পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের আদালতগুলোতে বিচারাধীন মামলার প্রকৃত সংখ্যা কত? এ প্রশ্নের জবাব দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন আদালতগুলো। তাদের কাছে কোনো ডাটাবেজ নেই। নেই আদালত-সহায়ক পর্যাপ্ত জনবল। তদুপরি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠার পঞ্চাশ বছরে মামলা এবং বিচার সংক্রান্তে পরিচালিত হয়নি কোনো জরিপ। ফলে বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি লাঘবসহ গৃহীত ইতিবাচক উদ্যোগগুলোও তেমন কোনো সুফল বয়ে আনেনি। এমনকি প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান ‘ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প’টিও মামলা-জট হ্রাসে কতটা সুফল আনবেÑ সে প্রশ্ন উঠেছে। মামলার উৎসমুখ বন্ধ না করে শুধু তথ্য সংগ্রহ মামলা-জট হ্রাস করবে না বলেও অভিমত বিচার সংশ্লিষ্টদের।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক করার সময় (২০০৭ সালে) দেশে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে সে সময় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার ২৭২টি। পাঁচ বছরের বেশি পুরনো মামলা ছিল ১৫ হাজার ৫২১টি। বিচার বিভাগ পৃথক হয়েছে দেড় দশক হলো। এর মধ্যে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক গত বছর ৩০ জুন জাতীয় সংসদে জানিয়েছিলেন, দেশে মোট মামলার সংখ্যা ৩৯ লাখ। এই সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানায়, মামলা-জট নিরসনই এখন বিচার বিভাগের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী দায়িত্বভার গ্রহণের পর পরই (গত ১ নভেম্বর) মামলা জটের বিরুদ্ধে এক প্রকার জেহাদ ঘোষণা করেন। পরে গত ২৭ জানুয়ারি তিনি আদালতে মামলার সংখ্যা, নিষ্পত্তিসহ যাবতীয় বিষয় মনিটরিংয়ের জন্য ৮ বিভাগে ৮ বিচারপতির নেতৃত্বে কমিটি করে দেন। একই সঙ্গে সাচিবিক সহায়তার জন্য বিচার বিভাগীয় ৮ কর্মকর্তাকেও দায়িত্ব দেয়া হয়। এ ধারাবাহিকতায় গত ১৪ মার্চ সারা দেশের মামলার নথি সরেজমিন গণনা করে ‘মনিটরিং কমিটি ফর সাবোরডিনেট কোর্টস’র কাছে দাখিল করতে বলা হয়েছে। উল্লেখিত তারিখ অনুযায়ী আজ (বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ) তথ্য প্রদানের শেষ দিন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানায়, দেশে উচ্চ আদালতের অধীনস্থ দেওয়ানি আদালত, অর্থঋণ আদালত, পারিবারিক আদালত, দেউলিয়া আদালত, ফৌজদারি আদালত, শ্রম আদালত, পরিবেশ আদালত, কোর্ট অব সেটেলমেন্ট, সালিসি ট্রাইব্যুনাল ও সালিসি আপিল ট্রাইব্যুনাল, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনাল ও আপিল ট্রাইব্যুনাল, ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনাল ও আপিল ট্রাইব্যুনাল, বিশেষ ক্ষেত্রে বিচার ট্রাইব্যুনাল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল, নৌ-আদালত, গ্রাম আদালত, ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ ১৮ ধরনের আদালত রয়েছে। এসব আদালতে ১ হাজার ৯শ’ বিচারক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তাদের দেয়া নিজ নিজ বিচারিক এখতিয়ার মতে প্রযোজ্য ছক অনুযায়ী মাসওয়ারি প্রতিবেদন পাঠাচ্ছেন। ত্রৈমাসিক-বার্ষিক প্রতিবেদনও দিতে হয়।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে কর্মরত কর্মচারীরা জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালগুলো ১১ ধরনের তথ্য পাঠিয়ে থাকে। ধর্ষণজনিত হত্যা মামলা, যৌতুকের জন্য হত্যা মামলা, যৌতুকের জন্য নির্যাতন মামলা, ধর্ষণ মামলা, অপহরণসহ হত্যা মামলা, অন্যান্য নারী ও শিশু মামলা, শিশু মামলা, মাদক মামলা, মানবপাচার মামলা, ফৌজদারি বিবিধ মামলা এবং অন্যান্য মামলা (যদি থাকে)। মাসিক প্রতিবেদনে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য করণীয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট বিচারকের মতামত দেয়ারও সুযোগ রাখা হয়। বিচারিক আদালত থেকে পাঠানো নিয়মিত এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে হয়তো দেশের মামলা-পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন সম্ভব। কিন্তু মামলার প্রকৃত সংখ্যা, সকল পর্যায়ের বিচারিক আদালত এবং অধস্তন বিচার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা লাভ অত্যন্ত দুরূহ।
গত ১৪ মার্চ যে সরেজমিন গণনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তাতে বিচার ফাইল সংক্রান্ত তথ্য, ৫ থেকে ১০ বছর ধরে আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন মামলার তথ্য উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। মামলা নম্বর, মামলা দায়েরের তারিখ, মামলার বর্তমান পর্যায়, মামলা নিষ্পত্তিতে উচ্চ আদালতের কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকলে সেই মামলার নম্বরও উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। বিষয়টি জটিল বলে জানান আদালত সহায়ক কর্মচারীরা। তারা জানান, অধিকাংশ মামলায়ই একাধিক ধারা প্রয়োগ করা হয়। সে ক্ষেত্রে একটি মামলাকে কয়টি মামলা হিসেবে গণনা করা হবে? প্রত্যেকটি নথি না খুলে ধারা অনুযায়ী সংখ্যা নিরুপণ সম্ভব নয়।
উদাহরণস্বরূপ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়েরকৃত একটি মামলায় ধারা-৭ (অপহরণ), ধারা ৯(১) (ধর্ষণ) প্রয়োগ করা হয়। এখানে কি তাহলে দু’টি মামলা গণ্য হবে? নির্দেশনায় স্পষ্ট নয়। একই মামলায় ধারা ৯(৪) (অপহরণের সঙ্গে ধর্ষণ চেষ্টা) যুক্ত করা হয়। একই আইনের ১০ ধারা (যৌন নিপীড়ন), ধারা-১১(গ) (যৌতুকের জন্য মারধর)ও যুক্ত থাকতে পারে। একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে একাধিক মামলা হয়। ফৌজদারি মামলার বিচারের বিভিন্ন পর্যায়ে স্থগিতাদেশ,আপিল,কোয়াশমেন্ট পিটিশন হতে পারে। প্রতিটি পর্যায়েই মামলার নতুন নম্বর পড়ছে। কোন্ মামলা থেকে কোনটির উৎপত্তি সেটি বোঝার জন্য নেই কোনো ডাটাবেজ। তাই ম্যানুয়ালি মামলার প্রকৃত সংখ্যা নিরুপণ, শ্রম এবং সময় সাপেক্ষ। আদালতের প্রাত্যহিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রেখে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে উচ্চ আদালতে এসব দিতে হয়। ফলে বিদ্যমান সহায়ক জনবল দিয়ে সরেজমিন গণনায় কর্মচারীরা গলদঘর্ম হচ্ছেন।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানায়, দেশে বিচারাধীন মামলার প্রকৃত সংখ্যা নিরুপণের উদ্যোগ থেকেই সরেজমিন মামলা গণনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ (কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার) তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি। কিন্তু মাত্র দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দেয়ার কারণেই জটিল মনে করছে অধস্তন আদালতগুলো। কারণ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠার পঞ্চাশ বছরে মামলা সংক্রান্ত কোনো ডাটাবেজ (তথ্যভাণ্ডার) তৈরি করা হয়নি। মামলার রেকর্ড সংরক্ষিত হচ্ছে ম্যানুয়ালি। অযত্ন-অবহেলায় বিক্ষিপ্তভাবে ফেলে রাখা হয় মামলার রেকর্ড। চাঞ্চল্যকর, রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ এবং আলোচিত মামলার ক্ষেত্রে সংরক্ষণ করা হয় আলাদা যত্ন নিয়ে। কিন্তু নথি সংরক্ষণের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় রয়েছে দারুণ নৈরাজ্য। এ বাস্তবতায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অধস্তন আদালতের পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া সম্ভব কি না এবং প্রাপ্ত তথ্য কি কাজে লাগানো হবেÑ জানতে চাওয়া হয় সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো: বজলুর রহমানের কাছে। জবাবে গতকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো: বজলুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত (৩০ মার্চ) অধস্তন আদালতগুলোর কাছ থেকে কোনো তথ্য আসেনি। আশা করছি চলে আসবে। তথ্য-উপাত্ত আসার পরই জানানো হবেÑ এগুলো কি কাজে লাগানো হবে।
এদিকে মামলার সরেজমিন সংখ্যা নিরুপণ মামলা-জট হ্রাসে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখবে না বলে মন্তব্য করেছেন অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ মো: মঈদুল ইসলাম। তিনি বলেন, কি উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে তথ্য চাওয়া হয়েছে আমি জানি না। কারণ মাসিক, ত্রৈমাসিক এবং বার্ষিক প্রতিবেদন দেয়া আদালতগুলোর নৈমিত্তিক কার্যক্রমের অংশ। বিশেষভাবে তথ্য চাওয়ার বিষয়টি বিচারিক আদালতের ওপর বাড়তি চাপ ফেলবে। এতকাল ধরে যেসব প্রতিবেদন অধস্তন দিয়ে আসছে সেসবের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ চাওয়া তথ্যগুলো রয়েছে। সেগুলো পর্যালোচনা করেই ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব। মামলা-জট সম্পর্কে তিনি বলেন, জট কমানোর জন্য যা প্রয়োজন এটি সবাই জানেন। আগে মামলার উৎসমুখ বন্ধ করতে হবে। মানুষ এমনিতেই মামলা করতে চায় না। সম্প্রতি শাহজাহানপুরে সন্ত্রাসীর গুলিতে কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি নিহত হওয়ার ঘটনায় তার বাবা বিচার চান না। বোঝাই যাচ্ছে, বিদ্যমান বিচারব্যবস্থার ওপর তিনি আস্থাশীল নন।
অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারক আরো বলেন, ভুয়া মামলা, মিথ্যা মামলা দায়েরের দরজা কি এখন পর্যন্ত বন্ধ হয়েছে? তুচ্ছ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট, রুল, স্টে, আপিল, রিভিশন হয়ে থাকে। অহেতুক মামলা শনাক্তকরণে একজন বিচারকের প্রথম দায়িত্বই হচ্ছে মামলার মেরিট চেক করা। সেটি কি করা হয়? যে আইনজীবী ভুয়া মামলা ফাইল করলেনÑ তাকে কি শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে? একটি মামলার যতগুলো স্টেকহোল্ডার রয়েছে সবাইকেই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। শুধু বাদীর ওপর চাপিয়ে দিলেই হবে না। যদি মিথ্যা ও অকারণ মামলা বন্ধ হয় তাহলে পঞ্চাশ ভাগ মামলা এমনিতেই কমে যাবে। বাকি পঞ্চাশ ভাগ নিষ্পত্তি করতেও বিদ্যমান বিচারক দিয়ে সম্ভব নয়। আরো বিচারক এবং সহায়ক জনবল নিয়োগ দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।