Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হেফাজতের নেতা মুফতি ইজাহারুলের কারাদণ্ড

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০২২, ২:৩৪ পিএম | আপডেট : ৯:০৭ পিএম, ২০ মার্চ, ২০২২

সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল না করায় দুদকের মামলায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরীকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।


আজ রোববার চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুনসী আবদুল মজিদ এ রায় দেন। ইজাহারুল ইসলাম চট্টগ্রামের লালখান বাজারের আল জামেয়াতুল ইসলামিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। রায় ঘোষণার পর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।


আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. মুছা জানান, দুদকের মামলার আসামি ইজাহারুল ইসলামকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও দুই মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
সম্পদের হিসাব না দেওয়ায় হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ও ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের নেতা ইজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
নগরীর খুলশী থানায় মামলাটি দায়ের করেন বিভাগীয় দুর্নীতি দমন কমিশন-১ এর উপ সহকারী পরিচালক মো. সিরাজুল হক।

মুফতি ইজহারুল ইসলামের পরিচয়


এক সময় বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট শরিক শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক ও মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন মুফতি ইজহারুল ইসলাম। ২০০১ সালে জোট সরকার গঠিত হওয়ার পর ইসলামী ঐক্যজোট ভেঙে গেলে তিনি মুফতি আমিনীর নেতৃত্বাধীন অংশের মহাসচিব হন। পরবর্তীতে তিনি নিজেই ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান হয়ে যান। এরপর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে অংশ নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ১/১১ এর সময় জোট সরকারের কঠোর সমালোচক হিসেবে পর্দায় আর্বিভূত হন।
২০১৩ সালের ১০ জুলাই চট্টগ্রামের লালখান বাজার মাদরাসায় ভয়াবহ গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন নিহত হয়। আহত হয় বেশ কয়েকজন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৩ সালের অক্টোবরে ইজহারপুত্র মুফতি হারুনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক হারুনের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দি ছিলেন।


মুফতি ইজহারকেও পরবর্তীতে একই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। তিনিও দীর্ঘ সময় কারাগারে ছিলেন। গ্রেফতারের পর গোয়েন্দারা তাকে সাংবাদিকদের সামনে নিয়ে এলে তিনি দুই আঙুল তুলে ভি-চিহ্ন দেখিয়ে বলেন, আমি মহাজোটের প্রতিষ্ঠাতা।


লালখান বাজার মাদরাসায় গ্রেনেড বিস্ফোরণের পরপরই পালিয়ে যায় মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী। প্রায় দুই বছর পলাতক থাকার পর গত কয়েকদিন আগে তিনি লালখান বাজার মাদরাসায় ফিরে আসেন। মাদরাসায় গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ের করা তিনটি মামলায় মুফতি ইজহার ও তার ছেলে হারুন ইজহারসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়। বিস্ফোরক, এসিড নিয়ন্ত্রণ আইন ও একটি হত্যাসহ তিনটি মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। মামলাগুলোতে জামিন না নেয়ায় ইতোমধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে ইজহারের বিরুদ্ধে।
সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মুফ্তি ইজাহারুল ইসলামের পরিচালনাধীন লালখান বাজারে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জামিয়াতুল উলুম আল-ইসলামিয়া মাদরাসা ঘিরে গড়ে উঠেছিল আন্তঃদেশীয় জঙ্গিদের ঘাঁটি। যেখান থেকে ২০০৯ সালের শেষ দিকে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস ও ভারতীয় হাইকমিশনার হামলার ছক তৈরি হয়েছিল। এ হামলা পরকিল্পনা করেছিল ভারতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামী জঙ্গি সংগঠন লস্কর ই-তৈয়্যবা। এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ইজহারুল ইসলামের ছেলে হারুন ইজহার। ফের সেখান থেকেই বড় ধরনের জঙ্গি হামলার ছক কষা হয়েছিল বলে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছে খবর রয়েছে।


২০০৯ সালের শেষ দিকে খবর পাওয়া যায়, যে কোনো সময় ঢাকাস্থ দুটি দূতাবাসে জঙ্গি হামলা হতে পারে। এ তথ্যের ভিত্তিতে ও একটি টেলিফোন কলের সূত্র ধরে জানা গেছে, হামলার ছক মুফতি ইজহারের মাদরাসায় বসেই করা হয়েছিল। এর সঙ্গে যুক্ত আন্তঃদেশীয় কয়েকজন জঙ্গি মুফতি ইজহারুলের মাদরাসায় অবস্থান করছিলেন। এ তথ্য পেয়েই গোয়েন্দা পুলিশ ওই মাদরাসায় অভিযান চালায়, গ্রেফতার করা হয় ইজহারপুত্র হারুন ইজহার এবং দক্ষিণ ভারতীয় সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়্যবার সদস্য ভারতীয় নাগরিক শহিদুল, সালাম, সুজন ও আল আমিন ওরফে মইফুলকে।


সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ওই অভিযানকালে গোয়েন্দা পুলিশ হারুন ইজহারের কক্ষ থেকে একটি ল্যাপটপ জব্দ করে। পরবর্তীতে ওই ল্যাপটপে মার্কিন ও ভারতীয় হাইকমিশনার হামলার তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়। পুলিশের অভিযান শুরুর আগে সেখান থেকে পালিয়ে যায় লস্কর-ই-তৈয়্যবার অন্যতম শীর্ষনেতা টি নাসির ও সরফরাজ। একই বছরের ৬ নভেম্বর কুমিরা সীমান্ত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে দুই ভারতীয় জঙ্গি গ্রেফতার হয়। ওই দুই জঙ্গি ভারতের বেঙ্গালুরু কম্পিউটার সিটিতে বোমা হামলাসহ বেশ কয়েকটি বড় সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত। তারা ছিলেন ভারতে মোস্ট ওয়ানটেড। গ্রেফতার এড়াতে দুই জঙ্গি সদস্য দুবাই হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় মুফতি ইজহারের মাদরাসায়।


এর আগে রাউজান রাবার বাগান গোদারপাড় এলাকায় পাহাড়ের চূড়ায় হুজির প্রশিক্ষণকালে অভিযান চালিয়ে জিহাদি বই ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করে র‌্যাব। এ ঘটনায় বিস্ফোরক ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। দুটি মামলায় মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরীসহ আটজনকে আসামি করা হয়।


২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর হরকাতুল জিহাদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগের র‌্যাব-৭ এর হাতে দুই সহযোগীসহ গ্রেফতার হয়েছিলেন মুফতি ইজহারুল ইসলাম। হরকাতুল জিহাদের (হুজি) তৎকালীন আমির মাওলানা ইয়াহিয়া ওরফে বর্দ্দা (৪৬) এবং তার দুই সহযোগী মো. বাহাউদ্দিন (২২) ও ইয়ার মোহাম্মদকে (৫০) গ্রেফতার করে র‌্যাব। র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইয়াহিয়া জানান, বৃহত্তর চট্টগ্রামে হুজির আধিপত্য বিস্তারের জন্য মুফতি ইজহারুল ইসলামের লালখান বাজার মাদরাসায় সাংগঠনিক অফিস খোলা হয়েছে। ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রয়াত কবি শামসুর রাহমানের প্রাণনাশের চেষ্টার অভিযোগে আটক হওয়া কয়েকজন জঙ্গি জানায়- তারা মুফতি ইজহারুল ইসলামের লালখান বাজার মাদরাসাতেই ট্রেনিং নিয়েছিল।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ