Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্রীজ নেই, প্রাণ হাতে নিয়ে ৩০ হাজার মানুষের রোজ ভৈরব পারাপার

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০২২, ১:৩০ পিএম

খুলনা শহরের সাথে রূপসা, তেরোখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রধানত ভৈরব নদী পারপার কেন্দ্রিক। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ নৌকা ও ট্রলারযোগে ভৈরব পার হয়ে গন্তব্যে যান। ফেরি রয়েছে, তবে স্থানীয় প্রভাবশালী এক যুবলীগ নেতার টেন্ডারে নেয়া ফেরিটি যানবাহন না ভরলে ছাড়া হয় না। কখনো কখনো ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় ফেরীটির জন্য। পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল ব্রীজ করার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর আলোর মুখ দেখেনি। এদিকে, দ্রব্যমূল্যের অজুহাতে পারপারের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে ট্রলার চালকেরা। সব মিলিয়ে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন সাধারণ মানুষ।
রূপসা ও ভৈরব নদের প্রায় সংযোগ স্থলে এক প্রান্তে খুলনার জেলাখানা ঘাট। অন্যপ্রান্তে রূপসা উপজেলার সেনের বাজার ঘাট। সেনের বাজার ঘাট হতে রূপসা, তেরোখাদা ও দিঘলিয়ায় যাতায়াত করা হয়। এক্ষেত্রে তেরোখাদার দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার ও দিঘলিয়া উপজেলা তেরোখাদা উপজেলা হয়ে যেতে গড়ে ৫০ কিলোমিটার। তেরোখাদা উপজেলার ভিতর দিয়ে অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত পথে নড়াইল জেলায় যাওয়া যায়, তাই অনেকেই এ পথ দিয়ে নড়াইলও গিয়ে থাকেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাটার সময় নৌকা থেকে ফেরিঘাটের পন্টুনের উচ্চতা ২ থেকে ৩ ফুটে গিয়ে দাঁড়ায়। অপেক্ষাকৃত খাড়া গ্যাংওয়ে থেকে পন্টুনে নামা নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। মানুষের পাশাপাশি মোটর সাইকেল, মালবাহী ভ্যান, রিকশা পার হয় ট্রলারে। উল্রেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, শতকরা ৮০ ভাগ ট্রলার চালকই কিশোর ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক। নদীর মাঝ বরাবর কয়েকটি ঘুর্ণি রয়েছে। যার কাছাকাছি গেলে নৌকা ট্রলারের নিয়ন্ত্রন বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। অভিজ্ঞ চালকেরাই এ অবস্থা সামাল দিতে পারেন। প্রতিটি ট্রলারে মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হয়ে থাকে। শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ট্রলারগুলোর সবই কাঠের তৈরি। বড় ঢেউয়ে ট্রলারগুলো দোল খেলে যাত্রীদের মাঝে আতংকের সৃষ্টি হয়।
প্রায়শ: ঘাটে ও ট্রলারে যাত্রী হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যায়। এক সপ্তাহ ধরে ট্রলারে পারপার ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আগে পার হতে ৩ টাকা লাগতো। এখন নেয়া হচ্ছে ৫ টাকা। রাত হলে ১০ টাকা। ঘাট থেকে পারাপারের সময় একটি বড় ব্যাগ বা কোন মালামাল সঙ্গে নিলেই বাড়তি টাকা গুনতে হয় ট্রলারে ও টোলে। প্রতিবাদ করলে অনেক সময় যাত্রীদের অপমানিত হতে হয়। গায়ে হাতও তোলেন মাঝিরা। নারী ও শিশু যাত্রীদের ধরে টানাটানি টোল আদায়কারী ও ট্রলার মাঝিদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এতে নারী যাত্রীরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন।
জেলখানা ঘাটে একটি ফেরী রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, যাত্রী ও গাড়িতে টইটুম্বুর না হলে ফেরী ছাড়া হয় না। ফেরী কম চালানো হবে এমন শর্তে নৌকার মাঝিদের সংগঠন ফেরী ইজারাদারকে মাসোহারা প্রদান করে থাকে।
ঘাট ও ফেরি ইজারা নেয়া যুবলীগ নেতার মোবাইল ফোনে বক্তব্য নেয়ার জন্য বারবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। ঘাটে তার একজন কর্মি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা এখানে ব্যবসা করতে এসেছি। লোকসান করতে আসিনি। তাই ফেরি যানবাহনে পূর্ণ হলে তবেই তা ছাড়া হয়।
খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহি প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান মাসুদ জানান, জেলখানা ঘাট ও ফেরি ৩ বছরের জন্য ইজারা দেয়া হয়েছিল যা এ বছর ৩০ জুন শেষ হবে। ফেরি চলাচলে কোনো অনিয়মের অভিযোগ তার কাছে নেই বলে তিনি জানিয়েছেন।
এদিকে, খুলনা জেলখানা ঘাটে একাধিকবার সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল যা কখনোই আলোর মুখ দেখেনি। আবারও এমন একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সড়ক বিভাগ। গত বছর ২৯ নভেম্বর সড়ক বিভাগের প্রধান কার্যালয়ের একটি টিম খুলনা পরিদর্শন করে গেছেন। সেতুটির দৈর্ঘ্য হবে ১ হাজার ৩০০ মিটার এবং সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা। তবে বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ