বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
ড. ইশা মোহাম্মদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছে সাড়ে পাঁচ শতাংশ। বাকিরা কী করেছে? তারা ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করার মতো নম্বরও পায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা খুব বেশি নয়। যারা পাস করেছে তাদের সবাই ভর্তি হতে পারবে না। তাই বিশাল সংখ্যক ফেল করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কোনো সমস্যা হয় না। যে কারণে পঁচানব্বই শতাংশ ফেল করার ঘটনা বাংলার মানুষের জন্য কোনো সংবাদই নয়। এটি মাথাব্যথার কারণ হবে একমাত্র অভিভাবকদের। যাদের ছেলেমেয়েরা ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেছে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুর্ভাবনায় বসবে তাদের পিতামাতারা। এত ভালো রেজাল্ট করেও কেন একটি সাধারণ পরীক্ষায় ফেল করে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয় ন্যূনতম যোগ্যতার মাপকাঠিতে। কখনই সর্বোচ্চ মেধার ছেলেমেয়েদের সন্ধান করা হয় না। যারা ন্যূনতম যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে তাদের মধ্য থেকে উপরের দিকে ক্রমানুসারে ভর্তি করা হয়। যতগুলো আসন থাকে ততগুলোকে নির্বাচন করা হয় এবং বাকি কিছু ভর্তির যোগ্যদের বিদায় করা হয়। বিদায়কৃতরা খুব একটা অসন্তুষ্ট হয় না। তারা মনস্তাত্ত্বিক কোনো চাপও অনুভব করে না। কিন্তু যারা ফেল করে, তাদের কী দশা হয়?
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েরা ভর্তি হতে আসে। তাদের রেজাল্টও ভালো। ভালো যে তার প্রমাণ ভর্তির জন্য আবেদন করার যোগ্যতা। বিশাল সংখ্যক ছেলেমেয়ে আবেদন করেছে। নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ওরা সবাই পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেই এসেছে। তাহলে যে প্রশ্ন ন্যূনতম জ্ঞানের ভিত্তিতে করা হয়েছে সেই প্রশ্নে ফেল করে কেন? অভিভাবকদের ভাবনা : উচ্চমাধ্যমিকে তাদের লেখাপড়া ভালো হয়নি। তাহলে ভালো রেজাল্ট করল কী করে? লেখাপড়া না করেও ভালো করার দুটো প্রকাশ্য কারণ আছে। এক. নকল, দুই. খাতা না পড়ে নম্বর দেয়া। প্রায়ই দেখা যায়, পরীক্ষকরা খাতা না পড়ে ইচ্ছামতো নম্বর দেন। আবার নকলের সুযোগ করে দেয়ায় দুর্বল কলেজের ছেলেমেয়েরাও ভালো ‘ফল’ করে। আবার প্রশ্ন আউট হলেও ফল ভালো হয়। ওই ক্ষেত্রে নকলকারীরা গুছিয়ে নকল আনতে পারে। সব ফাঁস প্রশ্ন নকল করে লিখতে পারলে তো নম্বর বেশি পাবেই। নম্বর বেশি পেলে বাবা-মা’রা খুশি হন। কিন্তু তাদের ছেলেমেয়েদের ভেতরটা যে ফাঁপা তা বুঝতে পারেন না। না বুঝেই তাদের প্রকৃত শিক্ষিত না করেই উচ্চশিক্ষার অন্য উপায় খোঁজেন। ধনীরা ঝুঁকেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। কিন্তু সব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান তো আর একই না। তারপরও ওখানেই পড়ায়। ছেলেমেয়েদের দশা কী হয়? সারা জীবন অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত হয়ে বেঁচে থাকে। জাতির জন্য ‘দায় হয়ে’ বেঁচে থাকা ছাড়া অন্য কোনো কিছুই করতে পারে না। দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে বিপথ গমন। যারা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে পারে না, তাদের অনেকেই হতাশ হয়, বিপথগামী হয়।
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। উচ্চমাধ্যমিকেই কিশোর-কিশোরীদের মাজা ভেঙে যায়। এখানে পড়াটা যেন একেবারেই গুরুত্বহীন হয়ে গেছে। এরা একেবারেই অভিভাবকহীন। এদের শিক্ষার মান মনিটরিং করে কে? কার সে ক্ষমতা আছে? অধিদপ্তর ভাবে তারা যথেষ্ট যোগ্যতার সাথে মনিটরিং করছে। তাদের ভাবনার ফল কী?
পুরাতন ব্যবস্থা বিনাশ করতেই হবে। সনাতন বৃত্ত ভাঙতেই হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মাধ্যমিক শিক্ষা মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দিতে হবে। হয়তো বলা হবে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মনিটরিংয়ের সময় নেই। সময় না থাকলে তারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ায় কীভাবে? তাছাড়া ইচ্ছা করলেই রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সময় বের করে নেয়া সম্ভব। বেশি বুড়োরা ঘোরাঘুরি করতে না পারলেও অপেক্ষাকৃত তরুণরা ঘোরাঘুরি করতে পছন্দই করবে। তাদের একঘেয়ে জীবনকেও বৈচিত্র্যময় করতে পারবে। এরা যদি একাডেমিক মনিটরিং করে তবে মাধ্যমিকের শিক্ষার মান যথাযথ হবে। কোনো আমলাতান্ত্রিক কাঠামোতে শিক্ষা মনিটরিংয়ে কোনো সময়ই সুফল পাওয়া যায় না।
আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়োয়া জীবন ও জগৎ বিচ্ছিন্ন বিদ্যা অর্জন করে। তাদের শিক্ষা জীবন সমাজ বিছিন্ন। যে কারণে তারা শিক্ষা শেষে কৃত্রিম আভিজাত্য অনুভব করে। আপনারা তো জানেনই যে, আভিজাত্য মূলত বিচ্ছিন্নতা। সমাজের সকল মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে একটি কাল্পনিক পরিম-লে বসবাস করে নিজেকে অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র ভাবাই আভিজাত্য। যাদের প্রচুর আছে এবং সাধারণ মানুষের শ্রম শোষণ করতে পারে তারা উৎপাদন ব্যবস্থার কারণেই এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা অনুভব করে। কালক্রমে তারা অভিজাত হয়ে যায় চাটুকারদের তোষামোদির কারণে। কিন্তু বিশাল সম্পদ নেই, কোনো রকমে খেয়েপরে জীবন কাটায়, তারা কেন অভিজাত হয়ে যায়? এটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সমাজ বিচ্ছিন্ন। যে কারণে সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সাথে সম্পৃক্ত হয় না। এই বিচ্ছিন্নরাই বিপথগামী হয়, জঙ্গিও হয়।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থার এ হাল কেন হলো? সেটি নিয়ে কি আপনারা চিন্তাভাবনা করেছেন? অন্ধ অনুকরণই প্রধান সমস্যা। আমরা আমাদের সমাজকে না বুঝে উন্নত বিশ্বের সমাজের শিক্ষাব্যবস্থাকে অনুসরণ করি। শিক্ষা সমাজকে উন্নত করে। কিন্তু সামাজিকভাবে বিছিন্ন শিক্ষা সমাজকে উন্নত করে না। সামাজিক বিচ্ছিন্নতার কারণে পশ্চিমের সমাজ মানবিক গুণাগুণ হারাতে বসেছে। তাদের জীবনবোধে নৈরাজ্য এমনভাবে গেড়ে বসেছে যে, সর্বোচ্চ অমানবিক সম্পর্ককেও স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, যা শোষণমূলক সমাজ ব্যবস্থা থেকে উৎসারিত, তারই কুফল। শিক্ষাব্যবস্থা মানবিক হবে তখনই, যখন তা হবে সামাজিক। সমাজের মধ্যে থেকেই তাদেরকে শিক্ষিত হতে হবে।
প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকেই হাতেকলমে কাজ শেখানোর ছলে সমাজের মানুষের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টিতে অনুপ্রাণিত করতে হবে। যারা মাস্টার্স ডিগ্রি নেবেন, তারা কমপক্ষে এক বছর সমাজের মানুষের সাথে মিশবেন। প্রত্যেক ‘স্কুলই’ তাদের মতো করে কারিকুলাম তৈরি করবে ইন্টার্নিশিপের মতো করে। ওই ইন্টার্নির সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুল-কলেজ পরিদর্শন করতে পারবে। সাথে তাদের শিক্ষকরাও থাকবেন। ওই ধরনের পরিদর্শনে এক প্রকার অপ্রত্যক্ষ মনিটরিং হয়ে যায়। মন্ত্রণালয় তাদের পরিদর্শন রিপোর্ট থেকেও অনেক কিছুই জানতে পারবে। ব্যবস্থাও নিতে পারবে।
প্রশ্ন হতে পারে, সকল বিষয়েই কি সামাজিক ইন্টার্নিশিপ সম্ভব? অবশ্যই সম্ভব। তবে যারা বোধহীন, তালকানা এবং নিজেরাই বিচ্ছিন্ন তাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। প্রথমেই বুঝতে হবে, সামাজিক সমস্যার উৎস সামাজিক ব্যবস্থা। যে কোনো সমাজের সমস্যার কারণ ওই সমাজ ব্যবস্থাই এবং তার প্রতিবিধান করতে হবে ওই ব্যবস্থাদি ভেঙে কিংবা সংস্কার করে। শ্রেণি শোষণের প্রতিবিধান করতে হয় সামাজিক ব্যবস্থা ভেঙে, কিন্তু শিক্ষা সমস্যার প্রতিবিধান করতে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলার দরকার নেই। সংস্কার করেই প্রতিবিধান করা সম্ভব। শিক্ষা সংস্কারের প্রথম নির্ধারণী দৃষ্টিভঙ্গি হবে সামাজিক এবং মানবিক কিনা? দ্বিতীয় নির্ধারণী হবে সামাজিক-সাংস্কৃতিকভাবে বিছিন্ন কিনা? শিক্ষা সংস্কারের যেসব দলিল অদ্যাবধি পাওয়া গেছে, তাতে কোথাও এই দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
শিক্ষা যতদিন কারো কাছে কুক্ষিগত থাকবে, ততদিন এই পরিস্থিতি বদলাবে না। কেননা তারা কাঠামোর কারণে বৃত্তাবদ্ধ। শিক্ষাকে গণমানুষের কাছে আনতে হবে। মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষাকে বের করে আনতে হবে। কিন্তু তা বর্তমান পরিস্থিতিতে মনে হয় অসম্ভব। কেবলমাত্র রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেই সেই অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।
শিশু-কিশোরদের শিক্ষা, যা বর্তমানে চলছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, তদুপরি তাতে সৃজনশীলতার শনি ভর করেছে। প্রকৃত সৃজনশীলতা কী? সৃজনশীলতা নিয়ে যিনি চিন্তা করেছিলেন তার ধারণা ছিল সৃজনশীলতাই আবিষ্কার ধর্মী। কিন্তু সেই আবিষ্কারই তো প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা যাকে আবিষ্কার বলি, তা ভুলভাবে বলি। প্রকৃত অর্থে এটি উন্মোচন। ইনভেনশন এবং ডিসকভারি নিয়ে বহুদিন ধরেই দার্শনিক বিতর্ক চলছে। আবিষ্কার সত্যিই অসম্ভব। যা জানা নেই, তা জানতে পারা আবিষ্কার নয়, উন্মোচন, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন কিংবা জীববিদ্যাই হোক না কেন, সেখানেও আবিষ্কার করার কোনো সুযোগই নেই। যে সম্পর্কে কেউ জানত না সেই সম্পর্কে জানতে পারাই আবিষ্কার মনে করা কি ঠিক? প্রকৃত অর্থে আমরা প্রকৃতির অজানা বিষয়গুলো জানতে পারি। কাজেও লাগাতে পারি। তার বেশি কিছু নয়।
সৃষ্টিধর্মী বিষয়গুলো কল্পনাশ্রিত শিল্পকর্মেই থাকে। যেমনÑ একজন ছুতার যদি একটি কাষ্ঠখ- খোদাই করে ‘নরমু-ু’ তৈরি করে তবে বুঝতে হবে তিনি সৃষ্টিশীল কাজ করেছেন। আবার যদি ওই ছুতার শত শত ‘নরমু-ু’ বানান তবে তা আর শিল্প থাকে না, পণ্য হয়ে যায়। সুকুমার শিল্প ছাড়া প্রকৃত অর্থে কোথাও সৃষ্টিশীলতা নেই। আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো যায়। সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে তেমনটি দেখা যায়। কিন্তু এগুলো বাস্তবতা বর্জিত এবং বিজ্ঞানমনস্কতার সাথে সাংঘর্ষিক। প্রকৃত সৃষ্টিশীল আবিষ্কার একেবারেই নেই তা বলাও যায় না। তবে এর বাস্তব প্রতিকৃতি নেই। সাধারণত কৌতূহল ও অনুসন্ধিৎসা থেকে মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে। ওই প্রশ্নই ব্যক্তির তরফে আবিষ্কার। আর উৎকৃষ্ট প্রশ্নই শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার।
আমরা যদি সৃজনশীলতাকে গুরুত্ব দেই তবে শিক্ষার তৃতীয় পর্যায়ে দিতে হবে। শিশু-কিশোরদের জন্য অনুসরণ ও অনুধাবন পর্ব শেষ হলেই কেবল সৃজনশীল কাজে নামানো যেত পারে। যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষায় সৃজনশীলতা গুরুত্ব পায়। এ ছাড়া শিশু-কিশোরদের অনুসরণ ও অনুধাবনে বিড়ম্বনা সৃষ্টি করা উচিত নয়।
বাংলাদেশে সৃজনশীলতার বড় বাধা সবাইকেই একই বই পড়ানো। অসংখ্য লেখকের অসংখ্য লেখা পড়ানো উচিত। অঞ্চলভেদে ‘লেখক’ বিশেষত্ব থাকতে হবে। শিশু-কিশোরদের তাদের অঞ্চলের ভালো লেখকদের লেখা পড়তে হবে। এটি বিবেচনায় নিয়ে সরকারি উদ্যোগে পাঠ্যপুস্তক ছাপাতে হবে। প্রতিটি সাংস্কৃতিক অঞ্চলের পাঠ্যবই আলাদা হবে। এর ফলে ভাবজগতে বিশেষজাতীয় প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। তবে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অসংখ্য বই দরকার নেই।
শিশু শিক্ষার আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। বাৎসরিক পরীক্ষা বাতিল করতে হবে। তাদেরকে নিত্যদিন পরীক্ষায় নিতে হবে। প্রতিদিনের নম্বর গড় করে বাৎসরিক গ্রেড দিতে হবে। এই নম্বর দেবেন মাস্টারমশাইরা। তারা যদি সঠিক মূল্যায়ন করেন এবং ভালোভাবে পড়ান তবে সমস্যা থাকবে না। শুধুমাত্র প্রকৃত অবস্থা যাচাই করার জন্য অষ্টম শ্রেণিতে পরীক্ষা নেয়া যায়। উচ্চমাধ্যমিকে প্রতি তিন মাসে কোর্স সিস্টেমের মতো পরীক্ষা নেয়া যায়। বাৎসরিক পরীক্ষা বাতিল করলে পরীক্ষার নকল প্রবণতা কমে যাবে। যারা পড়ান তারা নম্বর দিলে সমস্যা কী? যারা পড়াচ্ছেন তাদেরকে বিশ্বাস করব না কেন? যদি অবিশ্বস্ত হয়ই তবে বিদায় করে দিয়ে একজন বিশ্বস্তকে দিয়ে ওই শূন্য স্থান পূরণ করা যায়। শিশুদের সৃজনশীলতার অঙ্কুরোদগমে সহায়তা করার জন্য সপ্তাহে একদিন সাংস্কৃতিক দিবস পালন করে ওই দিনেই তাদেরকে দিয়ে পরস্পরের প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দেয়ার খেলা করানো যায়। সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে নম্বর থাকবে। প্রশ্ন তৈরিতেও নম্বর থাকবে। শিশু-কিশোরদের সমাজের কর্মজীবী মানুষের সাথে আলাপ-পরিচয় করানোর জন্য মাসে একবার মানবমেলার ব্যবস্থা করাও যেতে পারে। শিশুদের সামাজিকীকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ বিচ্ছিন্ন হলে অসামাজিক জীব হবে। হচ্ছেও তাই। অনেক কিশোর নেশার টাকার জন্য বাবা-মাকেও পেটাচ্ছে। এসবই হচ্ছে বিচ্ছিন্নতার কারণে। স্কুল-কলেজেই সিস্টেমের জালে পড়ে ছাত্রছাত্রীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকার অনেকগুলো বড় কাজ করেছে। কিন্তু শিক্ষা সংস্কারের বড় উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এখানে তারা বড় সংস্কার কাজে ভয় পাবেন কেন? হয়তো বড় প-িতরা সমর্থন করবে না। তাতে কি? বড় প-িতরা নিজেদের অবস্থান অক্ষুণœ রাখার জন্য এবং ব্যক্তিগত ইগোর কারণে রাজনৈতিক পরিবর্তনে বাধা দেয়। যদি ওই রাজনৈতিক পরিবর্তন রাজনীতিবিদদের মাথার কাজ হয় তবে আরো বেশি বেশি বাধা দেয়। কেন? বাধা না দিলে তাদের নিয়ন্ত্রণ না এই ভয়ে। অথবা তারা এ যাবৎকাল যা বলে এসেছে তা ‘ভুল’ প্রমাণিত হলে তারা মুখ দেখাবেন কী করে? সমাজ সংসারে তারা অপাঙ্ক্তেয় হয়ে যাবেন, ভয় পান সঙ্গত কারণেই। মধ্য যুগে ভুল চিকিৎসার কারণে রোগী মারা গেলে তার আর রোগী জুটত না। এমন কি ওইসব ডাক্তারকে রাজারা নগরের বাইরে পাঠিয়ে দিতেন। এই ব্যবস্থা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছে।
আসলে যেভাবেই হোক আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতেই হবে। তা না হলে নামে মাত্র শিক্ষাগ্রহণকারীরা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাতেই অকৃতকার্য হতে থাকবে তা নয়, বরং বাকি জীবনের সব কাজেই ফেল করতে থাকবে। সেটা নিশ্চয়ই আমরা চাইতে পারি না।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।