বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
মেজর (অব.) মিজানুর রহমান
বাংলাদেশের জনগণের নিকট ৭ নভেম্বর একটি স্বর্ণালী দিন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ষড়যন্ত্রকারীরা যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে ছিনিমিনি খেলছিল তখন এ দেশের দেশপ্রেমিক সৈনিক ও সাধারণ জনগণ ঐ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং ৭ নভেম্বর চক্রান্তকারীদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে। সে সময় সমগ্র ঢাকা শহর ও ক্যান্টনমেন্টে এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। হাজার হাজার সৈনিক ও সাধারণ জনতা এক সঙ্গে উচ্চারণ করে “আল্লাহু আকবর, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ”। ঠিক সেই মুহূর্তে জিয়াউর রহমান এদেশের জনগণ ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর নিকট ১৯৭১ সালেরই মতো স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হন। এরপর থেকেই দেশপ্রেমিক জনগণ প্রতিবছর ৭ নভেম্বরকে “জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস” হিসেবে উদযাপন করে আসছে। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান এদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ হয়ে গেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও অনুপ্রেরণাতেই সিপাহী-জনতার বিপ্লব সফল হয়েছিল।
সম্প্রতি কিছু প্রচার মাধ্যমে কতিপয় ব্যক্তিবর্গ ৭ নভেম্বরের বিপ্লব সম্বন্ধে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন এবং বর্তমান প্রজন্মের নিকট বিকৃত ইতিহাস উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে। তারা ঐ দিনকে সৈনিক হত্যা দিবস বলে প্রচারণা চালাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ঐদিন কোন সৈনিক নিহত হয়নি। কর্নেল তাহেরের মদদে সেসময় সৈনিক সংস্থার সদস্যরা অনেক অফিসারকে হত্যা করে দেশে এক অশান্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। মজার ব্যাপার হলো, ’৭৫-এর ৭ নভেম্বর মুখোমুখি স্বশস্ত্র অবস্থানে থাকা ব্যক্তিরা তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য আজ এক সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে। তাই বর্তমান প্রজন্মের নিকট সঠিক ইতিহাস উপস্থাপন করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশরফ ও তার কতিপয় অনুসারীরা সাধারণ সৈনিকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে তার বাসভবনে অন্তরীণ করে এবং জিয়াউর রহমানকে পদত্যাগে বাধ্য করে। পরবর্তীতে খালেদ মোশারফ নিজেকে সেনাপ্রধান হিসেবে ঘোষণা দেয় এবং তার সমর্থনে তার মা ও ভাই রাশেদ মোশারফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে এক মিছিল করে। কিন্তু দেশের জনগণ সেটিকে এক নতুন ষড়যন্ত্র হিসেবে মনে করে। তাই দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও সাধারণ জনগণ খালেদ মোশারফের এই পরিবর্তনকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করতে থাকে। ফলশ্রুতিতে ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতা খালেদ মোশারফের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং বিপ্লবের মাধ্যমে তাকে (খালেদ মোশারফ) উৎখাত করে জিয়াউর রহমানকে স্বপদে অর্থাৎ সেনাপ্রধান পদে বহাল করে। সে রাত্রে সাধারণ সৈনিকেরা জিয়াউর রহমানকে কাঁধে নিয়ে বিজয় মিছিল করে। সিপাহী জনতার সেই বিপ্লব ছিল স্বতঃস্ফূর্ত, অরাজনৈতিক এবং নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ। হাজার হাজার সৈনিক ও জনতা তখন “আল্লাহু আকবর, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ, সিপাহি জনতা ভাই ভাই” ইত্যাদি সেøাগান দেয়। প্রকৃতপক্ষে, ৭ নভেম্বর পরিবর্তনের নায়ক ছিল সিপাহী জনতা।
৭ নভেম্বরের বিপ্লবের সময় কর্নেল (অব.) তাহের জাসদের গণবাহিনী ও বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার লোকদের সেনানিবাসের অভ্যন্তরে অনুপ্রেবেশ ঘটায়। সে তার অনুগত প্রতিবিপ্লবীদের দ্বারা জিয়াউর রহমানকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে কৌশলে অপহরণ করে ঢাকা শহরে তাহেরের ভাই আবু ইউসুফের ৩৩৬নং এলিফেন্ট রোডের বাসায় নিয়ে আটক করার পরিকল্পনা করে। তাহের জেনারেল জিয়াউর রহমানকে আটক করে তার অর্থাৎ জিয়াউর রহমানের জনসমর্থনকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্র্তে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তন করে বিদ্যমান প্রতিরক্ষা বাহিনী বিলুপ্ত করে গণবাহিনী তৈরির পরিকল্পনা করেন এবং তা জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে রেডিওতে ঘোষণার ব্যবস্থা করেন। জেনারেল জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরের এই দেশবিরোধী চক্রান্তের বিষয় বুঝতে পেরে ৭ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা শহরে যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে জিয়াউর রহমান তাহেরের ইচ্ছা অনুযায়ী সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার ঘোষণা দিয়ে সেনাবাহিনী বিলুপ্ত করতেও রাজি হননি। এতে তাহের ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরের কথামত কাজ না করায় ৭ ও ৮ নভেম্বর জাসদের গণবাহিনী ও বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা ঢাকা সেনানিবাসের বিভিন্ন স্থানে হামলা করে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। ঐ রাত্রে তাহেরের প্ররোচণায় ১২ জন নিরাপরাধ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। সাধারণ সৈনিকদের ধারণা ছিল, জেনারেল জিয়াকে মুক্ত করার পরই সিপাহী বিদ্রোহ শেষ হয়ে যাবে, তারা ব্যারাকে ফিরে যাবে। কিন্তু বাইরের বিপ্লবী সৈনিক ও বিপ্লবী নেতাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন, অনেক গভীর। সিপাহী বিদ্রোহের রাতে তাহেরের নির্দেশে বহিরাগত জাসদ ক্যাডাররা খাকী জামা ও জুতা পরে সশস্ত্র অবস্থায় ঢাকা কেন্টনমেন্টে ঢুকে পড়ে এবং জাসদের সমর্থক সৈনিকদের সঙ্গে একত্রিত হয়।
ক্যান্টনমেন্টের সাধারণ জওয়ানদের সঙ্গে মিশে তারা অফিসারদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সেøাগান দেয়। জাসদের উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক শ্রেণিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা, যদিও কর্নেল তাহেরের লক্ষ্য ছিল অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল। কর্নেল তাহের তার ১ম পরিকল্পনায় ব্যর্থ হয়ে ৭ নভেম্বর দিবাগত রাত্রে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার সদস্যদের মাধ্যমে অনেক অফিসারকে হত্যা করে। তারা হলেন, মেজর আনোয়ার, মেজর আজিম, মেজর মহিউদ্দিন, ক্যাপ্টেন খালেক, ক্যাপ্টেন আনোয়ার, লে. সিকান্দার, লে. মুস্তাফিজ, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ওসমানের স্ত্রী মেজর ডা. হামিদা, বেগম মুজিব, মেজর করিম, লেডি ডাক্তার চেরী এবং অন্যান্য। এসময় বিটিভির অফিসার মুনিরুজ্জামানকেও বিপ্লবী সৈনিকরা হত্যা করে। সে সময় কর্নেল তাহের তার স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য জিয়াউর রহমানকেও হত্যার পরিকল্পনা করে।
তৎকালীন ঢাকা স্টেশন কমান্ডার লে. কর্নেল হামিদের ভাষায় “কর্নেল তাহেরের ইঙ্গিতে বিপ্লবী সৈন্যরা তখন একেবারে উল্টে যায়। বিপ্লবীরা জিয়াকেও হত্যা করার পরিকল্পনা করে।” এ সময় কর্নেল তাহেরের অনুসারীরা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে বহু লিফলেট বিতরণ করে সৈনিকদের অস্ত্র জমা দিতে নিষেধ করে ও জিয়াউর রহমানকে উৎখাত করার আহ্বান জানায়। এ সময় সে (তাহের) কিছু কিছু বিপথগামী সৈনিককে নিয়ে ৩৩৬নং এলিফ্যান্ট রোডে তার ভাইয়ের বাসায় মিটিং করে এবং স্বশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জিয়াকে উৎখাত করে দেশের ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা করে। ইতোমধ্যে জিয়াউর রহমান ঢাকা সেনানিবাসের প্রতিটি ইউনিট পরিদর্শন করে সৈনিকদের শৃঙ্খলার মধ্যে আনয়ন করেন এবং সবাই জিয়াউর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অস্ত্র-গোলাবারুদ জমা দিয়ে নিজ নিজ ব্যারাকে ফিরে যায়। তাহেরের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ভ-ুল হলে সে হিংস্র হয়ে উঠে এবং সেনা অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করে। সে সময় কর্নেল তাহের, তার ভাই আনোয়ার, বেলাল ও সার্জেন্ট আবু ইউসুফ, ইনু, সেনাবাহিনীর কতিপয় সদস্য ও অন্যান্যরা সামরিক অভ্যুত্থানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এক গোপন মিটিংয়ের আয়োজন করে। ঐ মিটিংয়ের প্রস্তুতিকালে ২৩ নভেম্বর ১৯৭৫ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে কর্নেল তাহের ও তার সঙ্গীরা গ্রেফতার হন (দৈনিক ইত্তেফাক, ২৪ নভেম্বর ১৯৭৫)।
২৩ নভেম্বর ১৯৭৫ কর্নেল তাহের গ্রেফতারের পর পরই তার আপন দুই ভাই- বাহার ও বেলাল ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার মি. সমর সেনকে অপহরণ করে জিম্মি করার পরিকল্পনা করে। উল্লেখ্য যে, সে সময় ভারতীয় হাইকমিশনারকে জিম্মি করলে ভারত সরকার তাদের রাষ্ট্রদূত উদ্ধারের অজুহাতে বাংলাদেশে সেনা অভিযান পরিচালনা করার সুযোগ পেত এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হতো। কিন্তু আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী যে, কর্নেল তাহেরের দুই ভাইসহ ৬ জন, ২৬ নভেম্বর ১৯৭৫ যখন ভারতীয় হাইকমিশনারকে অপহরণ করতে যায় তখন ভারতীয় দূতাবাসে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য ও নিরাপত্তারক্ষীরা গুলি বর্ষণ করলে কর্নেল তাহেরের আপন ছোট ভাই বাহারসহ হারুন, মাসুদ, বাচ্চু- এই ৪ জন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। আর তাহেরের অপর ভাই বেলাল ও সবুজ গুলিতে আহত হয়ে গ্রেফতার হয় (দৈনিক ইত্তেফাক, ২৭ নভেম্বর ১৯৭৫)। কর্নেল তাহের তার নিজের ক্ষমতা লাভের জন্য জিয়াউর রহমানকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন কিন্তু জিয়াউর রহমান এই দেশবিরোধী কর্মকা-ে তাহেরকে প্রশ্রয় না দেয়াতে, তাহের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার ষড়যন্ত্র করেছিল। ফলে তৎকালীন সরকার দেশদ্রোহীতার অপরাধে তাহেরের বিচার করে ও তাকে মৃত্যুদ- দেয়। কর্নেল তাহের আর জাসদ বাংলাদেশের মানুষকে তাদের স্বাভাবিক ইচ্ছার বাইরে ঠেলে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। সে কারণেই তারা ব্যর্থ হয়েছে।
খালেদ মোশারফ ৩ নভেম্বর ১৯৭৫ তারিখে ক্যু করে সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াকে গৃহবন্দি করে সেনাবাহিনী থেকে অবসর প্রদান করে নিজেই সেনাপ্রধান হন। ৬ নভেম্বর ১৯৭৫ প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ সিপাহি জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জেনারেল জিয়া অন্তরীণ অবস্থা থেকে মুক্ত হন ও সেনাপ্রধান হিসেবে পুনরায় দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ঐ একই দিনে রাষ্ট্রপতি সায়েম প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত হন। জিয়াউর রহমান অন্য দুই বাহিনী প্রধানের মতো “উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ” নিযুক্ত হন। উল্লেখ্য যে, বিচারপতি সায়েম রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় কর্নেল তাহের ও তার সঙ্গীরা গ্রেফতার এবং বিচারের মুখোমুখি হন। সামারিক আদালতে দেশের প্রচলিত আইন ও সামরিক আইনে তার বিচার হয়। বিচারে তার মৃত্যুদ- হলে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সায়েম উক্ত দ- অনুমোদন করেন এবং তার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। এ ক্ষেত্রে জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা অন্য দুই বাহিনী প্রধানের মতো একই ছিল।
আমরা অনেকেই জানি না যে, ১৯৭২-৭৩ সালের দিকে কর্নেল তাহের ও কর্নেল জিয়াউদ্দিন সেনাবাহিনীতে চাকরিরত অবস্থায় সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং বিভিন্ন প্রকার অসৈনিকসুলভ কার্যকলাপে জড়িত হন। তাদের এহেন কর্মকা-ের ফলে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান কর্নেল জিয়াউদ্দিনকে অপসারণ ও কর্নেল তাহেরকে সেনাবাহিনী হতে অকালীন বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠান। সে সময় মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ সেনাপ্রধান ছিলেন।
১৯৭৫ সালের নভেম্বরে জাসদ, কর্নেল তাহের ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা দেশবিরোধী এক ভয়ঙ্কর খেলায় মেতেছিল। জেনারেল জিয়াউর রহমান তার সাহস ও বিচক্ষণতায় সেই ভয়ঙ্কর খেলার পরিকল্পনা নৎসাত করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান তাহের গংদের হাতের পুতুল না হয়ে তাদের সমস্ত চক্রান্তকে ধুলিসাৎ করে দেন।
কর্নেল তাহের সেনাবাহিনী হতে বের হয়ে সরাসরি জাসদের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং এর সামরিক শাখার প্রধান হিসেবে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর কতিপয় কর্মরত সদস্যদের সরাসরি জাসদের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন। ১ জানুয়ারি ১৯৭৩ সালে চাকরিরত সৈনিকদের দ্বারা বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা গঠন করা হয়। ১৯৭৪-৭৫ সালে কর্নেল তাহের তার ভাই সার্জেন্ট আবু ইউসুফের ৩৩৬নং এলিফেন্ট রোডস্থ বাসায় প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মরত সদস্যদের নিয়ে নিয়মিত রাজনৈতিক মিটিং করতেন। বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা তাহেরের নির্দেশে পরিচালিত হতো। অর্থাৎ কর্নেল তাহের সেনাবাহিনী হতে বাধ্যতামূলক অবসর নিয়েও কর্মরত সেনাসদস্যদের সমাজতাস্ত্রিক রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন যা বিদ্রোহ ও রাষ্ট্রদ্রোহীতার শামিল। সে সময় ১৯৭৩ সালে জনৈক ওলন্দাজ নাগরিক পিটার কাস্টারস বাংলাদেশে ত্রাণকর্মীর ছদ্মবেশে আগমন করেন এবং বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কর্নেল তাহেরের সঙ্গে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী মোহাম্মদপুর পুলিশ ফাঁড়ি ও নারায়ণগঞ্জের একটি পুলিশ ফাঁড়ি প্রকাশ্যে লুট করা হয় এবং লুণ্ঠিত অস্ত্রশস্ত্র পিটার কাস্টার্সের এলিফেন্ট রোডস্থ বাসভবনে লুকিয়ে রাখা হয়। পরবর্তীতে পিটার কাস্টার্স এই অস্ত্রশস্ত্রসহ গ্রেফতার হন। ১৯৭৬ সালে ২নং বিশেষ সামরিক আদালতে পিটার কাস্টার্সসহ ৭ জনকে ১৪ বছরের কারাদ- দেয়া হয়।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকার রাজপথে সেনাবাহিনীর ট্যাংককে সাধারণ জনগণ ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিয়েছিল। হাজার হাজার সৈনিক ও জনতা ঢাকার রাজপথে বিজয় মিছিল করে ৭ নভেম্বরের বিপ্লবকে স্বাগত জানিয়েছিল। আমিও সেদিন হাজার হাজার সৈনিক জনতার সঙ্গে বিজয় মিছিলে অংশ নিয়েছিলাম।
পরিশেষে বলব, বাংলাদেশের ইতিহাস সম্বন্ধে জানতে হলে আমাদের ইউরোপ আমেরিকা দৌড়াবার প্রয়োজন নেই। এ দেশের দেশ প্রেমিক জনগণই এ দেশের প্রকৃত ইতিহাসের ধারক ও বাহক। আর স্বাধীনতার চেতনায় আজ ৭ নভেম্বরের মূল্যায়নও জরুরি।
য় লেখক : প্রাবন্ধিক
সধলড়ৎসরুধহ.নহঢ়@মসধরষ.পড়স
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।