Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সৈয়দপুরে পরচুলা তৈরিতে স্বাবলম্বী নারীরা

নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০২২, ১২:০৫ এএম

সকাল হলে নারীরা দলবেধে কারখানায় যাওয়া আর বিকেল হলে দলবেধে বাড়ি ফেরার চিত্র চোখে পড়ে এলাকার রাস্তাগুলোতে। তারা গ্রামে গড়ে ওঠা কারখানায় কাজ করে পরচুলার। নীলফামারীর সৈয়দপুরে পরচুলা তৈরি করে স্বাবলম্বী হচ্ছে গ্রামের নারীরা। এক সময় গ্রামাঞ্চলে নিত্য অভাব অনাটনে সংসার চলত তাঁদের। এখন আর সে দিন নেই। বাড়ির পাশে পরচুলা তৈরির কারখানাতে কাজ করছেন নারীরা। আয় করছে অর্থ। সংসারে এনেছে সচ্ছলতা। হয়েছেন স্বাবলম্বী। এসব পরিবারে আর অভাব নেই বললেই চলে। এ চিত্র উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে।
সরেজমিনে, গতকাল রোববার উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর, কামারপুকুর ও নেজামের চৌপথী এলাকায় দেখা যায়, সেখানে গড়ে উঠেছে ছোট্ট পরিসরে কয়েকটি পরচুলা তৈরির কারখানা। সংসারের কাজ সেরে গৃহিনীরা আবার কাজ করছেন কারখানাগুলোতে।
বুলবুলি বেগম (৫৫)। স্বামী মারা গেছেন অনেক আগে। ছেলের সংসারে থাকেন। সংসারে রয়েছে অভাব-অনটন। নিজের হাত খরচ যোগাতে দলবদ্ধ হয়ে তিনিও করছেন পরচুলা তৈরির কাজ। তিনি বলেন, প্রতিবেশীর বাড়িতে চুলের কাজ হচ্ছে প্রায় ছয় মাস ধরে। ছেলের সংসারে সহায়তা ও নিজের প্রয়োজনের কাজ করছি। প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ টাকার কাজ করি।
কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান লানচু হাসান চৌধুরী বলেন, এসব পরচুলা তৈরির কারখানা হওয়ায় এলাকায় একটা পরিবর্তন এসেছে। সবাই আয় করতে, বিশেষ করে নারীরা ছুটছেন এসব কারখানায়। এখানে কাজ করে অনেক নারী সংসারের অভাব ঘুচিয়েছেন। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। কেউ বা পাকা বাড়ি করছেন। আমার ইউনিয়নের পালপাড়া, সিপাইটারী এবং চৌপথি এলাকায় নারীদের ব্যস্ততা বেড়েছে অর্থনৈতিক কাজে। সকাল হলে কারখানায় দলবেধে যাওয়া আর বিকেল হলে দলবেধে বাড়ি ফেরার চিত্র চোখে পড়বে এলাকার সড়কগুলোতে। কেউ চুল বাছাই করেন, কেউ আবার প্রক্রিয়াজাত করেন এসব কারখানায়।
উদ্যোক্তা মুকুল মিয়া জানান, আমার কয়েকটি কারখানায় প্রায় দুই হাজার নারী কাজ করেন। সাব-কন্ট্যাক্ট নিয়ে পরচুলা উৎপাদন করছি। এগুলো ঢাকা পাঠানো হয়, যাদের কাছ থেকে আমরা অর্ডার নিয়েছি, তাদের কাছে। যারা কাজ করেন, তারা সবাই নারী। একেকজন মাসে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক ওঠাতে পারেন। আমার মত আরও তিন-চারজন সাব-কন্ট্যাক্টে এ কাজ করাচ্ছেন। এলাকার সাত-আট হাজার নারী এ কাজ করে তাদের সংসারে পরিবর্তন এনেছে।
জানতে চাইলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) সৈয়দপুর ব্যবস্থাপক বলেন, কেউ আর এখন শুধু গৃহিনী থাকতে চান না। তারা ক্ষুদ্র নানা কাজে নিয়েজিত। নারীরা অর্থনৈতিক কাজে অংশগ্রহণ করায় অর্থনীতির চাকা মজবুত হচ্ছে এ অঞ্চলের। নারীদের মধ্য থেকে উদ্যোক্তাও তৈরি হচ্ছে। এতে নারীরা যেমন সমৃদ্ধ হচ্ছেন, তেমনি সংসারে সক্ষমতা বাড়ছে। গ্রামের নারীদের কাজের বিকাশে তাঁদের সহযোগিতা করছে বিসিক এবং এছাড়া বিসিকের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ