Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

খাল ভরাট করে কালভার্ট নির্মাণ

ওসমানীনগরে হুমকির মুখে কৃষি : অকাল বন্যার শঙ্কা

আবুল কালাম আজাদ, বালাগঞ্জ (সিলেট) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০২২, ১২:০২ এএম

সিলেটের ওসমানীনগরের ঘয়নাঘাট খালের মধ্যখানে ব্যক্তি উদ্যোগে ছোট-ছোট কালভার্ড নির্মাণ করে দখল করা হচ্ছে খাল। খালটির দুই অংশ ভরাট করে প্রস্থতা কমিয়ে দেয়া হচ্ছে।
একের পর এক খালভার্ট নির্মাণ করা হলে প্রশাসনের কোন নজরদারী নেই। এমন অবস্থায় হুমকীর মুখে পড়েছে এ এলাকার কৃষি ব্যবস্থা। অন্যদিকে ঘয়নাঘাট খাল অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে অকাল বন্যারও শিকার হচ্ছেন পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার মানুষ। লিখিত অভিযোগ দিয়েও এর কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। উপরন্তু একের পর এক ভূমি খেকোরা নতুন নতুন কালভার্ট নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে।
জানা যায়, উপজেলার পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার পানি কালাসারা হাওরে এসে জমা হয় এবং এ পানি নিষ্কাষনের একমাত্র পথ হচ্ছে গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের গয়নাঘাট খাল। খালটির দৈর্ঘ প্রায় দেড় কিলোমিটার। স্থান ভেদে খালের প্রসস্থতা ৩০ থেকে ৪৫ ফুট পর্যন্ত। কয়েক বছর ধরে খালের অপর প্রান্তে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বাসাবাড়ি নির্মাণ শুরু হয়। খাল পারাপারের জন্য গয়নাঘাট এলাকায় খালের বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তি উদ্যোগে খালের দুই পাশের বিরাট অংশ ভরাট করে মাধ্যখানে ছোট কালভার্ড নির্মাণের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এপর্যন্ত খালের ওপর অন্তত ৫টি কালভার্ড নির্মাণ করা হয়েছে। খালের পাশে ওসমানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণাধীন থাকায় আশপাশের জমির মালিকগণ আরো কালভার্ড নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানা গেছে। ছোট আকৃতির কালভার্ড নির্মাণের কারণে খালটি একটি ড্রেনের আকার ধারণ করতে শুরু করেছে। ফলে হুমকীর মুখে পড়েছে এলাকার কৃষি ব্যবস্থা। অন্যদিকে বর্ষায় দীর্ঘ মেয়াদী বন্যার আশঙ্খাও তৈরী হয়েছে।
এলাকাবাসীর পক্ষে তুতিউর রহমান চৌধুরী ২০১৯ সালের ১৪ মার্চে ঘয়নাঘাট খাল দখলের প্রতিকার চেয়ে সিলেট জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, দাশপাড়া-ঘয়নাঘাট খালের উপর নির্মিত কালভার্ট উচ্ছেদ করে এলাকার কৃষি ব্যবস্থা রক্ষার দাবী জানান। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সংশ্লিষ্টরা আইনগত কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। এমন অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে এলাকায় কোন খাল খোঁজে পাওয়া যাবে না বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় তুতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, এব্যাপারে আমি ২০১৯ সালে সিলেট জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়ে কোন প্রতিকার পাইনি। এলাকার কৃষি রক্ষার স্বার্থে আমি ঘয়নাঘাট খালে নির্মিত কালভার্ট উচ্ছেদে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
স্থানীয় মুকিদ মিয়া বলেন, এক সময় কালাসারা হাওরের খাল দিয়ে পাল তোলা নৌকা চলাচল করতো। বিগত ৫-৬ বছর পূর্বে এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে খালের পানি প্রবাহের পথ সুগম করতে জাতীয় পার্টির ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এমপি থাকাকালীন দেড় কিলোমিটার খাল খননের প্রকল্প নিয়ে প্রায় ১কিলোমিটার খননের কাজ সম্পন্ন করা হয়। খালের প্রস্থতা স্থান ভেদে ২৪ থেকে-৪৫ ফুট পর্যন্ত রয়েছে। কিন্তু ছোট কালভার্ড নির্মাণের কারণে খালটি একটি ড্রেনে পরিণত হতে শুরু করলেও সংশ্লিষ্টরা জেনেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী বলেন, আমি এমপি থাকা অবস্থায় এ এলাকার খাল খনন করা হয়েছে। এলাবাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে প্রথমেই বিএডিসির মাধ্যমে গয়নাঘাট-কালাসারা হাওরের খালটির খনন কাজ করে ছিলাম। খালের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আমি অবগত নই।
ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ময়নুল হক চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে কেউ যদি অনিয়মতান্ত্রিভাবে খাল ভরাট করে কালভার্ট নির্মাণ করে থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (সেচ, উইং) সিলেটের বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অফিসের সহকারী প্রকৌশলী রুবায়তে ফয়সাল আল মাসুম বলেন, এখানে নতুন এসেছি। তাই বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এব্যাপারে ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলিমা রায়হানা বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ