পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দাঙ্গার আগুনে হারিয়েছিলেন ১৬ বছরের ছেলেকে। কিন্তু প্রতিহিংসার বদলে অশান্ত আসানসোলবাসীকে শান্ত হওয়ার আহŸান জানিয়ে ছিলেন ইমাম ইমদাদ উল্লাহ রশিদ। হাতজোড় করে বলেছিলেন, আর কোনো বাবাকে যেন সন্তানহারা হতে না হয়। তার সেই আবেদনে শান্তি ফিরেছিল শিল্পাঞ্চলে।
এবার ফের মানবতার বার্তা দিলেন সেই ইমাম। ছেলের অপহরণ ও খুনের মামলায় দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষীই দিলেন না সেই ইমাম। আদালতকে বললেন, তিনি তো দোষীদের নিজের চোখে দেখেননি। তাই মিথ্যা সাক্ষী সাজবেন কেন!
ইমামের এই সাক্ষ্যের পর আসানসোল আদালত বেকসুর খালাস করে দেয় সিবগতউল্লা, অপহরণ ও খুনের মামলায় অভিযুক্ত পিন্টু যাদব ও বিনয় তিওয়ারিকে।
আদালতে ছেলের খুনে অভিযুক্তরা ছাড়া পেয়ে যাবে জেনেও সন্তানহারা বাবার এমন সাক্ষ্যে অবাক অনেকেই। আইনজীবীও বিস্মিত। যদিও নিজের অবস্থানকে ব্যতিক্রমী কিছু ভাবছেন না ইমাম। তিনি বলেন, ‘সেদিন বলেছিলাম, আজও বলছি। যা নিজের চোখে দেখিনি, তার সাক্ষী কীভাবে দেব!’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের রামনবমীর দিন সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয় আসানসোলের রানীগঞ্জে। রেললাইনের পাশে খুন হন বেশ কয়েকজন। মামলা করে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ। দুই গোষ্ঠীরই বেশ কয়েক জন গ্রেপ্তার হন। বহুদিন সেই মামলা চলার পর শর্তসাপেক্ষে জামিন হয় অভিযুক্তদের। ১০ জন সাক্ষীর মধ্যে কেউই বলেননি যে তারা নিজের চোখে দেখেছেন কে বা কারা খুন করেছে।
এসময় আসানসোলের এক ইমাম ও তার আত্মীয়স্বজন নিজের ছেলে খুন হওয়ার পরেও আদালতে জানালেন, তারা সত্যিই দেখেননি তাঁদের ছেলেকে কে বা কারা খুন করেছে। এরপর অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস দেন অতিরিক্ত জেলা বিচারক শরণ্যা সেন প্রসাদ।
অভিযুক্তদের আইনজীবী শেখর কুÐু বলেন, মামলায় অন্যতম সাক্ষী নিহতের বাবা ইমদাদউল্লা রশিদি আদালতে জানান, তিনি যেহেতু নিজের চোখে কাউকে খুন করতে দেখেননি তাই তিনি সাক্ষ্য কী করে দেবেন। তিনি ছাড়া যাঁরা সাক্ষী হিসেবে ছিলেন, তারাও জানিয়ে দেন এঁদের কাউকে খুন করতে দেখেননি।
মামলার সহকারি প্রধান আইনজীবী স্বরাজ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমার ৭১ বছর বয়স হয়েছে। আমি ৪৮ বছর ধরে এই পেশায় রয়েছি। একজন খুন হওয়া পুত্রের পিতা সাক্ষী দিলেন না, কারণ তিনি নিজের চোখে কিছু দেখেননি। এটা আমার কাছে নজিরবিহীন ঘটনা। ’
শুক্রবার রায়ের পর পুত্রহারা সেই ইমামের কথায়, ‘আমি সেদিনও যে কথা বলেছি আজও সেটাই বলছি। উপরওয়ালা প্রকৃত বিচার করবেন। পুলিশ মামলা সাজিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই পুলিশের দায়িত্ব তারা প্রকৃত খুনি ধরবে। আমি যেহেতু নিজের চোখে কাউকে আমার ছেলেকে অপহরণ করতে বা খুন করতে দেখিনি, স্বাভাবিকভাবেই আদালতে গিয়ে মিথ্যা সাক্ষী দিতে পারব না বলেই সাক্ষী দিইনি। চিরকাল আমি সত্যের জন্য লড়াই করে এসেছি। একজন ইমাম হিসেবে সত্যকে নিয়েই বাঁচতে চাই। আমি নিজে কারো নাম দিইনি। ’
তিনি আরো বলেন, ‘যারা গ্রেফতার হয়েছিল, এক সময় তাদের পরিবারের কেউ কেউ আমার কাছে আসার পর আমি বলেছিলাম আমি যা চোখে দেখিনি, তা বলব না। আর ওরা যদি পাপ না করে থাকে, তা হলে ওরা মুক্তি পাবে’।
তিনি আরো বলেন, ‘অভিযুক্তরা সবাই বেকসুর খালাস হল। সামনে আবার একটা রামনবমী। দুই বছর পর রামনবমীর মিছিল হবে বলে শুনছি। আমার একটাই অনুরোধ, আসানসোল যেন শান্তিতে থাকে’। সূত্র : আনন্দবাজার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।