Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মানুষ টিসিবির লাইনে প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ত কনসার্টে

জাতীয় প্রেসক্লাবে মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০২২, ১২:০০ এএম

দেশে পুরোপুরি ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একদিকে মানুষ টিসিবির নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য লাইন দিচ্ছেন, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে শিল্পী এনে গান শুনছেন। তিনি ব্যস্ত কনসার্ট নিয়ে। এতে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। মন্ত্রীরা বাংলাদেশ থেকে টরন্টোর ফ্লাইটে বিলাস ভ্রমণ করছেন। গতকাল বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের দোতলায় এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি ও সদ্য কারামুক্ত সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজীর নাগরিক সংবর্ধনা উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। রুহুল আমিন গাজী মুক্তি পরিষদ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সাংবাদিক আলমগীর মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে ও কবি আবদুল হাই শিকদারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ, জাতীয় প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কবি হাসান হাফিজ, সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাবেক সেক্রেটারি সৈয়দ আবদাল আহমদ প্রমুখ। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জনগণ টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইন দিচ্ছেন। আর সেই সময় দেশের প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে শিল্পী এনে কনসার্টে নিজে গিয়ে গান শুনছেন। আজকে দেশে এমন একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম এতো বৃদ্ধি পাচ্ছে যে চাল, ডাল কেনার টাকা তাদের কাছে নেই। সেখানে কোটি কোটি টাকা খরচ করে আমাদের দেশের সরকারি কর্মকর্তারা টরেন্টো ফ্লাইটে করে বাইরে যাচ্ছে। চলতি অধিবেশনে সংসদে উত্থাপিত গণমাধ্যম কর্মী আইনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, গণমাধ্যমকর্মী আইন, এটা কারা করবে? আইনটা করছে সংসদের সদস্যরা যারা নির্বাচিত হয়নি। যারা বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। তারা আইন তৈরি করবে গণমাধ্যমের জন্য। সেটার কি অবস্থা দাঁড়াবে? আমরা জানি। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের নামে নিপীড়ন করা হচ্ছে। আবার গণমাধ্যম আইন? আসলে এটা একটা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র। এখানে কথা বললে শিরোñেদ হওয়ার আশংকা রয়েছে।
দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে এতো খারাপ অবস্থা কখনো দেখিনি। এখানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, শালীনতা বোধ এবং একজন আরেকজন সম্পর্কে যে সৌজন্যমূলক কথা বলবে, সেটা নেই। এরকম একটা অবস্থা হয়েছে। হবে না কেনো? যারা চাকর, তারা যদি মালিক বনে যায়, তখন তো সেরকম অবস্থাই দাঁড়াবে। এমন এমন কথা এমন এমন লোকজন বলছে, যারা কিন্তু জনগণের টাকায় চলাফেরা করছে। তাদের বেতন হয় জনগণের টাকায়, তারা মালিক হয়ে বসে আছে। বাংলাদেশে এখন একটি ভয়াবহ অবস্থা চলছে। এতো খারাপ অবস্থা আগে কখনো দেখিনি। যেখানে কোনো প্রকার গণতন্ত্রের মূল্যবোধ, ন্যূনতম স্বাধীনতাবোধ নেই। যারা চাকর তারা যদি মালিক বনে যায় তখন তখন তো দেশের এ অবস্থা হবেই।
ন্যায্যমূল্যে টিসিবির কার্ড দেয়া প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে গলা উঁচিয়ে বলা হচ্ছে- এক কোটি ন্যায্যমূল্যের কার্ড দেয়া হয়েছে। কিন্তু পত্রিকায় দেখলাম আমার ঠাকুরগাঁওয়ে যাকে কার্ড দেয়া হয়েছে তিনি আওয়ামী মহিলা লীগের সভানেত্রী। তার দোতলা বাড়ি। অথচ তার পাশেই একজন দুস্থ গরীব মানুষ সে কোনো কার্ড পায়নি। দেশের এই অবস্থায় গাজী ভাই ১৭ মাস জেলে ছিলেন। আমি কিন্তু খুব অবাক হইনি। তিনি কিন্তু অন্যকোনো কারণ না, একটা ভয়ানক অপরাধ করেছেন। অপরাধ কি? একজন ব্যক্তি যাকে প্রভু মনে করা হচ্ছে তার সম্পর্কে তিনি কথা বলেছেন। এটাতো বড় অপরাধ! রাজনীতিবিদদেরকে জেলে যেতে হয় এটা স্বাভাবিক। কিন্তু যারা লেখালেখি করেন তাদের জেলে যাওয়াটা অস্বাভাবিক।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সবাইকে বিভেদ ভুলে ইস্পাত কঠিন দৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে যেতে হবে। আমাদেরকে এখন কাজ করে সরকারকে সরাতে হবে। যাতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে, গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিবে। আসুন আমরা সেই লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করি। কারণ সূর্যোদয় হতেই হবে। অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, আমাকে সংবর্ধনা প্রদান করায় সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার সহকর্মী ও সহযোদ্ধারা আমার পরিবারের পাশে থেকে খোঁজ খবর নিয়ে নিয়েছেন। সেজন্য সবার কাছেই কৃতজ্ঞ। আমাদেরকে সকল বিভেদ দূর করে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যারা বিভেদ তৈরি করবে তাদেরকে বিতাড়িত করতে হবে।
অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী বলেন, রুহুল আমিন গাজীর নির্যাতনের মধ্যেই আমাদেরকে শক্তিশালী হতে হবে। সাংবাদিক নেতারা সহ পেশাজীবী যারা নির্যাতিত হচ্ছে তাদের কারো অবদান, ত্যাগ তিতীক্ষা বৃথা যাবেনা। আমাদেরকে তো সব সময়ই কারাগারে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। আমরা নিষ্ঠুর ও নিকৃষ্ট ফ্যাসিবাদের অধীনে আছি। গণতন্ত্র, মানবাধিকার এখানে ভুলুণ্ঠিত।
তিনি বলেন, পুরো বাংলাদেশটাই যেন বৃহৎ কারাগার। এগুলো আমাদেরকে ফরাসি বিপ্লবের বাস্তিল কারাগারের কথা মনে করিয়ে দেয়। যেখানে বহু মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। আজকে স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা কি পেলাম? এখানে আইনের শাসন নেই। ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত।
সভাপতির বক্তব্যে আলমগীর মহিউদ্দিন বলেন, ক্ষমতাবানরা কখনো তাদের সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। যে কারণেই সাংবাদিকদরা ক্ষমতাবানদের টার্গেটে পরিণত হন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে যাতে ক্ষমতাবানরা সবার মাথা কেটে নিতে না পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ