Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাপান বাংলাদেশ থেকে প্রচুর শিক্ষানবিশ নিতে আগ্রহী

সাবেক পররাষ্ট্র ভাইস মিনিস্টারের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল ঢাকায়

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০২২, ৯:১৫ পিএম

জাপানে প্রচুর বাংলাদেশি শিক্ষানবিশের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশি কর্মীরা কঠোর পরিশ্রমী। তৃতীয় বিশ্বের গরিব দেশের ভাষায় অভিজ্ঞ শিক্ষানবিশ কর্মীদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে নিয়োগ দিচ্ছে জাপান সরকার। যাতে তারা জাপানে কাজের দক্ষতা অর্জন করে নিজ নিজ দেশে ফিরে কর্মস্থলে সাফল্য রাখতে পারে। জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী উওনো সুউছকে’র ছেলে ও সাবেক পররাষ্ট্র ভাইস মিনিস্টার ড.উওনো ওউছামু’র নেতৃত্বে দেশটির সফররত পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দল আজ বুধবার ঢাকার ফকিরাপুলে মেসার্স ইয়াম্বু ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল কার্যালয়ে জাপান গমনেচ্ছু শিক্ষানবিশ বাছাইকালে ইনকিলাবের সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন।

সাবেক পররাষ্ট্র ভাইস মিনিস্টার উওনো ওউছামু ইয়াম্বু ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে জাপানী ভাষায় অভিজ্ঞ প্রচুর শিক্ষানবিশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এসময়ে ইয়াম্বু ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজিং পার্টনার মো. গোলাম মোস্তফা, জাপানের সফররত প্রতিনিধি গ্রিনফিল্ড ঢাকার চেয়ারম্যান ইউসিহারু ইউযাজাওয়া, গ্রিনফিল্ড ঢাকার নির্বাহী পরিচালক তানোইউ চুসুকি, গ্রিনফিল্ড ঢাকার পরিচালক পাবলিক রিলেশন কুরিহারা তুমিনো ও সিআইডেন কোং লিমিটেডের প্রতিনিধি নোবুয়াকি নাগাহারা এবং গ্রিনফিল্ড ঢাকা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.তুহিন উপস্থিত ছিলেন।

ইয়াম্বু ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজিং পার্টনার গোলাম মোস্তফা জাপানে প্রচুর শিক্ষানবিশ নিয়োগের ক্ষেত্র তৈরির বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, তার প্রতিষ্ঠান জাপানে শিক্ষানবিশ প্রেরণের লক্ষ্যে জাপান সরকারের অনুমোদন লাভ করেছে। সরকারের যথাযথ বিধি অনুসরণ করে জাপানে শিক্ষানবিশ পাঠানোর লক্ষ্যে ইয়াম্বু ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল জাপানী ভাষা ইনস্টিটিউশন খুলে যুবকদের ভাষা শিক্ষা দিয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সফররত প্রতিনিধি দল প্রতি বছর তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এক হাজার শিক্ষানবিশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলেও তিনি জানান।

দীর্ঘদিন অভিবাসীদের জন্য দরজা বন্ধ রাখার পর নীতি পরির্বতন করছে জাপান। নির্দিষ্ট কাজের জন্য কর্মী হিসেবে বিদেশিদের নেয়া শুরু করতে যাচ্ছে এশিয়ার সম্পদশালী দেশটি। ইতিপূর্বে দেশটির বিচার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, ২০২২ অর্থবছরের শুরুতে এসব কর্মী নেয়া শুরু হতে পারে। আর এসব কর্মীরা দেশটি অনির্দিষ্ট সময় থাকতে পারবে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছিল, ২০১৯ সাল থেকে কার্যকর হওয়া একটি আইনের অধীনে ১৪টি খাতে নির্দিষ্ট দক্ষ কর্মীদের পাঁচ বছরের ভিসা দেয়া শুরু করে জাপান। কৃষি, নার্সিং এবং পরিচ্ছন্নতার মতো খাতগুলোতে নেয়া এসব কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের জাপানে নেয়ার সুযোগ ছিলো না।

জাপানের কোম্পানিগুলো এসব সীমাবদ্ধতার উল্লেখ, করে বিদেশি কর্মী নিতে দ্বিধায় পড়ে। পরে সরকার এসব সীমাবদ্ধতা শিথিলের উদ্যোগ নেয়। জাপান সরকারের নতুন উদ্যোগ কার্যকর হলে এসব কর্মীরা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভিসা নবায়ন করতে পারবে আর নিজেদের পরিবার নিয়ে যেতে পারবে। এসব কর্মীদের বেশিরভাগই ভিয়েতনাম ও চীনের নাগরিক।

জাপান সরকারের শীর্ষ মুখপাত্র হিরোকাজু মাতসুনো বলেছিলেন, যেকোনও পরিবর্তনের অর্থ এই নয় যে, তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থায়ী আবাসিকতা পেয়ে যাবেন। এজন্য তাদের আলাদা আবেদন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। নৃতাত্তি¡ক স্বকীয়তা বজায় রাখতে জাপানে দীর্ঘদিন ধরেই অভিবাসনকে ট্যাবু হিসেবে দেখা হয়েছে। কিন্তু বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং মারাত্মক শ্রমিক সঙ্কটের কারণে অভিবাসীদের জন্য সীমান্ত খুলে দিতে সরকারের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। উল্লেখ্য, জাপান সরকার বাংলাদেশ থেকে শিক্ষানবিশ পাঠাতে ইতিপূর্বে ২৪টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে যাচাই বাছই করে অনুমতি দিয়েছিল। কিন্ত এসব অনুমতি প্রাপ্ত এজেন্সিগুলো এখনো নানা কারণে শিক্ষানবিশ পাঠাতে পারেনি। তবে করোনা মহামারি স্বাভাবিক হওয়ায় জাপানে শিক্ষানবিশ কর্মী নিয়োগের পথ সুগম হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক ভাইস মিনিস্টার উওনো ওউছামু ইনকিলাবকে বলেন, জাপানের প্রচুর বাংলাদেশি শিক্ষানবিশ নিয়োগের লক্ষ্যে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করছে। প্রতিনিধি দল ইয়াম্বু ট্রেডের ভাষা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে জাপানী ভাষায় অভিজ্ঞ যুবকদের মৌখিক পরীক্ষা নিচ্ছে। ড. উওনো ওউছামু বলেন, বাংলাদেশি যুবকরা শিক্ষানবিশ হিসেবে জাপানে পাঁচ বছর কাজ করে সুনাম অর্জন করতে পারলে তাদের বেতন বাড়বে। দেশটি স্থায়ী রেসিডেন্ট ভিসা লাভ করতে পারবে তারা এবং নিজ পরিবারকে নিয়ে যেতে পারবে। এক প্রশ্নের জবাবে ড. উওনো ওউছামু বলেন, জাপানে শিক্ষানবিশ নিয়োগের ক্ষেত্রে কর্মীদের কাছ থেকে দশ বারো লাখ টাকা করে নেয়া হলে তারা দ্রুত টাকা তোলার জন্য পালিয়ে কোম্পানী বদল করতে উদ্বুদ্ধ হতে পারে। সেক্ষেত্রে শিক্ষানবিশ কর্মীদের কাছ থেকে বেশি টাকা নেয়া যাবে না। সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়ের মাধ্যমেই শিক্ষানবিশ পাঠাতে হবে। যারা শিক্ষানবিশদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিবে তাদের লাইসেন্স জাপানে ব্লাক লিস্ট করা হবে বলেও তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

কবে থেকে তারা শিক্ষানবিশ নেয়া শুরু করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক ভাইস মিনিস্টার বলেন, জাপানী ভাষা জানা ৩৬০ জন শিক্ষানবিশ কর্মী এই মূহুর্তেই প্রয়োজন। ভাষা জানা কর্মী পেলে কাল থেকেই শিক্ষানবিশ কর্মী নিতে প্রস্তুত বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সফররত প্রতিনিধি দল গতকাল বুধবার ঢাকাস্থ জাপানী দূতাবাসের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেও বাংলাদেশ থেকে ভাষা জানা শিক্ষানবিশ কর্মী নেয়ার আগ্রহের বিষয়টি তুলে ধরেন। আগামী ১ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে সফররত প্রতিনিধি দল বৈঠক করে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষানবিশ নিয়োগের আগ্রহের বিষয়টি তুলে ধরবেন। একই দিন সফররত প্রতিনিধি দলের ঢাকাত্যাগের কথা রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাপান-বাংলাদেশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ