দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
রোজা এমন এক ইবাদাত যার প্রতিদান ফেরেস্তারা লিখতে অপারগ। কলমের কালি যার হিসাব লিখতে অক্ষম। রোজার প্রতিদান নিয়ে ভাবনা সাধ্য কার! মহান রবের বিশালতার সাথে রোজার প্রতিদানও মিশে আছে। রোজা একমাত্র মহান রবের জন্য। মহান আল্লাহ নিজ হাতে তার প্রতিদান দিবেন। এমন বরকতময় রমজান প্রতিবার আমাদের নিকট আসে মাস পেরিয়ে আবার সে এক বছরের জন্য বিদায় নেয়। এভাবে আমাদের জীবনে অনেকগুলো রমজান পেরিয়ে আমরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ি। পৃথিবীর সব আমল শেষ হয়ে যায়। শুরু হয় তার ফল লাভ, তার প্রাপ্তি, তার পুরস্কার।
অনেকগুলো আমি পার করেছি। বেশ অনেক বছর যাবৎ আমি রোজা রাখছি। আমাদের জীবনে ৩০,৪০, ৫০ বা ৬০ বা তারও বেশি মাস আমরা রোজা আদায় করি। ফল যেই সেই। রোজার আগে আমার চরিত্র আর রোজার পরের চরিত্র কোন পার্থক্য নেই। পুরো মাস আমার আত্মার চিকিৎসা করলাম। কিন্তু আত্মার রোগ বালাই দূর হল না। আমার আত্মা পরিশুদ্ধ হল না। আমার মাওলা আমাকে আত্মশুদ্ধির জন্য ঠিকই প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন। কিন্তু আমি ঔষধ সেবনে ভুল করে চলছি, নিয়মিত, নিয়মমত ঔষধ সেবনে আমার যথেষ্ট খামখেয়ালি রয়েছে। তাই আমার রোগ ভালতো হয়ই না উল্টো অনেক সময় রোগ আরো বেড়ে যায়। আসুন আমার অবস্থা আমি নিজে যাচাই করি, নিজেকে একট ঝালাই করে নেই, নিজেকে একটু যাচাই করি:
রমজান সংযম, না কি অপচয়ের মাস: রোজাকে আমরা সকলে সংযমের মাস বলি। আসলে রোজা সংযমের মাস। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যায় রোজাকে আমরা অপচয়ের মাস বানিয়ে নিয়েছি। রমজান এক উৎসবের মাসে রূপ নিয়েছে। এই মাসে খরচ বেশি। এই মাসে বাজার বেশি। রোজার মাসে আমরা সবচেয়ে বেশি খাবার খাই। সবচেয়ে বেশি খাবার নষ্ট করি। ইফতারী আর সাহরীতে এত আইটেম আর এত খাবার তৈরী হয়, যা আমরা প্রচুর খেয়েও শেষ করতে পারি না। অনেক খাবার নষ্ট হয়। অপরদিকে অনেক মানুষ এমন আছে না খেয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে তাদের খবর রাখারও সুযোগ হচ্ছে না। রোজা যতই মর্যাাদাপূর্ণ ইবাদাত হোক না কেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা অপচয় কারীকে ভালবাসেন না। কেননা অপচয়কারী শয়তানের ভাই। শয়তানের ভাই সেজে আমি কিভাবে মাওলার প্রিয় হতে পারি? এই অপচয় আমাকে আমার প্রভুর নিকট থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। তাই রমজানে বেশি খাওয়ার আইটেম নয়। বেশি খাওয়া নয়। অপচয় নয়। তবেই রমজান হবে সংযমের মাস।
রমজান ইবাদাতের মাস না কি খেলাধুলার মাস: রমজানে একটি নফল আদায় করলে অন্য মাসের একটি ফরজ আদায়ের সওয়াব পাওয়া যায়। একটি ফরজ আদায় করলে অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ আদায়ের সওয়াব পাওয়া যায়। এই মাসে যত বেশি ইবাদাত করা যাবে। ততই বেশি লাভ হবে। কিন্তু আমরা রমজানকে আমোদ প্রমোদ, বিনোদন আর খেলার মাস বানিয়ে নিয়েছি। সময় কাটানোর জন্য আমরা ক্রিকেট খেলা দেখা সহ আরো বিভিন্ন খেলায় লিপ্ত থাকি। আপনি যত খেলাই বলুন কোন খেলা কি সওয়াবের কাজ। কোন খেলাধুলা কি ইবাদাত তুল্য? অবশ্যই না। তাহলে রমজানে আমি মূল্যবান সময়টাকে খেলায় না কাটিয়ে ইবাদাত, তেলাওয়াত, ইস্তেগফার, দরুদ পাঠ ইত্যাদি কাজে ব্যয় করি। তবেই রমজান আমাকে সুফল এনে দেবে। রমজানকে খেলার মাস বানিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশা করা কি কোন বুদ্ধিমানের কাজ হবে?
রমজান ইবাদাতের মাস না কি পাপপূর্ণ বিনোদনের মাস: রমজান মাসে অন্য মাসের তুলনায় একটু অবসর বেশি। অফিস সময় কম। ব্যবসায় সময় কম। এই অবসর সময়কে নিয়ামত মনে না করে কষ্টকর মনে করি। তাই এই সময় কাটানোর জন্য টিভি দেখা, ফেইসবুক সহ সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত থাকা ইত্যাদি বিনোদনে লিপ্ত হয়ে যাই। অথচ আমার উচিত ছিল, এই অবসর সময়ে ইবাদাতের মিষ্টতা গ্রহন করা। কোরআনুল কারিমের তেলাওয়াতের স্বাদ গ্রহন করা। কোরআনের মাসে কোরআন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করা।
রমজান ইহসানের মাস না কি অন্যের কষ্ট বাড়ানোর মাস: রমজান মাস অন্যের কষ্ট অনুধাবন করার মাস। অন্যের কষ্ট দূর করার মাস। কিন্তু রমজান মাসে আমার ইফতার সাহরীতে এতো বেশি আইটেম থাকতে হয় যে, ঘরের মা, বোন, স্ত্রী, মেয়ে তাদের সারাদিন এই রান্না নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। তারা কোন ইবাদাতের সুযোগ পান না। তারপরও আমার মন ভরে না। আরো বেশি চাই, আরো বেশি চাই। অথচ একটু চিন্তা করলেই আমার খাবার আইটেম কমাতে পারি। তাদের সময় বাঁচিয়ে ইবাদাতের সুযোগ করে দিতে পারি। তাদের কষ্ট কমাতে পারি। এতে তাদেরও লাভ হয়। আমারও লাভ হয়। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।