Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিথ্যা ঘোষণায় আনা ব্যান্ডরোল ব্যবহৃত হচ্ছে নিম্নস্তরের সিগারেটের প্যাকেটে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০২২, ৭:৫২ পিএম

বিভিন্ন সময় কাগজ ও অন্যান্য পণ্যের ঘোষণা দিয়ে দেশের বাজারে নকল ব্যান্ডরোল আমদানি করা হয়। ভ্যাট গোয়েন্দাদের তথ্যানুযায়ী এসকল জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহৃত হয় নিম্নস্তরের ৯টি ব্র্যান্ডের সিগারেটের প্যাকেটে। সরকারী বিভিন্ন সূত্র বলছে নকল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে সিগারেট বাজারজাত করায় প্রায় ২০০০ কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এসব নিম্নমানের পণ্য প্রত্যন্ত এলাকায় নির্ধারিত মূল্যের থেকেও কম দামে বিক্রি হয়। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায়। পাশাপাশি ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

রাজস্ব ফাঁকি এবং সিগারেটের ট্যাক্স স্ট্যাম্প / ব্যান্ডরোলের অবৈধ ব্যবহার প্রতিরোধে কঠোর নজরদারিতে নামার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবুও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এর ব্যবহার রোধ করা যাচ্ছে না।

তামাক কর আদায়ে স্ট্যাম্প ও ব্যান্ডরোলের নকল ও অবৈধ ব্যবহারে প্রতিবছর প্রায় ২০০০ কোটি টাকা রাজস্ব সরকার হারাচ্ছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। গেল বছর বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেলের গবেষণায় রাজস্ব ফাঁকির তথ্য পাওয়া গেছে।

এনবিআর সূত্র জানায়, বেশি মুনাফার আশায় দেশে বেড়েই চলছে এই ব্যান্ডরোল বা ট্যাক্স স্ট্যাম্প জালিয়াতি। নিম্নস্তরের প্রতি ১০ শলাকার প্যাকেটের দাম সর্বনিম্ন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৯ টাকা। এতে এক প্যাকেট সিগারেটে সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয় প্রায় ২৮ টাকা। কিন্তু ব্যান্ডরোল বা ট্যাক্স স্ট্যাম্প নকল করে কেউ যদি সিগারেট বাজারজাত করে তাহলে লাভ বেশি। ফলে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

সিগারেটখাত সংশ্লিষ্টরা বলছে, প্রতিবছর বাজেটে সিগারেটের দাম বৃদ্ধি হয়। এর সুযোগে বেড়ে চলেছে অবৈধ সিগারেটের বাজার। ব্যবায়ীরা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে স্থানীয়ভাবে অবৈধ সিগারেট উৎপাদন করছে এবং বিক্রির জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোকে বেছে নিচ্ছে। কারণ সেখানে পুলিশ বা রাজস্ব কর্মকর্তাদের নজরদারী, অভিযান নেই।

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেলের প্রকল্প পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক বজলুল রহমান বলেন, নিম্ন ও মধ্যমস্তরের সিগারেটে নকল ব্যান্ডরোলের ব্যবহার বেশি। আর এমন পণ্য কিছুদিন বাদে বাদে নাম পাল্টায়।

বজলুল রহমান বলেন, ধরনে প্রত্যন্ত একটি এলাকায় কয়েক বছর ব্যবসা করল একটি নামে। অভিযান এড়াতে দ্রæত সেখান থেকে আবার অন্যত্র চলে যাবে নাম পাল্টে ।

তিনি বলেন, দেশে সর্বনিম্ন ১০ শলাকার এক প্যাকেট সিগারেটের দাম ৩৯ টাকা নির্ধারিত। কিন্তু এই বাজারগুলোতে ২০ থেকে ২৫ টাকায় এক প্যাকেট সিগারেট পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকার বাজার পরিদর্শন করে দেখা যায়, কম দামে বিক্রির মূলে রয়েছে রাজস্ব ফাঁকি।

এনবিআর সূত্র জানায়, সিগারেটের মূল্য থেকে সরকার গড়ে প্রায় ৭৭ শতাংশ পর্যন্ত রাজস্ব আয় করে থাকে। যার মধ্যে আছে সম্পূরক শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর ও হেলথ সারচার্জ। কিন্তু অসাধু উৎপাদনকারীরা সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে নকল ব্যান্ডরোল/ট্যাক্স স্ট্যাম্প ব্যবহার করার মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দেয়। সিগারেট শিল্পের মোট ৬ থেকে ৮ শতাংশই রাজস্ব ফাঁকি দেয়া সিগারেট। চারটি মূল্য স্তরের মধ্যে শুধুমাত্র নিম্ন স্তরের সিগারেটের ভোক্তাই প্রায় ৭৫ শতাংশ।

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের বাজারে নিম্নস্তরের সিগারেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ২৫টির বেশি, তবে এর মধ্যে আইন মেনে নির্ধারিত মূল্যে সিগারেট বিক্রি করে মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠান। বাকি উৎপাদকেরা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সিগারেট বিপনন করে।

এসব প্রতিষ্ঠান কেবল রাজস্ব ফাঁকি দেয় না, বরং অনিয়মতান্ত্রিক উৎপাদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবেশে জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ধূমপানবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেন, নকল ব্যান্ডরোলের কারণে কম মূল্যে সিগারেটের প্যাকেট বিক্রি হয়, এতে মানুষ আরও বেশি করে উৎসাহি হয় ধূমপানে। ব্যান্ডরোলে অবৈধ ব্যবহার বন্ধ করা গেলে একদিকে সরকারে রাজস্ব বেশি পাবে, আবার ধূমপায়ীর সংখ্যা এবং বেশিমাত্রার ধূমপানও হ্রাস পাবে।

তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনগুলোর দাবি, রাজস্ব ফাঁকি বন্ধে এনবিআরকে এমনভাবে প্যাকেটে স্ট্যাম্প ও ব্যান্ডরোল বসাতে হবে যাতে এগুলো দ্বিতীয়বার ব্যবহার করতে না পারে। একইসঙ্গে নজরদারি বাড়াতে হবে যাতে নকল ব্যান্ডরোল উৎপাদন বা আমদানী না হতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ