পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চৈত্রের দাবাদাহে সাপ্লাইয়ের দূষিত পানি পানে রাজধানীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। রমজান সামনে রেখে প্রতিটি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে অস্বাভাবিকভাবে। রোজার প্রস্তুতি নেয়া দূরের কথা, কম খেয়েও আয়ের সঙ্গে ব্যয় মেলাতে হিমশিম অবস্থা নিম্নমধ্যবিত্ত-মধ্যবিত্ত শ্রেণি পেশার মানুষের। রাস্তায় বের হলেই যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে চৈত্রের দাবাদাহে পুড়ছে শরীর। চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের দাবি করা হলেও পর্যাপ্ত সঞ্চালন লাইন না থাকায় ঘনঘন বিদ্যুতের যাওয়া-আসা এবং মশার যন্ত্রণায় রাতের ঘুমও হারাম হয়ে গেছে। ফলে ঘরে-বাইরে রাজধানী ঢাকায় বসবাসরত মানুষের জীবন দূর্বিষহ হয়ে পড়েছে।
গতকাল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে গুলিস্তান থেকে কাজলা পৌঁছাতে লাগল ৭ মিনিট। কয়েক মিনিট পর কাজলা থেকে গুলিস্তান পৌঁছালে লাগল দেড় ঘণ্টা। মতিঝিল যাওয়ার লক্ষ্যে বঙ্গভবনের দিকে ঘুরিয়ে নামতে গিয়ে সময় লাগল ৩০ মিনিটেরও বেশি। বাস ঘুরালেই পুলিশ ও পরিবহন মালিকদের সংগঠনের নেতাদের চাঁদা দিতে হয়। বাস আটকিয়ে যানজটের সৃষ্টি করে চাঁদার টাকা তোলা হচ্ছে পুলিশের সামনেই। এটা গতকাল দুপুরের চিত্র। আবার সন্ধ্যায় গুলিস্তান থেকে কাজলা যেতে গণপরিবহনের সময় লাগে ৭ মিনিট থেকে ১০ মিনিট। কিন্তু কাজলা ও ধোলাইপাড় থেকে গুলিস্তান পৌঁছাতে সময় লাগে ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা। প্রতি সন্ধ্যায় এ ফ্লাইভারের দক্ষিণদিকে মাইলের পর মাইল যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। শুধু এ ফ্লাইওভারে নয়; রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অনেক সড়কেই এমন চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানী ঢাকার অন্যান্য প্রায় সব সড়কে ছিল একই চিত্র। যাত্রাবাড়ী, তেজগাঁও, মহাখালি, ফার্ম গেইট, মগবাজার, নিউ মার্কেট, ধানমন্ডি, আজিমপুর, মিরপুর ১০, বনানী প্রতিটি রোডে দেখা গেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকতে। গতকাল দুপুরে হঠাৎ করে গুলিস্তানে যানবাহন দাঁড় করিয়ে দিলেন দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ। আশপাশে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের রাস্তা ফাঁকা করতে ব্যস্ত দেখা গেল। প্রচÐ গরমে ৩০ মিনিট যানবাহন আটকে রাখায় শত শত গাড়ি আটকে যায়। গরমে বাসে থাকা শিশুদের চিৎকার-চেচামেচি। দেখা গেল প্রেসিডেন্টের গাড়ির বহর রাস্তায় বের হয়েছে। প্রেসিডেন্ট যাবেন কিশোরগঞ্জ সে কারণে আঘা ঘণ্টা আগে আশপাশের সব সড়কে যানবাহন আটকে রাখা হয়। এমন দৃশ্য প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে।
নিত্য যানজট সম্পর্কে জানাতে চাইলে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামছুল হক বলেন, ঢাকায় প্রয়োজনের তুলনায় রাস্তা অত্যন্ত সীমিত। যতটুকু আছে, তাতেই যানবাহন থেমে থেমে চলে। কোনো কারণে সড়ক আধাঘণ্টা বন্ধ থাকলে এর প্রভাবে দিনব্যাপী যানজট সৃষ্টি হয়। তবে এ প্রসঙ্গে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও ডিটেইল এডিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) প্রকল্পের পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, সকালের অফিস ও স্কুল সময় প্রায় একই। এই দুই শ্রেণির প্রতিষ্ঠানের শুরুর সময়টা পৃথক করা গেলে রাজধানীতে যানজট সহনীয় পরে আসবে। যানজট থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে হলে অফিস ও স্কুল সময় আলাদা করে নির্ধারণ করতে হবে।
রমজানের মাত্র এক সাপ্তাহ বাকি, অথচ এখনো ভোজ্যতেলের বাজার স্বাভাবিক হয়নি। প্রতিটি পণ্যের দাম বেশি। রোজা রাখার জন্য যেসব পরিবার আগাম প্রস্তুতি নেন, তারা পণ্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে সে চিন্তা বাদ দিয়েছেন। সরকার এক কোটি মানুষকে ন্যায্য মূল্যে পণ্য দিচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে টিসিবির পণ্য বিক্রি হচ্ছে। দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে রাজধানীর অনেকেই টিসিবির পণ্য কিনতে ট্রাকের লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহিণীদের কেউবা কোলের শিশুকে রেখে আবার কেউবা অসুস্থ রোগীকে একা রেখে টিসিবির পণ্য কিনছেন। চৈত্রের তপ্ত রোদে ৫ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করেও কোথাও মিলছে না কাক্সিক্ষত টিসিবির পণ্যের ট্রাক। আবার ট্রাক মিললেও কখনো বা হাজার হাজার লোকের ভিড়ে কাক্সিক্ষত পণ্য মিলছে না। টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কেনার ভিড়ে রয়েছেন অসংখ্য নিম্নবিত্ত চাকরিজীবী; এমনকি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীও। তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে অনেকেই নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ মুখে কাপড় টেনে ধরেন। কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। শনিরআখড়ার ধনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে ট্রাকের লাইনে দাঁড়ানো একজন বলেন, দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ায় পেটে অভাবের টান পড়েছে। তাই লাইনে দাঁড়িয়েছি, এগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ করে প্রতিবেশীদের কাছে আমাদের লজ্জিত করবেন না। গত বছর এ সময় রোজার প্রস্তুতি নিতাম। এবার দিনের খাদ্যপণ্য জোটাতেই পারছি না।
পরিসংখানে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকার বেশিরভাগ বাসিন্দাই মধ্যবিত্ত পরিবারের। ১৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করা বিশাল এ শ্রেণির দুর্দশা সবচেয়ে বেশি। ছোটখাটো চাকরি ও ক্ষুদ্র ব্যবসা করা ব্যক্তিদের দুর্দশার শেষ নেই। বর্তমানে জিনিসপত্রের দামের পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচও লাগামহীন। একটু মধ্যমানের স্কুল বা কলেজে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার খরচ, যাতায়াত ব্যয়সহ কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা লাগে। দুই সন্তানের সংসারে লেখাপড়ার খরচ বাদ দিয়ে যে টাকা থাকে তার দুই-তৃতীয়াংশ চলে যায় বাসা ভাড়ায়। তারপর খাওয়ার খরচের জন্য একজন সংসারি পিতার হাতে থাকে মাত্র ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। এই হিসাব অবশ্য কমপক্ষে ৫০ হাজারের ওপরে, যারা বেতন পান বা ব্যবসায় আয় করেন। তবে নিম্ন মধ্যবিত্তের খরচের হিসাব করলে কারো মাথা ঠিক থাকার কথা নয় বলে জানান একজন বেসরকারি কোম্পানিতে চাকুরে। করোনার দীর্ঘ দুই বছর স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার পর এখন নিয়মিত বেতন-ভাতা হলেও অবস্থা আগের থেকেও করুণ বলে জানান তিনি।
ঢাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করেন এমন বিভিন্ন শ্রেণির পেশার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে যা জানা যায়, তার সারমর্ম হচ্ছে এই মহানগরীতে টেকা দায় হয়ে পড়েছে তাদের জন্য। তবে করোনাকালে গ্রামে গিয়েও কোনো উপায় করতে পারেননি। যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের সুযোগ নেই। তাই ঢাকায় ফিরে এসে রাজধানীতে শ্রেয় মনে করছেন তারা। আবার নানা সামাজিকতার দায়বদ্ধতায় গ্রামেও শান্তিতে থাকা যায় না। তাই শরীরে শক্তি যত দিন থাকে, ঢাকায় ততদিন সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে চান তারা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, যানজট, অর্থের অভাবে কী করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তারা ‘নিজেদের পরিণতি’ আল্লাহ’র ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওয়াসার পানিতে দুগন্ধ। পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, ধনিয়া, দোলাইখাল, সায়েদাবাদ, জুরাইনসহ বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার সাপ্লাইয়ের পানি দুর্গন্ধের জন্য খাওয়া যায় না। এ সব এলাকায় ডায়রিয়ার পাদুর্ভাব ঘটেছে। আইসিডিডিআর,বি জানিয়েছে, গতকালও ঘণ্টায় ৫২ জন করে ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হচ্ছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৪৫ জন ডায়রিয়ার আক্রান্ত রোগী ওই হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছেন। ডায়রিয়ার রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)। গতকাল রোববার আইসিডিডিআর,বির বরাত দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সূত্র বলছে, চলতি মাসের ২৭ মার্চ পর্যন্ত আইসিডিডিআর,বির হাসপাতালে মোট ২৪ হাজার ৪৬৯ ডায়রিয়ার আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। কিছু রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া। আইসিডিডিআরবি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসপাতালে শয্যা খালি নেই। হাসপাতালের বাইরে ৭টি তাঁবুতেও রোগীদের জায়গা দেয়া যাচ্ছে না। রোগীদের বেশিরভাগ বয়স্ক ও শিশু। আইসিডিডিআরবির কর্মকর্তারা বলছেন, গত ৬০ বছরের ইতিহাসে এত রোগীর চাপ তারা দেখেনি। ফলে হাসপাতালের শয্যার চেয়ে রোগী বেশি হওয়ায় তাঁবু টানিয়ে ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।