Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৩০ সড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ

নির্মাণসামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সোনাগাজীতে চরম জনভোগান্তি

জসীম উদ্দিন আহমদ, সোনাগাজী (ফেনী) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০২২, ১২:০৩ এএম

দেশে নির্মাণ সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে সোনাগাজী উপজেলায় স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রায় ৩০টি সড়ক নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদাররা। যার কারণে ধুলো বালিতে একাকার হয়ে জনভোগান্তি চরমে উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সড়কগুলোর আশপাশে ঘরবাড়িতে দূষিত ধুলোবালিতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। স্কুল-কলেজ-মাদরাসাগামী শিক্ষার্থীরা যাতায়াতের ক্ষেত্রে নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। সর্দিকাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠে। গণরোশ ঠেকাতে একাধিক সড়কে টাংকি ভর্তি পানি ছিটিয়ে ধুলাবালি নিবারনের চেষ্টা করা হচ্ছে। স্থানীয় জনগণের দাবির মুখে ঠিকাদারেরা নির্মাণ সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছে। ঠিকাদারদের দাবি ইট, বালি, পাথর, রড, সিমেন্ট ও বিটুমিনসহ সকল প্রকার নির্মাণ সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। কোন কোন পণ্য সরকারের সাথে চুক্তির ধর্তব্য মূল্যের দ্বিগুন বেড়ে গেছে। এছাড়াও নির্মাণ সামগ্রীর দাম স্থির না হয়ে আকাশ চুম্বি হতে চলেছে নেই কোন নিয়ন্ত্রণ। ওই সব নির্মাণ সামগ্রীতে ১০-৩০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি পেলেও ঠিকাদারদের কম লোকসানের মাধ্যম নির্মাণ কাজ শেষ করা যেত। কিন্তু দ্বিগুন বা তার চেয়ে বেশি দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ঠিকাদারেরা উপান্ত না দেখে বড় ধরণের আর্থিক ক্ষতির আশংকায় সড়কগুলোর নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছেন। কাজ বন্ধ রাখা সড়কগুলোর নির্মাণ কাজ ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যে ঠিকাদারেরা নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন। অধিকাংশ সড়কে মেকাডম শেষ করে কার্পেটিং করার আগ মুহূর্তে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে চলেছে পাগলা ঘোড়ার মত। উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ এসব সড়ক প্রতিনিয়ত যানবাহন চলাচলের কারণে মেকাডম খসে লালছে আবরণ তৈরি হয়েছে। শত চেষ্টা করেও সড়কগুলোর পাশের ঘরবাড়িগুলো পরিস্কার রাখা যাচ্ছেনা। নি:শ্বাসের সাথে দেহে ঢুকছে লালচে বালি কাশির সাথে বের হচ্ছে লাল রংয়ের কফ। এমনটাই অভিযোগ করেছেন ভোয়াগ গ্রামের বাসিন্দা ওমর ফারুকসহ বন্ধ রাখা সড়কগুলোর বেশ কয়েকজন বাসিন্দা। মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এসবড় সড়কের লালচে বালি দেহে ঢুকে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হক ট্রেডাসের্রর স্বত্ত্বাধিকারী ফজলুল হক বাবলু বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে ঠিকাদারদের পীঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। প্রতিটি পণ্যের দাম আকাশচুম্বি। জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে ঠিকাদারেরা বেশকয়েকটি সড়কে পানি ছিটাচ্ছেন। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে ঠিকাদারেরা সব হারিয়ে পথে বসতে হবে। এ ব্যপারে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বাশার ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী ঠিকাদার আবুল বাশার বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর আকাশচুম্বি দামের কারণে লাভতো দূরের কথা ঠিকাদারেরা সহায় সম্বল বিক্রি করেও কাজ সম্পন্ন করতে পারবেনা।

সালেহ আহম্মদ ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী ঠিকাদার আবুল কাশেম বলেন, আমরা জনভোগান্তি দূর করতে দ্রুত সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। কিন্তু নির্মাণ সামগ্রীর আকাশচুম্বি দাম বৃদ্ধি আমাদের কার্যক্রম স্তম্বিত করে দিয়েছে। বাধ্য হয়ে আমরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। জনভোগান্তি দূর করতে হলে সরকারকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারি সংশ্লিষ্ট দফতরে আমরা বিষয়গুলো জানিয়েছি। পণ্যমূল্য পরিশোধ করতে ঠিকাদারদের ঘর-বাড়ি বিক্রি করেও কাজ শেষ করা সম্ভব হবেনা।

সোনাগাজীতে কর্মরত স্থানীয় সরকার বিভাগের উপেজেলা প্রকৌশলী মনির হোসেন খান জনদুর্ভোগ ও ঠিকাদারদের দাবির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সড়কগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের চাপ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ঠিকাদারদের দাবির বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। জনগণের ভোগান্তি দূর করতে ঠিকাদারদের দিয়ে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ বন্ধ থাকা সড়কগুলোর নির্মাণ শুরু করার জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছি।

সোনাগাজী উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে এক যোগে প্রায় ৩০টি সড়কের উন্নয়ন কাজ চলছে। আর সবকটি সড়কেই মেকাডম করে ফেলে রাখা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে কার্পেটিং কার্যক্রম। সড়কগুলো হলো- মতিগঞ্জ-কারামতিয়া ভায়া কাজীর হাট, বখতারমুন্সি-কুঠির হাট, জমাদার বাজার-কারামতিয়া, সওদাগর হাট-হায়দারিয়া মাদরাসা, চেয়ারম্যান, গণস্বাস্থ্য, ভাইগ্যার হাট, হানিফ মাস্টার বাড়ি ও কামরুল ইসলাম টিপু সড়ক, পশ্চিম চরচান্দিয়া ডা. গোলাম মাওলা, মাঝি বাড়ি, বঙ্গবন্ধু সড়ক, আদর্শগ্রাম, মতিগঞ্জ জিসি, সোনাপুর ভায়া শহীদ মানু মিয়ার বাজার সড়ক, চরখোয়াজ-চরনারায়ণ, দাসের হাট-ফাজিলের ঘাট, ফতেহপুর, মান্দারি মুক্তিযোদ্ধা ভায়া তাকিয়া বাজার, আড়কাইম, গুণক-ধলিয়া বর্ডার সড়ক, লকুর বাজার-তাকিয়া বাজার সড়ক, সাতবাড়িয়া, রামচন্দ্রপুর ভায়া বখতারমুন্সি, দৌলতকান্দি-পানের বর ও স্বরাজপুর সড়ক ও পালগিরি মুক্তিযোদ্ধা সড়ক।
ওই ব্যপারে স্থানীয় সরকার বিভাগের বৃহত্তর নোয়াখালী উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আমিনুর রশিদ চৌধুরী মাসুদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ