Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির বিধিমালা নিয়ে আইনজ্ঞদের অভিমত : সরকারের সদিচ্ছার অভাব

মালেক মল্লিক | প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০১৭, ৮:১৮ পিএম | আপডেট : ৮:৩০ পিএম, ১৫ নভেম্বর, ২০১৭
  • খসড়া চূড়ান্ত করতে ২৮ বার সময় নেয়
  • আপিল বিভাগের সঙ্গে আইনমন্ত্রীর বৈঠক আজ

নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ নিয়ে সরকার অন্তত ২৮ বার সময় নেয়। সর্বশেষ আগামী ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেন উচ্চ আদালত। প্রতিবারই উচ্চ আদালত শেষ বারের মতো সময় দিলে গেজেটের খসড়াও পর্যন্ত করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে আপিল বিভাগ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরপর আপিল বিভাগ থেকে গেজেট প্রকাশ নিয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা জানানো হয়। পরবর্তীতে আইনমন্ত্রী বৈঠকে করতে সুপ্রিম কোর্টে যাননি। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেছিলেন, এতই আমরা ইয়ে হয়ে গেলাম আলোচনা পর্যন্ত করলেন না ?। আইনজ্ঞরা জানিয়েছেন, নিম্ন আদালতকে নিয়ন্ত্রণ করতেই গেজেট প্রকাশে নিয়ে সরকারের কালক্ষেপণ। গেজেট প্রকাশ করা নিয়ে সরকারের উদাসীনতা আছে। এটা নিয়ে সদিচ্ছার অভাবও রয়েছে। তাদের মতে, স্বাধীন বিচার বিভাগ বিশ্বাস করলে নি¤œ আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধানের চাবিকাঠিও সুপ্রিম কোর্টের হাতে থাকা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেন তারা। গেজেট প্রকাশের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিদের সঙ্গে আইনমন্ত্রীর বৈঠক আজ (বৃহস্পতিবার)। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির বাসায় সন্ধ্যার দিকে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে সূত্রে জানা যায়।।
এদিকে একটি মামলা শুনানি চলাকালে একটি পক্ষ বিচারপতিদের সঙ্গে বৈঠকে বসা কতটুকু আইনগত ভিত্তি আছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবীরা। মামলায় দুটি পক্ষের মধ্যে বৈঠক বসার আইনত ও নৈতিক ভিত্তি নেই বলে তারা মনে করেন।
সরকার কেন বার বার সময় আবেদন করছেন এমন বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, এটা নিয়ে কাজ চলছে। কিভাবে সুন্দর করা যায়; সেইভাবে করার জন্য রাষ্ট্র পক্ষের কৌশলীরা কাজ করছেন। দ্রুত কেন হচ্ছে না, রাষ্ট্রপক্ষ বার বার সময় আবেদন কেন করছেন এ বিষয়ে (আইন মন্ত্রণালয়) তারাই ভালো বলতে পারেন বলতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন সাবেক এই আইনমন্ত্রী। তিনি আরো বলেন, এতদিন যেহেতু গেজেট ছাড়াই চলছে এখন চলতে সমস্যা কোথায়। গেজেট নিয়ে সরকারের ইচ্ছার অভাব আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ইনকিলাবকে বলেন, সরকারের ইচ্ছার অভাব। সরকার স্বাধীন বিচার বিভাগ বিশ্বাস করে না। যার কারণে সরকার আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিম্ন আদালতকে নিয়ন্ত্রণ করেন। ইচ্ছাকৃতভাবে গেজেট প্রকাশ করে না। তিনি আরো বলেন,গেজেট প্রকাশ করে নিম্ন আদালতকে সরকার নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করতে চান না। যার ফলে বার বার সময় আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষ। যারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করে তারা সবাই বিচার বিভাগের তথা নিম্ন আদালতের গেজেট চায়।

নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির বিধিমালা নিয়ে আইনজ্ঞদের অভিমত : সরকারের সদিচ্ছার অভাব
ক্স খসড়া চূড়ান্ত করতে ২৮ বার সময় নেয়
ক্স আপিল বিভাগের সঙ্গে আইনমন্ত্রীর বৈঠক আজ
মালেক মল্লিক
নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ নিয়ে সরকার অন্তত ২৮ বার সময় নেয়। সর্বশেষ আগামী ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেন উচ্চ আদালত। প্রতিবারই উচ্চ আদালত শেষ বারের মতো সময় দিলে গেজেটের খসড়াও পর্যন্ত করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে আপিল বিভাগ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরপর আপিল বিভাগ থেকে গেজেট প্রকাশ নিয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা জানানো হয়। পরবর্তীতে আইনমন্ত্রী বৈঠকে করতে সুপ্রিম কোর্টে যাননি। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেছিলেন, এতই আমরা ইয়ে হয়ে গেলাম আলোচনা পর্যন্ত করলেন না ?। আইনজ্ঞরা জানিয়েছেন, নিম্ন আদালতকে নিয়ন্ত্রণ করতেই গেজেট প্রকাশে নিয়ে সরকারের কালক্ষেপণ। গেজেট প্রকাশ করা নিয়ে সরকারের উদাসীনতা আছে। এটা নিয়ে সদিচ্ছার অভাবও রয়েছে। তাদের মতে, স্বাধীন বিচার বিভাগ বিশ্বাস করলে নি¤œ আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধানের চাবিকাঠিও সুপ্রিম কোর্টের হাতে থাকা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেন তারা। গেজেট প্রকাশের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিদের সঙ্গে আইনমন্ত্রীর বৈঠক আজ (বৃহস্পতিবার)। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির বাসায় সন্ধ্যার দিকে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে সূত্রে জানা যায়।।
এদিকে একটি মামলা শুনানি চলাকালে একটি পক্ষ বিচারপতিদের সঙ্গে বৈঠকে বসা কতটুকু আইনগত ভিত্তি আছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবীরা। মামলায় দুটি পক্ষের মধ্যে বৈঠক বসার আইনত ও নৈতিক ভিত্তি নেই বলে তারা মনে করেন।
সরকার কেন বার বার সময় আবেদন করছেন এমন বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, এটা নিয়ে কাজ চলছে। কিভাবে সুন্দর করা যায়; সেইভাবে করার জন্য রাষ্ট্র পক্ষের কৌশলীরা কাজ করছেন। দ্রুত কেন হচ্ছে না, রাষ্ট্রপক্ষ বার বার সময় আবেদন কেন করছেন এ বিষয়ে (আইন মন্ত্রণালয়) তারাই ভালো বলতে পারেন বলতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন সাবেক এই আইনমন্ত্রী। তিনি আরো বলেন, এতদিন যেহেতু গেজেট ছাড়াই চলছে এখন চলতে সমস্যা কোথায়। গেজেট নিয়ে সরকারের ইচ্ছার অভাব আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ইনকিলাবকে বলেন, সরকারের ইচ্ছার অভাব। সরকার স্বাধীন বিচার বিভাগ বিশ্বাস করে না। যার কারণে সরকার আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিম্ন আদালতকে নিয়ন্ত্রণ করেন। ইচ্ছাকৃতভাবে গেজেট প্রকাশ করে না। তিনি আরো বলেন,গেজেট প্রকাশ করে নিম্ন আদালতকে সরকার নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করতে চান না। যার ফলে বার বার সময় আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষ। যারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করে তারা সবাই বিচার বিভাগের তথা নিম্ন আদালতের গেজেট চায়।

 

স্টাফ রিপোর্টার
গেজেট নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও বিচারপতিদের বৈঠক করার বিষয় নিয়ে আইনজীবীদের নেতা বলেন, আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সাথে সঠিক না। কারণ মামলায় সরকার একটি পক্ষ। এই দুইপক্ষের মধ্যে বৈঠক বসার আইনগত ও নৈতিক ভিত্তি নেই। এটা বিচার বিভাগের প্রতি জনমনে আস্থার সংকট দেখা দিতে পারে।
হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশে প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ ইনকিলাবকে বলেন, সরকারের উচ্চ মহলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়ে গেজেট আদৌ প্রকাশ করা যাবে না। সরকারের ইচ্ছা অভাব। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। অন্যথায় একটি গেজেট নিয়ে এত দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করার কথা না।
আইন মন্ত্রণালয় ও আপিল বিভাগের বিচারপতিদের বৈঠক করা বিষয়ে তিনি বলেন, মামলা একটি পক্ষ সরকার। সুতরাং সরকার পক্ষ বিচারপতিদের সঙ্গে বসে বিচার চলাকালীন বিষয়ে নিয়ে বৈঠক করাটা কতটা যুক্তিগত তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। রায় যে কোন দিকে যাক না কেন রায় যদি সরকার পক্ষে যায় তাহলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠবে বৈঠকের এই সিদ্ধান্ত হয়েছিল কিনা। যেটি বিচার বিভাগের জন্য সুখকর নয়। এটা স্বাধীন বিচার বিভাগ নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ছুটিতে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা বিচারকদের চাকরিবিধির এ বিষয়টি গত ৮ অক্টোবর আপিল বিভাগে উঠলে সে সময় ৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। সব মিলিয়ে সরকারকে ২৮ বার সময় দেয়া হলেও শৃঙ্খলাবিধির গেজেট আর প্রকাশ হয়নি। সর্বশেষ গত ৫ নভেম্বর চার সপ্তাহের সময় দেন উচ্চ আদালত। গেজেট প্রকাশে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে আপিল বিভাগ। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সময় চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ তা মঞ্জুর করে নতুন তারিখ ঠিক করে দেয়। মাহবুবে আলম আদালতে বলেন, গেজেট প্রকাশের সুরাহা করতে আপিল বিভাগের সঙ্গে বসতে চান আইনমন্ত্রী।
বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে বিচার বিভাগের সঙ্গে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের দীর্ঘ টানাপড়েনের পর আইনমন্ত্রী ওই বিধিমালার খসড়া সুপ্রিম কোর্টে জমা দিলেও প্রধান বিচারপতি গত ৩০ জুলাই তা গ্রহণ না করে কয়েকটি শব্দ ও বিধি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওই খসড়া গ্রহণ না করে প্রধান বিচারপতি মতপার্থক্য নিরসনে আইনমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইন মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় ডাকলেও আইনমন্ত্রী এখন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে যাননি। এ কারণ ক্ষোভ প্রকাশ করে গত ২০ অগাস্ট প্রধান বিচারপতি বলেন, এতই আমরা ইয়ে হয়ে গেলাম আলোচনা পর্যন্ত করলেন না ?
আপিল বিভাগের সঙ্গে আইন মন্ত্রীর বৈঠক আজ নিম্ন আদালতে বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধি গেজেট আকারে প্রকাশের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিদের সঙ্গে আইনমন্ত্রীর বৈঠক হবে বৃহস্পতিবার। সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন আইন সচিব, অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইন মন্ত্রী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধান বিচারপতির বাসায় বৈঠকটি হবে বলে জানা গেছে। বৈঠকে গেজেট নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে গেজেট বিষয়টি কিভাবে সুষ্ঠুভাবে নিষ্পত্তি হতে পারে, সে ব্যাপারে আলোচনা হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ