Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণাঞ্চল সহ সারাদেশে প্রথমবারের মত সর্বোচ্চ ২ কোটি ১১ লাখ টন বোরো উৎপাদনের আশা

দাম না পেলে ভবিষ্যতে কৃষকের আগ্রহ থাকবে না

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০২২, ৭:৫৬ এএম

সারা দেশের সাথে বরিশাল কৃষি অঞ্চলেও বোরো আবাদে সর্বকালের রেকর্ড সৃষ্টির পরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নতুন মাইল ফলক রচনার লক্ষ্যে মাঠে কৃষি যোদ্ধাগন। তবে মৌসুমের শুরুতে ডিজেলের মূল্য ২৩% বৃদ্ধির ফলে এবার বোরো ধানের উৎপাদন ব্যায় ৯শ টাকা অতিক্রম করার আশংকার কথা জানিয়েছেন কৃষকগন। ফলে ধানের দাম মনপ্রতি নুন্যতম ১১শ টাকা না পেলে এবার ভাগ্য বিপর্যয় শংকার কথাও জানিয়েছেন কৃষি যোদ্ধাগন।
চলতি রবি মৌসুমে দেশে ৪৮ লাখ ৭২ হাজার ৬শ হেক্টরে আবাদের মাধ্যমে ২ কোটি ৯ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র্রা বিপরিতে ১৫ মার্চ আবাদের চুড়ান্ত সমাপনি দিনে দেশে ৪৯ লাখ ৯ হাজার হেক্টরে বোরো ধানের আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই সূত্র মতে এরমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় ৩ লাখ ৩৭ হাজার ১৮৫ হেক্টরে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৬৫০ হেক্টরে বোরো ধানের আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় লক্ষ্যমাত্রার ১১৩ ভাগ এবং বৃহত্বর ফরিদপুরের ৫ জেলায় ১০২% জমিতে বোরো আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় যে ১৫ লাখ ২২ হাজার ৫২০ টন বোরো চাল পাাবার লক্ষ রয়েছে, তা প্রায় ১৬ লাখ টনে পৌছবে বলে আশা করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।
তবে দক্ষিণাঞ্চলে এখনো হাইবীড জাতের ধানের আবাদ কাঙ্খিত পর্যায়ে পৌছেনি। সারা দেশে যেখানে এবার ১৩ লাখ ২২ হাজার হেক্টরের বেশী জমিতে হাইব্রিড জাতের বোরো আবাদ সম্পন্ন হয়েছে, সেখানে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় অতি উচ্চ ফলনশীল এ জাতের ধানের আবাদের পরিমান ৬৬ হাজার হেক্টরেরও কম। আর বৃহত্বর ফরিদপুরে আবাদ হয়েছে ৭২ হাজার ৪৮৩ হেক্টরের। সব মিলিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৬৫০ হেক্টরে আবাকৃত বোরো ধানের মধ্যে মাত্র ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৯৫ হেক্টরে হাইব্রীড জাতের বোরো আবাদ হয়েছে। অথচ সারা দেশে এবার ১২ লাখ ৩৬ হাজার ৭শ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে ১৩ লাখ ২২ হাজার ১শ হেক্টরে হাইব্রীড জাতের বোরো আবাদ হয়েছে।
এমনকি প্রায় ৮লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলে আমন ও বোরো মৌসুমে হাইব্রীড জাতের ধানের আবাদ আরো ১০ভাগ বৃদ্ধি করতে পারলে, এঅঞ্চলে ১০ লক্ষাধীক টন খাদ্য উদ্বৃত্তের লক্ষ্যে পৌছান সম্ভব বলেও কৃষিবীদগন মনে করছেন।
গত বছর রবি মৌসুমে দেশের প্রায় ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে প্রথমবারের মত ২ কোটি ৮ লাখ টনেরও বেশী বোরো চাল উৎপাদন হয় বলে কৃষি মন্ত্রী দাবী করেছেন। চলতি বছরে দেশে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ৪৮.৭৩ লাখ হেক্টরের বিপরিতে আবাদ ৪৯ লাখ ৯ হাজার হেক্টরে পৌছেছে। ফলে সারা দেশে ২ কোটি ৯ লাখ ৫১ হাজার টন চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে তা ২ কোটি ১১ লাখ টনে পৌছানের ব্যাপারে আশাবাদী মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। যা দেশকে এযাবতকালের সর্বোচ্চ বোরো উৎপাদনে নিয়ে যতে পাপারে। তবে এজন্য প্রকৃতি সদয় থাকার পূর্বশর্তের কথা জানিয়েছেন কৃষিবীদগন। চলতি রবি মৌসুমের শুরুতেই তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় বিপুল সংখ্যক বোরো বীজতলা ‘কোল্ড ইনজুরীর’র কবলে পড়ে। দক্ষিণাঞ্চলে ধান পাকতে আরো দেড়মাস বাকি। ফলে কাল বৈশাখীর ছোবলের আশংকাও থেকে যাচ্ছে। তবে উত্তরাঞ্চলের কিছু স্থানে ইতোমধ্যে ধান পাকতে শুরু করেছে। কিছু স্থানে কর্তনও শুরু হয়েছে সিমিত আকারে।
গত বছর রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে অতিরিক্ত প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হলেও এবার ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি সহ বৈরী আবহাওয়া অত্যন্ত স্পর্ষকাতর এ ধানের জন্য ঝুকি বৃদ্ধি করে।
বীজতলা ক্ষতিগ্রস্থ হবার সাথে ডিজেলের মূল্যবদ্ধি এবার ইরি-বোরা আবাদকে কিছুটা হলেও ব্যাহত করেছে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। দক্ষিনাঞ্চলের ১১টি জেলার যে সাড়ে ১০ লাখ কৃষক ইরি-বোরোর আবাদ করে থাকেন, তার সেচকাজে প্রায় ৬৫ হাজার সেচ পাম্প ব্যাবহ্রত হয়ে থাকে। যারমধ্যে মাত্র ৬ হাজারের মত বিদ্যুৎ চালিত। অবশিষ্ট ৬০ হাজারেরও বেশী পাম্প ডিজেল চালিত বলে কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতরের বিগত দিনের একটি পরিসংখ্যানে জানা গেছে। ফলে এঅঞ্চলের বোরো সেচাবাদ প্রায় পুরোটাই ডিজেল নির্ভর।
এমনকি নদী-নালা ও খালÑবিলের বাংলাদেশেই এখনো সারা বিশ্বের মধ্যে সেচব্যায় সর্বাধীক, ২৮-৩০%। কৃষি মন্ত্রনালয়ের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী আমাদের নিকট প্রতিবেশী ভারতের মরুময় পাঞ্জাবে সেচব্যায় মোট উৎপাদন ব্যয়ের মাত্র ১৩%। যা থাইল্যান্ডে ৮% ও ভিয়েতনামে মাত্র ৬% । উপরন্তু এবার ডিজেলের মূল্য ২৩% বৃদ্ধির ফলে আমাদের দেশে সেচ ব্যায় প্রায় ৩০ %-এ পৌছার আশংকা কৃষিবীদদের। তবে দেশে সেচকাজে বিদ্যুৎ বিলের ওপর সরকার ২৫% ভতর্’কি দিলেও অধিক ব্যায়ের ডিজেলের ক্ষেত্রে তা এখনো অনুপস্থিত।
ফলে চলতি মৌসুমে প্রতিমন বোরো ধানের উৎপাদন ব্যায় ৯শ টাকার ওপরে পৌছার আশংকার কথা জানিয়েছেন কৃষিবীদগন। সেখানে ধানের দাম নুন্যতম ১১শ টাকা না পেলে আগামীতে বোরো ধানের সেচাবাদে কৃষকদের আগ্রহ ধরে রাখা দুরুহ হয়ে পড়তে পারে বলেও মনে করছেন কৃষিবীদ সহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি মন্ত্রনালয়েরই একাধীক মহল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ