Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুমিনের হাতিয়ার দু‘আ, ইস্তিগফার ও ইনাবাত ইলাল্লাহ

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক | প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০২২, ১২:৩২ এএম | আপডেট : ১২:৫০ এএম, ২৮ মার্চ, ২০২২

‘দুআ’ অর্থ ডাকা, আল্লাহকে ডাকা। ‘ইস্তিগফার’ অর্থ মাফ চাওয়া। আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া। আর ‘ইনাবত ইলাল্লাহ’ অর্থ আল্লাহর দিকে রুজু হওয়া। দুআ, ইস্তিগফার ও ইনাবাত ইলাল্লাহ মুমিনের পাথেয়, ঈমানদারের সম্বল, সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় তা মুমিনের অবলম্বন। মুমিন যখন সুখী তখনও আল্লাহকে ভুলে না, যখন দুঃখী তখনও আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় না। সুখ ও শান্তি আল্লাহর তরফ থেকে আসে। মুক্তি ও বিপদ মোচনও তাঁর আদেশে হয়। তারই ফায়সালায় অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। অতএব দু‘আ সর্বাবস্থার আমল।

দ্বিতীয়ত আল্লাহ-ভোলা মানুষের চিন্তায় সুখ-শান্তি, অশান্তির পরিধি খুবই সীমিত। শুধু পার্থিব জীবনের ক্ষুদ্র পরিসরেই তা সীমাবদ্ধ। পক্ষান্তরে প্রজ্ঞাবান মুমিনের কাছে এসব বিষয়ের পরিধি অনেক বিস্তৃত। মুমিনের কাছে যেমন শান্তির উপকরণই শান্তি নয় তেমনি শুধু পার্থিব শান্তি তার একমাত্র কাম্য নয়। মুমিনের কাছে শান্তি হচ্ছে, যা আল্লাহ দুনিয়াতে মানুষের অন্তরে দান করেন আর যা আখিরাতে তাঁর ওফাদার বান্দাদের দান করবেন। এ শান্তির আছে অনেক স্তর।

মুমিন প্রত্যাশী সর্বোচ্চ শান্তির। তেমনি মুমিনের কাছে অশান্তির অনুষঙ্গ ও উপকরণগুলোই অশান্তি নয় এবং পার্থিব দুঃখ-কষ্টই বড় দুঃখ-কষ্ট নয়। আখিরাতের কষ্টই বড় কষ্ট, আখিরাতের ব্যর্থতাই চরম ব্যর্থতা। একারণে ‘শান্তি’প্রিয় মুমিনের দুআ ও প্রার্থনা জীবনব্যাপী। সুখে-দুঃখে, শান্তি-অশান্তি সর্বাবস্থায়। তাছাড়া এ তো এক সহজ সত্য যে, সুখের সময় যে আল্লাহকে স্মরণ করে দুঃখের সময় আল্লাহ তাকে ভুলেন না। এজন্য, দু‘আ শুধু সঙ্কটকালের আমল নয়। সর্বাবস্থার আমল। সর্বোপরি দু‘আ হচ্ছে ইবাদত।

আর আব্দের (বান্দার) জন্য ‘ইবাদত’ সব সময়ের কাজ। তেমনি ইস্তিগফার সবসময়ের আমল। শান্তির সময় মানুষের কর্তব্য ‘শোকর’ আর অশান্তির সময় ‘সবর’। এ দুই শব্দ এত ব্যাপক অর্থের ধারক যে, মুমিনের সকল কর্তব্যই এ দুই শিরোনামে এসে যায়। বস্তুত সবর-শোকরের জীবনই হচ্ছে ঈমানী জীবন। আর উভয় ক্ষেত্রে আমাদের ত্রæটি-বিচ্যুতি, অপরাধ-অবহেলা সীমাহীন।

তাই ইস্তিগফার আমাদের রক্ষাকবচ, যা থেকে বেনিয়ায হওয়ার কোনো উপায় আমাদের নেই। আর ইস্তিগফার শুধু ‘গুনাহ’র কারণেই হয় না। আইনের বিচারে যা গুনাহ নয় এমন অনেক কিছুতেও ইস্তিগফার আছে। এ ক্ষেত্রগুলো নির্ণিত হয় ব্যক্তির শান-মান ও আল্লাহর সঙ্গে তার নৈকট্যের পরিমাণ হিসাবে। সর্বোপরি ইস্তিগফার একটি বরকতপূর্ণ ইবাদত। কারণ তা দু‘আ। একারণে ‘নিষ্পাপ’ নবী-রাসূলগণের গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ ইস্তিগফার। শেষ নবী ও শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ‘আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে (কমপক্ষে) আশিবার ইস্তিগফার করি।’

সুতরাং কে সে ব্যক্তি যার ইস্তিগফারের প্রয়োজন নেই? ইস্তিগফার আল্লাহর ইবাদত, নবীর সুন্নাহ। ইস্তিগফার মুক্তি ও নাজাতের উপায়, রহমত ও বরকতের উসীলা। ইস্তিগফার থেকে যে বিমুখ হয় সে তো নিজের মুক্তি ও সফলতা থেকেই বিমুখ হয়। তাই ইস্তিগফার সবসময়ের আমল। আর সমস্যায়-সঙ্কটে তা হচ্ছে পরিত্রাণ লাভের শক্তিশালী উপায়।

আল্লাহর নবী ইউনুস আলাইহিস সালামের সঙ্কটকালের ওই দু‘আকে আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারীমের অংশ বানিয়ে দিয়েছেন : ‘আর (আলোচনা করুন,) মীনগ্রস্তের ঘটনা, যখন তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে (নিজ কওম হতে) চলে গেলেন, আর তিনি ধারণা করেছিলেন যে, আমি তাকে পাকড়াও করব না, অবশেষে তিনি অন্ধকার পুঞ্জের মধ্যে ডেকে ডেকে বললেন, (আল্লাহ!) আপনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই; আপনি পবিত্র, নিঃসন্দেহে আমি একজন অপরাধী (সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন এবং বিপদমুক্ত করুন)। অতপর আমি তাঁর ডাকে সাড়া দিলাম এবং তাকে উদ্বিগ্নতা থেকে মুক্তি দিলাম। আর এভাবেই আমি মুমিনদের মুক্তি দিয়ে থাকি।’ (সূরাতুল আম্বিয়া : ৮৭-৮৮)।
এই যে ঈমান ও তাওহীদ, এই যে তাওবা ও ইনাবত এ-ই তো মুমিনের শান। সকল প্রতিক‚লতায় সবার আগে মুমিন নিজেকেই অপরাধী মনে করে। আর সকল কিছু থেকে বিমুখ হয়ে আল্লাহর কাছেই সমর্পিত হয়। চারপাশের সকল ঘটনা ও ‘কারণ’ যেহেতু আল্লাহর আদেশেই সৃষ্টি তাই মুমিন পার্থিব কার্যকারণের অনুসন্ধান ও পর্যালোচনার আগে আপন প্রভুর দিকে প্রত্যাবর্তন করে। তাই সমস্যায়-সঙ্কটে এ কোরআনী দু‘আ যেমন মুমিনের ওযিফা তেমনি তা এক গভীর শিক্ষা ও নির্দেশনার ধারক। ঈমান, তাওহীদ ও ইনাবত ইলাল্লাহর এ শিক্ষা মুমিনের সারা জীবনের পাথেয়। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের এ সত্য-উপলব্ধির তাওফীক দান করুন। আমীন।



 

Show all comments
  • Muzibul H. Bashar ২৮ মার্চ, ২০২২, ৬:৪৬ এএম says : 0
    কোনো কিছু চাইলে অত্যন্ত খুশি হন এমন সত্তা একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। বান্দা যত চায় আল্লাহ তত দেন এবং তত বেশি খুশি হন।
    Total Reply(0) Reply
  • Mir Irfan Hossain ২৮ মার্চ, ২০২২, ৬:৪৭ এএম says : 0
    আল্লাহর কাছে বান্দার চাওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় দোয়া। এর মধ্য দিয়ে আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে সেতুবন্ধ সৃষ্টি হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahbub Alam Kazal ২৮ মার্চ, ২০২২, ৬:৪৭ এএম says : 0
    দুনিয়াতে যারাই আল্লাহর প্রিয় হয়েছেন তারা দোয়ার মাধ্যমেই হয়েছেন। দোয়ার মধ্যে মানুষের পার্থিব ও পরকালীন সফলতা নিহিত আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Imran Selim ২৮ মার্চ, ২০২২, ৬:৪৭ এএম says : 0
    আল্লাহ তায়ালা বান্দার ওই মুহূর্তটিকে অধিক পছন্দ করেন যখন বান্দা তার নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে, তার কাছে মাগফিরাত চায়।
    Total Reply(0) Reply
  • Badal Sikdar ২৮ মার্চ, ২০২২, ৬:৪৮ এএম says : 0
    রাসূল সা: আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয় বন্ধু ছিলেন। দোয়ার মাধ্যমে তিনি আল্লাহর কাছাকাছি চলে যেতেন। যেকোনো বিপদে-আপদে আল্লাহর রাসূল সা: দোয়ার মাধ্যমে মহান প্রভুর শরণাপন্ন হতেন। মক্কায় অবস্থানকালে কঠিন মুহূর্তে, ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধে অনিবার্য পরাজয়ের মুখে, হিজরতের সময় কাফেরদের হাতে ধরার পড়ার অতি নিকটবর্তী সময়েও রাসূল সা: যখনই আল্লাহর দরবারে হাত উঠিয়েছেন তখনই আল্লাহর সাহায্য এসেছে। তার রহমতের দরিয়ায় ঢেউ উঠেছে। আল্লাহ তার কৃপার অদৃশ্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রিয় নবীর সাহায্যে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন