Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নিত্য যানজটে বিপর্যস্ত জীবন

বিমানবন্দর টু গাজীপুর ‘বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট’ প্রকল্প ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে দাবি কর্তৃপক্ষের মোট ব্যয় ৪ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা : ভুক্তভোগীদের এমন উদাসীন উন্নয়ন কাম্য নয়

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০২২, ১২:০৬ এএম

রাজধানী ঢাকার হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত দেশের প্রথম বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ চলছে। ধীর গতিতে কাজের কারণে দেশের অন্যতম ব্যস্ত মহাসড়কে প্রতিদিন মহাযানজট লেগেই যাচ্ছে। গাজীপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, জামালপুর জেলাসহ আশপাশের জেলা থেকে যারা এ রোডে ঢাকায় যাতায়াত করেন প্রতিদিন তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে আটকে থাকতে হচ্ছে। উন্নয়ন কাজ এমন ভাবে করা হচ্ছে যে যানবাহনের পাশাপাশি মানুষের হায়ে হেঁটে চলাফেরাও দায়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত মহাসড়কে নর্দমা করে রাখা হয়েছে। দায়িত্বশীলদের এই উদাসীনতায় প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, টঙ্গী এবং আশপাশে বসবাসকারী মানুষ যানজটের কারণে প্রতিদিন কয়েকমাইল পায়ে হেটে এসে গণপরিবহণে উঠেন। ভুক্তভোগীরা বলছেন, পায়ে হেঁটে যে পথ ১০ মিনিটে যাওয়া যায়, যানবাহনে সে পথ পাড় হতে এক ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের এ নিয়ে তাগাদা দেয়ার পরও তারা কর্ণপাত করছেন না। মানুষের ভোগান্তি কষ্ট দেখে যেন ওরা প্রকল্পের কাজে আরো ঢিলেমি দিচ্ছেন। আবদুল্লাহপুর থেকে টঙ্গী এলাকায় কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, এই যানজট দুর্ভোগকে তারা নিয়তি হিসেবে নিচ্ছেন। উন্নয়নের নামে জনভোগান্তি তাদের প্রত্যাহিত জীবন বিষিয়ে তুলেছে বলে জানান।

যানজট নিরসন ও সড়ক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে ঢাকা হজরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত দেশের প্রথম বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এ প্রকল্পে ইতোমধ্যেই নানান উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রকল্পের উন্নয়নে চলমান রয়েছে নির্মাণকাজ। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে প্রকল্পটির কাজ। এখন পর্যন্ত মোট ব্যয় ৪ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে সড়কে অনেকটাই শৃঙ্খলা ফেরাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। চীনের জিয়াংশু প্রভিন্সিয়াল ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড ও গেজুবা গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড পৃথকভাবে বাস্তবায়ন করছে বিআরটি প্রকল্প।

স্থানীয়রা জানান, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজে ধীরগতির কারণে এ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। কাজের সঠিক পরিকল্পনার অভাবে ছয়-সাত বছর ধরে গাজীপুরবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রকল্পটি। সারা বছরই গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। বৃষ্টির দিনে খানাখন্দগুলো বড় হয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়। শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালিতে একাকার হয়ে হয়ে যায়। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এ ছাড়া মহাসড়কের মাঝে বিআরটির নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখায় সড়কটি সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। কোন কোন জায়গায় পাশের রাস্তা বড় করা হলেও সবটুকু আর যানবাহন চলাচলের উপযোগী নয়।

টঙ্গীর এলাকার বাসিন্দা মনসুর আহমেদ বলেন, বিআরটি প্রকল্পে কাজের কারণে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত পুরো সড়কেই সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। এই যানজট শুধু যে অফিস খোলার দিন তা নয়। সপ্তাহের সাতদিনই এই সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। জরুরি কাজে কোথাও বের হলে ঠিক সময়ে ফিরতে পারি না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে আটকে থাকা যাত্রীরা পোহাচ্ছেন অসহনীয় দুর্ভোগ। তবে আমাদের আশা এই প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি হয়ে গেলে হয়তো সুফল ভোগ করবো।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বাবর আলী বলেন, রাস্তার কাজের জন্য যানজটের প্রভাব পড়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক এবং বাইপাস সড়কে। ভাওয়াল কলেজের সামনে থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত যানজট থাকে। প্রত্যেকটা দিনই এমন যানজটের কারণে আমরা অস্থির। আর ধুলাবালিতে এই এলাকায় ব্যবসা করা যায় না।

একটি মাইক্রোবাসের চালক শাকিল বলেন, এই রাস্তা দিয়ে আমি খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া আসিরা। কারণ এই রাস্তায় সবদিনই যানজট লেগে থাকে। একবার যানজট লাগলে আর শেষ হয় না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকতে হয়। মাঝে মাঝে রাস্তা খারাপের কারণে গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। এতে সময় ও অর্থ দুইই নষ্ট হয়।

নির্মাণকাজে ধীরগতির কারণে ভোগান্তি বেড়েছে এই পথে চলাচলকারী যাত্রী ও এলাকাবাসীর। এরমধ্যে আবার প্রকল্পটিতে দেখা দিয়েছে অর্থ সঙ্কট। প্রকল্পের দুই চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগান দিতে পারছে না। ফলে ধীরগতিতে চলা এ প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল আরো দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিআরটি প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঠিকাদারদের অর্থ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা। বিআরটি প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থ সঙ্কটের বিষয়টি নিয়ে ১৫ মার্চ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে অনুষ্ঠিত এক সভায়ও আলোচনা হয়। সভায় জানানো হয়, ঠিকাদাররা প্রকল্পটিতে পর্যাপ্ত অর্থের সঙ্কুলান করতে পারছেন না। প্রকল্পটির অগ্রগতি স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে বিষয়টি বর্তমানে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে এডিবির কাছ থেকে অতিরিক্ত ১৮৭ মিলিয়ন ডলার দ্রুত সরবরাহের তাগিদ দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা।

বিআরটি প্রকল্পের চলমান নির্মাণ কাজের কারণে বর্ষায় যেন কোনভাবেই জনদুর্ভোগ না হয় সে দিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে ইতোমধ্যে প্রকল্পের যে সব স্থানে পাইলিং, গার্ডার স্থাপনসহ অন্যান্য নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে এবং ভারী কনস্ট্রাকশন ইক্যুইপমেন্ট আর ব্যবহার হবে না এমন সব স্থানে রাস্তার প্রশস্তকরণের মাধ্যমে স্থায়ী কাজ চলমান রয়েছে।
প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন ত্বরান্বিতকরণের লক্ষ্যে প্রকল্পের ঠিকাদার, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে প্রকল্পের উত্তরা অফিসে ইতোমধ্যে সচিব, সেতু বিভাগ এবং নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এর সভাপতিত্বে একটি সভা করা হয়েছে।

বিআরটি প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সঙ্গে বেশকিছু এলাকার মধ্যে দ্রুত, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। প্রকল্পের আওতায় সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেডসহ ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার বিআরটি লেন, ১০ লেন বিশিষ্ট টঙ্গী সেতু পুননির্মাণ, সাতটি ফ্লাইওভার, একটি বাস টার্মিনাল, ১১৩টি সংযোগ সড়ক উন্নয়ন, ২৪ কিলোমিটার উচ্চক্ষমতার ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে।

বিআরটি প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, গাজীপুর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়কে বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলছে। ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কয়েক দফা প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুনে শেষ করার কথা রয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। রিভাইজড স্ট্র্যাট্যাজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান ২০১৬ অনুযায়ী, ঢাকা শহরের গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে ২০৩৫ সাল নাগাদ ২টি বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট লাইন এবং ৫টি মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট লাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে বিআরটি লাইন ৩ এর উত্তর অংশের গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। একই সাথে বিআরটি লাইন ৩ এর দক্ষিণ অংশের বিমানবন্দর থেকে মহাখালী পর্যন্ত ডিটেইল্ড ডিজাইন সম্পন্ন করা হয়েছে এবং বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নির্মাণাধীন (গাজীপুর-বিমানবন্দর) বিআরটি লাইন ৩ এর উত্তর অংশের দৈর্ঘ্য হবে ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার। বিমানবন্দর থেকে শিববাড়ি গাজীপুর টার্মিনাল পর্যন্ত এ লাইনে ২৫টি বিআরটি স্টেশন থাকবে।

২০১২ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়ে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট : গাজীপুর-এয়ারপোর্ট বিআরটি প্রকল্প। শুরুতে নির্মাণ ব্যয় ছিল ২ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। ধীরগতির কারণে ব্যয় ও মেয়াদ দুইই বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। বর্ধিত মেয়াদের শেষ প্রান্তে চলে এলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৭৫ শতাংশ। এ অবস্থায় আরেক দফা প্রকল্পটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই মধ্যে একটি সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী, প্রকল্পটির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে আরো দেড় বছর। অর্থাৎ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটি প্রকল্প। সঙ্গে ব্যয় আরো ২৬৮ কোটি টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন হলে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াবে ৪ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা।

সরেজমিন দেখা গেছে, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের সামনে ওভারব্রিজে দুটি প্লাক্যার্ড স্থাপন করেছে ঢাকা বাস র‌্যাপিড ট্র্যানজিট কর্তৃপক্ষ। দুই প্ল্যাকার্ডেই আছে আকর্ষণীয় প্রতিশ্রুতি। বিআরটি লেনে প্রতি ৩০ সেকেন্ড অন্তর বাস চলবে। বিআরটি দিয়ে মাত্র ৩৫-৪০ মিনিটে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর যেতে পারবেন যাত্রীরা। এছাড়াও রয়েছে আরও কিছু প্রতিশ্রুতি। সুষ্ঠু ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত করিডোরের ৬টি ইন্টারসেকশনে গ্রেড সেপারেশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং এজন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে ৬টি ফ্লাইওভার নির্মাণাধীন রয়েছে। বিমানবন্দর ইন্টারসেকশনে উত্তর ও দক্ষিণগামী যানবাহনের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে রাস্তার উভয় পাশে ২টি পৃথক ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এখানে বিআরটি স্টেশনটি ২টি ফ্লাইওভারের মধ্যবর্তী স্থানে নির্মিত হবে এবং বিআরটি বাসসমূহের জন্যে ইউ-টার্নের ব্যবস্থা থাকবে।

এই প্রকল্পে বিআরটি করিডোর নির্মাণের সাথে সাথে উভয় পাশের সাধারণ রাস্তার লেন, ধীরগতি যানবাহন চলাচলের পৃথক লেন ও পথচারী চলাচলের ফুটপাথের উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ কাজও চলমান রয়েছে। এই মহাসড়ক হয়ে ঢাকা থেকে গাজীপুর যাতায়াত যাত্রীদের জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়ক এখন অসংখ্য খানাখন্দে ভর্তি। ফলে যাত্রীদের নিত্য দুর্ভোগের সাথে সাথে আশেপাশের এলাকার ব্যবসায়ীরাও প্রতিনিয়ত বিপুল আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। কোন কোন জায়গায় দুর্ভোগ থেকে বাঁচতে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পিচের কার্পেটিং দিয়ে প্রলেপ দেয়া হচ্ছে। উত্তরা ১ নং সেক্টরের সামনের রাস্তায় কাজ করছেন কয়েকজন লোক। রাস্তার মাঝে আগের ওভারব্রিজটি দিয়ে লোকজন পারাপার হচ্ছেন। এর পাশেই সম্প্রসারণ করা রাস্তা দিয়ে চলাচল করে গাড়ি। তবে রাস্তার কয়েকটি জায়গায় ফ্লাইওভারের বড় বড় সøাব রাখার কারণে সঙ্কুচিত হয়ে গেছে রাস্তা।

এমনভাবে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বেশকয়েকটি স্থানে বিআরটি প্রকল্পের মালামাল রাখা হয়েছে। উত্তরার বিএনএস টাওয়ারের সামনে থেকে শুরু হয়েছে এই প্রকল্পের সবচেয়ে বড় ফ্লাইওভারের কাজ। এখানে কয়েকটি বেহেকো, ট্রাক ও অন্যান্য যন্ত্রদানবের সাহায্যে কাজে ব্যস্ত শ্রমিক ও কর্মকর্তারা। এই ফ্লাইওভারের পিলারসহ অনেক কাজ ইতোমধ্যে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। এখন উপরে বসানো হবে সøাব। টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকায় এই প্রকল্পের কাজের জন্য সবগুলো সড়কের আবস্থাই বেহাল। দূরপাল্লার যানবাহনসহ স্থানীয় বাস, ট্রাক, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, অটোরিকশা, রিকশা ইত্যাদির জট লেগেই থাকে। টঙ্গী কলেজ গেইট, বাসন সড়কসহ কয়েকটি স্থানে রাস্তার মাঝেই চলছে বাস-বে এর নির্মাণ কাজ। গাজীপুরা ও সাইনবোর্ডে ২টি ইউটার্ন ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ চলমান। ঢাকা বাইপাস রোডের যানবাহনের নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন গতিশীলতার জন্য ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে ২টি বিআরটি লেনসহ ৬ লেনবিশিষ্ট ভোগরা ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলছে।

১৯৭১ সালের গাজীপুরে হয়েছিল প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ। তারই স্মৃতিবিজড়িত চান্দনা চৌরাস্তায় তৈরি করা হয় ভাস্কর্য। জাগ্রত চৌরঙ্গী নামে পরিচিত এই ভাস্কর্যের প্রকৃত নাম মুক্তিযোদ্ধা। ওই স্থান ঘিরে চলছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ। তাতেই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় স্থান ও ভাস্কর্যটি চলে যাচ্ছে দৃষ্টির আড়ালে।


ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম বলেন, বিআরটি প্রকল্পের একমাত্র বড় সমস্যা ঠিকাদারদের অর্থ সঙ্কট। অর্থ সঙ্কট দ্রুতই কাটিয়ে উঠবে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রথমে পরিকল্পনা ছিল বিআরটি প্রকল্পের জন্য ডিজেলচালিত বাস কেনা হবে। এখন বিদ্যুৎ ”ালিত বাস কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বেড়েছে বাসের সংখ্যাও। এর বাইরে বিআরটি কোম্পানির জন্য নিজস্ব ভবন নির্মাণ, বিশেষজ্ঞদের পেছনে ব্যয় বৃদ্ধি, নতুন করে জমি অধিগ্রহণ, বিদ্যমান সড়ক মেরামতসহ বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে। এ কারণে ব্যয় বাড়াতে হচ্ছে। এরই মধ্যে দাতা সংস্থাগুলোর অনুমতি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের জমা দেয়া গ্যারান্টির টাকা থেকে অগ্রিম পরিশোধ শুরু করেছি। এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। তাদের কাজে গতি এসেছে। অন্যদিকে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের অধীনে কর্মরত ঠিকাদার চায়না গেজুবা গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডকেও একইভাবে অগ্রিম অর্থ পরিশোধের জন্য দাতা সংস্থাগুলো অনুমতি দিয়েছে।



 

Show all comments
  • Nahida Khanam ২৩ মার্চ, ২০২২, ৪:৩৮ এএম says : 0
    উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Tareq ২৩ মার্চ, ২০২২, ৪:২৯ এএম says : 0
    তীব্র যানজট, গণপরিবহন চালকদের আচরণ, নানা পর্যায়ের মানুষের অসহিষ্ণুতায় মনে হচ্ছে গ্র্যাজুয়েশনের পরপর দেশের বাইরে চলে গেলেই ভালো হতো! তাহলে ভন্ডদের অকার্যকর শহরে জীবন যাপনের চাপ নিতে হতো না!
    Total Reply(0) Reply
  • Sarwar Hossain Tulu ২৩ মার্চ, ২০২২, ৪:৩০ এএম says : 0
    তাদের ত কোনো সমস্যা হয় না। তাদের আছে ক্ষমতা, ফ্ল্যাগ আর সাইরেন। আর মাঝে মাঝে উল্টো দিকে গাড়ী চালানোর অভ্যাস।
    Total Reply(0) Reply
  • Rabeya Akter Rikta ২৩ মার্চ, ২০২২, ৪:৩১ এএম says : 0
    রাস্তায় ভিআইপিদের স্পেশালি চলাচল বন্ধ করলে পনেরো দিনের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি !
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ২৩ মার্চ, ২০২২, ১২:০৫ পিএম says : 0
    আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের জন্য আইন রচনা করে দিয়েছেন আর এই আইন মানলে সব ধরনের বিপদ আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে এবং সব ধরনের সমস্যা থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে তখন যানজট থাকবে না
    Total Reply(0) Reply
  • Ummea Bristy ২৩ মার্চ, ২০২২, ৪:২৮ এএম says : 0
    Totally depressed, everyday same situation!!
    Total Reply(0) Reply
  • Mithun Mistry ২৩ মার্চ, ২০২২, ৪:২৮ এএম says : 0
    ধুলি মাখা এই শহরের মশা আর জ্যামকে যে সাদরে গ্রহণ করবে কেবল মাত্র সেই সফলতার দেখা পাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আরমান ২৩ মার্চ, ২০২২, ৪:২৬ এএম says : 0
    বছরের পর বছর ধরে দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত মহাসড়কে নর্দমা করে রাখা হয়েছে। দায়িত্বশীলদের এই উদাসীনতায় প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • গোলাম কাদের ২৩ মার্চ, ২০২২, ৩:১২ এএম says : 0
    আমাদের দেশে কর্তাব্যক্তিরা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে একটুও চিন্তা করে না
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যানজট

১৯ জানুয়ারি, ২০২৩
৯ জানুয়ারি, ২০২৩
১৯ ডিসেম্বর, ২০২২
২৭ নভেম্বর, ২০২২
২৯ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ