Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ময়মনসিংহে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী এনামুল করিম ফরিদের ১০ কোটি টাকা বাণিজ্য

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০২২, ৬:১২ পিএম

ময়মনসিংহে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী এনামুল করিম ফরিদ ১০ কোটি টাকার মালিক হয়েছে। গত ৭ বছরে তিনি অবৈধ গ্যাস সংযোগের মাধ্যমে এই ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ঘটনাটি দূর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করলেই সত্যতা মিলবে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী একাধিক পরিবার।
সূত্রমতে, তিতাস গ্যাস ময়মনসিংহের আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এনামুল করিম ফরিদ দুদকের ধরা খেলেও বহুর কূটকৌশলে সেখান থেকে পার পেয়ে আবারও নতুন সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তিনি কিছুদিন ভালুকায় কর্মরত থাকলেও আবারও তিনি ময়মনসিংহ আঞ্চলিক অফিসে যোগদান করেছেন। বর্তমানে তিনি অবৈধ গ্যাস সংযোগে জ্বালানী মন্ত্রনালয় কতৃক গঠিত ভিজিল্যান্স টিম প্রধান হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। এ ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে তিনি ময়মনসিংহের শতাধিক বহুতল ভবনে অভিযান চালিয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছেন।
জানা যায়, ২০১৫ সালে সরকারি ভাবে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর ময়মনসিংহ নগরীতে গড়ে উঠেছে শত শত বহুতল ভবন। অথচ ওই নবনির্মিত ভবনগুলো গ্যাস সংযোগ দিয়েই চলছে সকল কার্যক্রম।
অভিযোগ উঠেছে, তিতাস গ্যাস ময়মনসিংহের আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এনামুল করিম ফরিদ এর আগে ময়মনসিংহ কর্মরত থাকা অবস্থায় ওইসব বহুতল ভবনে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ স্থাপন করে দিয়েছেন। এখন তিনিই ওইসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার দ্বায়িত্ব পেয়ে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য ভিজিল্যান্স টিম প্রধান হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। এতেও শুরু হয়েছে নতুন বাণিজ্য।
নগরীর ফ্রেন্ডস টাওয়ারের মালিক ও একাধিক ভাড়াটিয়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ২০১৫ সালে উপ-সহকারী প্রকৌশলী এনামুল করিম ফরিদ আমাদের ভবনে ২২টি অবৈধ সংযোগ দেয়। এ সময় তিনি এক বছরের চুক্তি করে ১০ লাখ টাকা নেন। এরপর ৬ মাস অন্তর অন্তর ২ লাখ টাকা করে গ্যাস বিল হিসেবে অবৈধ ভাবে আদায় করছেন।
তাদের আরও অভিযোগ, উপ-সহকারী প্রকৌশলী এনামুল করিম ফরিদ ময়মনসিংহ আঞ্চলিক অফিস থেকে বদলী হয়ে ভালুকায় চলে গেলে তার অনুসারীরা এই সংযোগ গুলো বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরে বাধ্য হয়ে আবারও টাকার বিনিময়ে এ সংযোগ গুলো লাগানো হয়েছে।
অফিস সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৭ ফেব্রয়ারি থেকে ভিজিল্যান্স টিম অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন কাজে মাঠে নামে। এই টিমে যৌথ ভাবে দ্বায়িত্ব পালন করেন ময়মনসিংহ আঞ্চলিক অফিসের পরিকল্পনা বিভাগের ব্যবস্থাপক শওকত আলী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী এনামুল করিম ফরিদ। এ অভিযান পরিচালনার মাত্র ৩দিনের মাথায় গত ১০ ফেব্রয়ারি নগরীর অবৈধ গ্যাস সংযোগ রক্ষা ও বিচ্ছিন্নকরণ বাণিজ্যের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে এই দুই কর্মকর্তার মধ্যে বাকবিতান্ডের ঘটনা ঘটে। এরপর ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ভিজিল্যান্স টিমের একক কর্তৃত্ব পান উপ-সহকারী প্রকৌশলী এনামুল করিম ফরিদ। এছাড়াও তিনি একটি অডিট টিমের প্রধান হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন।
বর্তমানে তিনি এসব টিমে অভিযান চালিয়ে নগরীর শত শত ভবন মালিক ও গ্রাহকদের কাছ থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্নকরনের ভয় দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন একাধিক সূত্র।
নগরীর একাডেমি রোড এলাকার বাসিন্দা আছিয়া খাতুন জানান, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আমার বাসায় ডুকে খারাপ আচরন করে। আমি এর প্রতিবাদ করায় সে আমার বাসায় বৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিবে বলে হুমকি দেয়।
অভিযোগ রয়েছে, নগরীর তৈমুর এক্সেল টাওয়ার, কলেজ রোডের কিং স্টার টাওয়ার, ফ্রেন্ডস টাওয়ার সহ অসংখ্য বহুতল ভবনে চলছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ। আর এসব ভবন থেকে প্রতি মাসে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এসবই যাচ্ছে উপ-সহকারী প্রকৌশলী এনামুল করিম ফরিদের পকেটে।
তবে এসব বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও উপ-সহকারী প্রকৌশলী এনামুল করিম ফরিদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ