কাজ শেষ হয়েছে। পূর্বপাড়ের সংযোগ সড়কের কার্পেটিং কাজ শুরু হয়েছে। পশ্চিম পাড়ের সংযোগ সড়কে বালি পাথর দিয়ে সমান করা হচ্ছে। সেতুর একটি পিলারের পানির উপরের অংশের কাজ এবং একটি স্প্যানের কাজ বাকি রয়েছে। সেতুর মাঝখানে ধনুকের মত বাঁকা সুদৃস্য ডিজাইন করা হয়েছে। যাকে বলা হয় ‘নেলসন লোস আর্চ টাইপের সেতু’।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে- এটি হবে দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন এবং প্রশস্ত সেতু। ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। তবে নির্ধারিত মেয়াদের আগেই অর্থ্যাৎ পদ্মাসেতু চালুর সাথেই কালনা সেতু চালুর লক্ষ্য নিয়ে নির্মাণ কাজ দিন-রাত দুই শিফটে চলছে। সংশোধিত পরিকল্পনা অনুসারে কালনা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১০ মিটার। ছয় লেনের এই সেতুতে দ্রুত গতির চার লেনের উভয় পাশে একটি করে লেন কম গতির যানবাহন চলাচলের জন্য থাকবে। সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে ৯৫৯ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা।
২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কালনা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এ সময় চার লেনের কালনা সেতুর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৭০ কোটি টাকা এবং সেতুর দৈর্ঘ্য ছিল ৬৮০ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ১৮.২০ মিটার। কিন্তু প্রকল্প অনুমোদনের পর সেতুর সাথে রেল লাইন স্থাপনের পরিকল্পনা, জমি অধিগ্রহন ইত্যাদি নানা জটিলতার কারণে কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়। অবশেষে পৃথক রেল সেতু নির্মাণসহ সব জটিলতা কাটিয়ে সংশোধিত প্রকল্পে ছয়লেনের সেতু হিসাবে ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। তখন ২০২১ সালের ৩০ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার সময়ে কাজ বন্ধ থাকায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
কালনাঘাট-যশোর মহাসড়কে বাসের চালক টুটুল শেখ বলেনÑ অপ্রশস্ত এ রাস্তায় বাস চালিয়ে সময়মত গন্তব্যে পৌছানো কঠিন হয়ে গেছে। রাস্তা প্রশস্ত না করে কালনা সেতু চালু হলে অবস্থা কী হবে আল্লাহই ভালো জানেন। কালনাঘাট এলাকার ইউপি সদস্য মো. রসুল সিকদার বলেনÑ শুনেছি কালনা-যশোর মহাসড়ক ২৪ ফুট চওড়া হবে। কিন্তু এখনও তো কোন কাজ শুরু হলো না। তিনি মহাসড়কের সুবিধা পেতে কালনা সেতু চালুর সাথে সাথে বিদ্যমান কালনাÑযশোর মহাসড়কসহ অপ্রশস্ত ফিডার সড়কগুলিকে প্রশস্তকরণের দাবি জানান। নড়াইলের বিশিষ্ট আইনজীবী মো. আলমগীর সিদ্দিকী বলেনÑ এই সড়কের বিশেষ করে মালিরবাগ মোড় থেকে রূপগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত অংশটি মহাসড়ক হিসাবে ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপোযোগি।
কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. আশরাফুজ্জামান জানানÑ মোট কাজের ৬৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মাসেতুর সাথেই চালুর আশা নিয়ে রাতদিন দুই শিফটে কাজ চলছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ নড়াইলের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এ এম আতিকুল্লাহ জানানÑ কালনা ঘাট থেকে ভাঙ্গুড়া পর্যন্ত (নড়াইল জেলার অংশ) বিদ্যমান ১৮ ফুট সড়ককে ২৪ ফুটে উন্নীতকরণ কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শীঘ্রই শুরু হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ