দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মিযানুর রহমান জামীল
দান হলো দেয়া, বিলানো। দুনিয়ার কোনো বিনিময় ছাড়াই যে জিনিস অন্যকে নিঃস্বার্থভাবে দেয়া হয় তাকে বলা হয় দান। ঈমান আমল ব্যতীত পরকালে সম্পদ সঞ্চয়ের অন্যতম মাধ্যম হলো অসহায়ের সহায় এবং অভাবগ্রস্তের অভাব দূর করা, ভিক্ষুককে ভিক্ষা দেয়া, আর এটা হয়ে থাকে দান করার মাধ্যমে। দানের মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধি পায়, গচ্ছিত সম্পদ হেফাজতে থাকে। বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বান্দার দান তার উপর আল্লাহর ক্রোধকে সংবরণ করে। তাই এমনভাবে দান করা উচিত, যেন ডান হাতের দান বাম হাতেও জানতে না পারে। অর্থাৎ কাউকে দেখানোর জন্য দান করা হলে সে দান অহংকারের কারণ হবে। কাজেই সে দিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখা বাঞ্ছনীয়।
শত নেকি অর্জনের নিমিত্তে অভাবিদের প্রতি দানের হাত প্রসারে পবিত্র কোরআনে সূরা বাকারার ১৬১ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছেÑ ‘যারা নিজেদের ধনৈশ্বর্য আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের উপমা একটি শস্য বীজ, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে একশত শস্যকণা। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ প্রিয় জিনিস ব্যয় করার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা চির অবহিত আর কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পুণ্য লাভ করতেও পারবে না যতক্ষণ প্রিয় জিনিস থেকে দান না করা হবে। সে ব্যাপারে সূরা আলে ইমরানের ৯২ নং আয়াতে বলা হয়েছেÑ তোমরা যা ভালোবাস তা হতে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করবে না। তোমরা যা কিছু ব্যয় কর আল্লাহ সে ব্যাপারে সবিশেষ অবহিত।’ আল্লাহ তায়ালা অভাবি, দুর্বল ও অসহায়-অনাথ ব্যক্তিদের নিরপরাধ সাব্যস্ত করে পবিত্র কোরআনে সূরা তাওবার ৯১ নং আয়াতে বলেনÑ ‘যারা দুর্বল, যারা পীড়িত এবং যারা অর্থ সাহায্যে অসমর্থ, তাদের কোনো অপরাধ নাই, যদি আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি তাদের অবিমিশ্রিত অনুরাগ থাকে, যারা সৎ কর্মপরায়ণ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো হেতু নাই; আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’ হাদিসে এসেছে যে দুনিয়াতে কোনো মানুষের অভাব দূর করবে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তার অভাব দূর করবেন।’ সাহাবায়ে কেরামের যামানায় কোনো বিক্ষুকের আগমন ঘটলে তারা মারহাবা ও অভিনন্দন জানাতেন। এ ব্যাপারে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে ‘হযরত আলী ইবনে হুসাইন (রাযী.) এর নিকট যখন কোনো ভিক্ষুক আসতো তখন তাকে মারহাবা ও স্বাগতম জানাতেন এবং বলতেন, এরা আমার সম্পদ ইহকাল থেকে পরকালে স্থানান্তর করে দিচ্ছে। (কিতাবুল বির, পৃ: ২১৬) দুনিয়ার বুকে অনেক ভিক্ষুকই আছেন যারা আসলে কোনো ভিক্ষুক নয়। যদিও তারা মানুষের রূপ ধরে আসেন। কারণ এর দ্বারা মানুষকে আল্লাহ তাআলা তাদের প্রাপ্ত নেয়ামতের উপর পরীক্ষ চালিয়ে থাকেন। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাযী.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) এরশাদ করেন, মানুষের নিকট কখনো কখনো এমন ভিক্ষুক আসে যারা মানবও নয় জিনও নয় বরং তারা আল্লাহর ফেরেশতা যাকে দিয়ে মানুষকে খোদাপ্রদত্ত নেয়ামতের ওপর পরীক্ষা চালানো হয় যে তারা কোন ধরণের আচরণ করে। (কিতাবুল বির, পৃ: ২১৬) হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাযী.) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) ফরমান, যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে প্রার্থনা করবে, তাকে আশ্রয় দান করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে সাহায্য তলব করবে তাকে সাহায্য করবে। যে ব্যক্তি তোমাকে উপকার করবে তার প্রতিদান দেবে। যদি কোনো প্রতিদান দিতে না পার তাহলে তার জন্য দোয়া করতে থাক, যতদিন পর্যন্ত না তোমার বিশ্বাস জন্মাবে যে, তুমি তার প্রতিদান পূর্ণ করে দিয়েছ। (আবু দাউদ, পৃ : ২৩৫) আল্লাহর নামে ভিক্ষা চাওয়ার পরও অনেকে এটাকে প্রতারণা-ধোকা ইত্যাদি বলে কেটে পড়েন। অথচ দান করা হলে তা কোনোদিন বিফলে যাওয়ার অবকাশ নেই। কারণ যে ধোকা দিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত সেই হবে। আর যে দান করেছে সে পরকালে বিজয়ী হবে। এ ক্ষেত্রে হযরত আব্দল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেন, মানুষের মধ্যে নিকৃষ্ট ব্যক্তি কে বলব কি? আমরা বললাম জি, হ্যাঁ! রাসূল (সা.) বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর দোহাই দিয়ে চায় এবং তাকে যে না দেয়। (নাসায়ী পৃ : ২৫৮ ভিক্ষুককে ফিরিয়ে না দেয়ার ব্যাপারেও হাদিসে অনেক সাহাবায়ে কেরামকে লক্ষ্য করে উম্মতের নির্দেশনার জন্য উৎসাহমূলক আলোচনা এসেছে। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।