পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে গতকাল মঙ্গলবার। দীর্ঘ প্রায় দুই বছর পর স্কুল-মাদরাসা খোলায় শিক্ষার্থীদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বহুদিন পর বন্ধু-বান্ধবীদের পেয়ে উৎফুল্ল শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস আনন্দ একদিকে; অন্যদিকে সড়কে যানজটে স্থবির হয়ে পড়েছিল রাজধানী ঢাকার নগরজীবন। ঘর থেকে যারা বের হয়েছেন তাদের গন্তব্যে যেতে যানজটে নাকাল হতে হয়েছে। দীর্ঘদিন পর সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় রাজধানীর প্রতিটি সড়কে প্রচন্ড যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। বিপরীতে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা ছিল সেই পুরনো ধাঁচে। বরং গুলিস্তানে দেখা গেল পরিবহন শ্রমিক, মালিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চাঁদাবাজিতে ফ্লাইওভারের ওপর আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। একই চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর মহাখালী, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, ধানমন্ডি, বাংলামোটর, শাহবাগ, আজিমপুর, মোহাম্মদপুর, যাত্রবাড়ী, শনির আখড়া, মহাখালী, তেজগাঁও, মালিবাগ, শান্তিনগর, উত্তরা, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায়। এসব এলাকায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ইনকিলাবের কয়েকজন প্রতিবেদক তীব্র যানজটের কবলে পড়েছে। আর এই যানজট সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত ২২ ফেব্রুয়ারি খুলে দেয়া হয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর ২ মার্চ প্রাথমিক ও সবশেষ গতকাল মঙ্গলবার শুরু হয় প্রাক-প্রাথমিকের শ্রেণি পাঠদান। পুরোদমে স্কুল খোলার দিনে রাজধানীতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে তীব্র গরমের কারণে যানজটে থাকা মানুষের ভোগান্তি দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে চলতে গিয়ে যানজটে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করছেন অনেকেই। মহাখালী, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরে দিনের বেশির ভাগ সময় ধরে ছিল তীব্র যানজট। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট থেকে আসাদ গেট আসতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লেগে গেছে। মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর থেকে মতিঝিল আসতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায়। যানজট সামাল দিতে কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হিমশিম খেতে দেখা যায়; কোথাও দেখা যায় যানজট নিরসনের নামে চাঁদা উঠাতে। সকালে অফিসমুখী মানুষ যানজটে ভোগান্তিতে পড়ায় নানান মন্তব্য করতে শোনা যায়। গুলিস্তানে ফ্লাইওভারের মুখে যানবাহন আটক করে পুলিশের সামনে চাঁদাবাজি করতে দেখে যাত্রীদের কেউ কেউ নানান অপ্রিয় মন্তব্য করেন। একজন বললেন, দীর্ঘদিন পর স্কুল খোলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত ছিল যানজট নিরসনের আগাম প্রস্তুতি নেয়া। কিন্তু তারা লোক দিয়ে যানবাহনে চাঁদাবাজিতে যেন ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। শ্রাবণ বাসের একাধিক ড্রাইভার জানালেন, পুলিশের হাতে ৩০ টাকা দিলে তারা ওভারব্রিজের ঢালে বাস ঘুরতে দেন; টাকা না দিলে ঘুরতে দেন না। ফলে গুলিস্তান পাতাল মার্কেটের মোড় অথবা জিপিওর জিরো পয়েন্ট দিয়ে বাস ঘুরে আসতে হয়। ফলে যানজট আরো বেড়ে যায়। গত সোমবার রাতে দেখা যায় শ্রাবণ বাসের যেসব ড্রাইভার ৩০ টাকা পুলিশের লোককে দেন তারা ষেখানেই ঘুরে যেতে পারেন; টাকা না দিলে বাস ঘুরতে দেয়া হয় না। এ দৃশ্য দেখার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কযেকজন সদস্যকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে গতকাল বঙ্গভবনের পাশে দাঁড়ানো একজন পুলিশ বললেন, আসলে এত বেশি গাড়ি বের হয়েছে সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
পুলিশ সদস্যরা বলছেন, সকাল থেকে স্কুল খোলা হয়েছে। সকাল থেকেই অভিভাবকরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তার সন্তানকে নিয়ে এসেছেন। এদের অনেকের সঙ্গেই গাড়ি রয়েছে। আর এই গাড়ির কারণেই সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। একদিকে স্কুল-কলেজ, অন্যদিকে অফিস; দুইয়ে মিলেই সড়কে গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। আর এর ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে যানজট কমাতে কাজ করা হচ্ছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তেজগাঁও বিভাগের ট্রাফিক উপ-পুলিশ কমিশনার সাহেদ আল মাসুদ সাংবাদিকদের বলেন, স্কুলে আসা অনেক গাড়িই সড়কের পাশে পার্কিংয়ে রাখা হয়েছে। স্কুল-কলেজ পুরোদমে খোলায় সড়কে গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে, সেই সঙ্গে অফিসগামী মানুষের চাপ তো আছেই। যে কারণে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজটের। বিষয়টি সামাল দিতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে, তবে আমরা আমাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি।
মিরপুর-মহাখালী : সকাল আটটা। রাজধানীর কচুক্ষেত বাজারের মোড়ে দৃশ্যত বাস, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, রিকশা, সিএনজি, লেগুনার রাজত্ব। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই পয়েন্টে আটকে গেলে মহাখালী, বনানী, ক্যান্টনমেন্ট থেকে শুরু করে মিরপুর-১৪, ভাষানটেক ও এর আশপাশ এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। রাজধানীর বিএএফ শাহীন কলেজ, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মুসলিম মডার্ন একাডেমি, শহীদ রমিজউদ্দিন হাই স্কুল, শহীদ বীর উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজ, উত্তর কাফরুল হাই স্কুল, পুলিশ স্মৃতি কলেজ, বিএন কলেজসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ থাকায় তীব্র যানজট দেখা গেছে সংশ্লিষ্ট এলাকায়।
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকরাও সফরসঙ্গী হওয়ায় এই চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ। এই এলাকার পরিবহনগুলোর শতকরা ৯০ শতাংশ যাত্রীই ছিলেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এই রাস্তায় যানজটের প্রভাব গিয়ে ঠেকেছে মিরপুর-১০ থেকে শুরু করে মহাখালী পর্যন্ত।
যানবাহন নিয়ন্ত্রণে সকাল থেকেই ট্রাফিক পুলিশকে দেখা গেছে ব্যস্ত। রাস্তায় বাস, প্রাইভেটকার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশার কারণে থেমে ছিল এসব এলাকা। দীর্ঘ সময় পরপর সিগন্যাল ছাড়ায় গাড়ির দীর্ঘ লাইন হয়ে যায়। কোনো কোনো এলাকায় সিগন্যাল ছাড়লেও কোনো লাভ হয়নি। কারণ সামনের রাস্তায়ও গণপরিবহনের দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হয়েছে। গরমের মধ্যে এমন যানজটে অনেকটা অতিষ্ঠ হয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায় লোকজনকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে নষ্ট হচ্ছে মানুষের কর্মঘণ্টা। অতিষ্ঠ হয়ে অনেকে আবার যানজটের কারণে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে যাত্রা করেছেন। সশরীরে পুরোদমে স্কুল-কলেজে ক্লাস শুরু হয়েছে গতকাল। এ কারণে সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছুটে যান অভিভাবকরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে সৃষ্টি হয় রিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ির জট। এর প্রভাব পড়ে রাজধানীর অন্যান্য প্রধান সড়কে। শাহজাহানপুরে মতিঝিল সরকারি বালক ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে সকালের দিকে গাড়ি যানজটে আটকে থাকতে দেখা গেছে। কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল ও শান্তিনগরের হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের সামনের রাস্তায়ও একই অবস্থা দেখা গেছে।
মহাখালী এলাকায় গাজীপুরগামী যাত্রী রফিকুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল থেকে মহাখালী আসতে ২ ঘণ্টা পাড় হয়ে গেছে। জরুরি কাজে গাজীপুর যাব। এখন দেখছি আমার যাবার কতক্ষণ সময় লাগবে তার কোনো ঠিক নেই। এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসে বসে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ পর পর ট্রাফিক সিগন্যাল ছাড়ে কয়েকটা গাড়ি একটু চললেই আবার বন্ধ করা হয়। এভাবে চললে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে যেতে অসম্ভব হয়ে পড়বে।
দোলাইরপাড়-যাত্রাবাড়ী : রাজধানীর পশ্চিম দোলাইরপাড় থেকে কুড়িল বিশ্বরোড। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে গেলে পথে পড়ে সায়েদাবাদ, মানিকনগর, খিলগাঁও রেলগেট, মালিবাগ আবুল হোটেল, রামপুরা টিভি সেন্টার, মধ্য বাড্ডা, নতুন বাজার এবং কুড়িল বিশ্বরোড। সকাল ১০টায় রওনা দিয়ে পৌঁছতে হয় বেলা সোয়া ১টায়। সোয়া ৩ ঘণ্টা লেগে যায় এ রুটের জমাট জ্যামে। তীব্র যানজটে স্থবির হয়ে যায় ওই পথের চলাচল। যাওয়ার সময়ই চোখে পড়ে ফিরতি পথের সর্পিল জ্যাম। এ পথে চলাচলকারী নাগরিকের দিনের প্রথমার্ধ্বটি শেষ হয় ঠাসা জ্যামে বসেই। প্রাইভেটকার, লোকাল বাস, নন-স্টপ বাস, রিকশা, টেম্পো এমনকি মোটরবাইকগুলোর অবস্থা ছিল বেগতিক। জট নিরসনের বিরক্তিকর অপেক্ষা লক্ষ করা যায় যাত্রীদের মধ্যে। সোজা পথ, উল্টোপথ বলে ছিল না বাছ-বিচার। যে দিকটায় ফাঁকা পেয়েছেন- চালক গাড়ি ঢুকিয়েছেন সেদিকেই। কার আগে কে যাবে- এমন তীব্র প্রতিযোগিতার কোনো সুযোগই ছিল না। সিগন্যালগুলোতে ট্রাফিক পুলিশের তৎরপতা ছিল লক্ষণীয়। কিন্তু ক্ষণে ক্ষণে হাত উঁচিয়ে বাঁশির ফুঁৎকার পর্যবসিত হয় অসার চেষ্টায়। অহর্নিশ ‘হিউ হিউ’ আর্তনাদ করেও অ্যাম্বুলেন্সগুলো চলার পথে পায়নি কিঞ্চিৎ ‘ফেভার’। ঘন যানজটে সব ধরনের গাড়ির গতিই ছিল এক। এর চেয়ে বরং ফুটপাধ ধরে পদব্রজে যারা নিকট-গন্তব্যে রওনা দিয়েছেন তারাই বরং ছিলেন অপেক্ষাকৃত গতিশীল।
বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারের একটি অনুষ্ঠানে যোগদানের লক্ষ্যে সকাল সাড়ে ১০টায় রামপুরা থেকে রওনা দিয়েছেন মোশাররফ হোসেন। তার ২ ঘণ্টা নষ্ট হয় কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত পৌঁছতেই। শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠান ধরতে পারবেন কি না- সেই আশঙ্কা তার। মোশাররফ বলেন, এমন জ্যামে পড়ব জানলে আজ বাসা থেকেই হয়তো বের হতাম না। কে জানত, সপ্তাহের মধ্যভাগে হঠাৎ জ্যামে এভাবে স্থবির হয়ে যায় রাজধানীর রাজপথ!
পাঠাও যাত্রী জহির সিকদারের হাতে ফুলের তোড়া। রোদে শুকিয়ে নেতিয়ে পড়েছে পাপড়িগুলো। শাহবাগ থেকে হাতিরঝিল হয়ে কোনোমতে এসেছেন বাড্ডা ইউলুপ-জেব্রা মসজিদ অবধি। যাবেন এয়ারপোর্ট। চরম বিরক্তিভরে পথের পাশেই ছুড়ে ফেলে দেন তোড়াটি। এয়ারপোর্টে প্রিয়জনকে ‘সী-অফ’ করতে যাচ্ছিলেন। জ্যামের কারণে যথাসময়ে এয়ারপোর্টে তার পৌঁছার কাজ সারা। রণেভঙ্গ দিয়ে ইউলুপে ফিরতি পথে চলে যাবেন বলে জানান।
গতকালের জ্যামের কারণে এ পথের অনেক যাত্রীই দিনের শিডিউলে কাট-ছাঁট করেছেন। দিনের অর্ধেক কর্মঘণ্টা তাদের পার হয় যানজটেই।
মালিবাগ-রাজারবাগ : তীব্র যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী। গতকাল সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন সড়কে প্রচন্ড যানজট শুরু হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন আটকে থাকায় ক্ষুব্ধ হয়ে অনেকে বাস থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেন। অফিসগামীদের পাশাপাশি সকাল থেকেই হাজার হাজার শিক্ষার্থী-অভিভাবক যানজটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন। অনেক অভিভাবক সময়মতো স্কুলে পৌঁছতে রিকশা থেকে নেমে হেঁটেই স্কুলের দিকে রওনা করেন।
রাজধানীর শাহজাহানপুর, মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগ এলাকায় অন্যান্য দিনের তুলনায় গতকাল ছিল তীব্র যানজট। এসব এলাকায় অনেকগুলো নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় সকাল থেকে অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে বের হয়ে যানজটের কবলে পড়েন। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুল, সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট ভয়েজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এবং মতিঝিল অফিসগামী যাত্রীদের চাপে শাহজাহানপুর, রাজারবাগ, আরামবাগ, কমলাপুর এসব এলাকায় প্রচন্ড যানজটের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রাজারবাগ পুলিশ লাইন স্কুল, সিদ্বেশ্বরী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল, মগবাজার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, ফয়জুর রহমান আইডিয়াল স্কুল এসব প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে মালিবাগ, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর, কাকরাইল এলাকায় প্রচন্ড যানজটের সৃষ্টি হয়।
এসব এলাকার যানবাহন নিয়ন্ত্রণে সকাল থেকেই ট্রাফিক পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। একেক দিকে সিগন্যাল দীর্ঘ সময় পর পর ছাড়ায় অন্য দিকে গাড়ির লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হতে থাকে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অনেক যাত্রী ট্রাফিককেও গালাগাল করে। অনেকে বলে এসব ট্রাফিক ইচ্ছে করে আরো যানজটের সৃষ্টি করে।
রাজারবাগের সিগন্যালে যানজটে আটকে থাকা এক অভিভাবক রুখসানা আক্তার বলেন, এত বেশি যানজট এর আগে দেখিনি। বাচ্চাকে নিয়ে আইডিয়াল স্কুলে যাব। এই সিগন্যালে ১০ মিনিটের বেশি সময় আটকে আছি। এদিকের গাড়ি ছাড়ছেই না, শুধু ওদিকের গাড়ি ছাড়ছে। আসলে ট্রাফিক পুলিশগুলো ইচ্ছে করে যানজটের সৃষ্টি করে। ওরা নিজেরাই যদি হাত দিয়ে ট্রাফিক কন্ট্রোল করবে তাহলে সিগন্যাল বাতির দরকার কি?
শনির আখড়া-দনিয়া : রাজধানীর শনির আখড়া-দনিয়া এলাকায় সকাল থেকেই যানজট লেগে যায়। দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, এ কে স্কুলের দুইটি ক্যাম্পাস, বর্ণমালা স্কুল, আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়সহ আশপাশের কয়েকটি মাসরাসায় প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একসঙ্গে খুলে দেয়ায় রিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশায় জানজট লেগে যায়। দোলাইরপাড় থেকে শনির আখড়া আসতে প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা লেগে যায়।
সকালে দেখা যায় শিশু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে বাবা-বা স্কুলে হাজির হচ্ছেন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড়ে যানচলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। ওদিকে ডেমরা রোডে শামসুল হক স্কুল, ড. হাবিবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অর্ধলাখ শিক্ষার্থী। ফলে যাত্রাবাড়ী ডেমরা গুদারাঘাট সড়কে যানজটে পড়েন অফিসমুখী মানুষ।
মতিঝিল-খিলগাঁও-বনশ্রী : শিক্ষার্থীদের চাপে স্কুল ও আশপাশ এলাকায় প্রকট যানজট দেখা দেয়। যানবাহন নিয়ন্ত্রণে সাতসকালে ট্রাফিক পুলিশকে দেখা যায় ব্যস্ত। কোনো কোনো অভিভাবককে স্কুলের আশপাশের বেকারি ও দোকান থেকে সন্তানদের জন্য টিফিন কিনতে দেখা যায়। ফলে এসব দোকানে বাড়ে বেচাকেনা। রমনা, মতিঝিল, খিলগাঁও, বনশ্রী, আজিমপুরসহ অন্যান্য সড়কগুলোতেও তীব্র যানজট দেখা গেছে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে একাধিক অভিভাবক জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার থেকে পুরোদমে ক্লাস শুরু হয়েছে। ফলে রাত থেকেই স্কুল ড্রেস, ব্যাগ, বই, খাতা-কলম গুছিয়ে রাখে সন্তানরা।
লালবাগের বাসিন্দা ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী নুসাইবা রহমানের মা লায়লা রহমান বলেন, এতদিন সীমিত আকারে ক্লাস থাকায় সন্তানদের ঘুমাতে দেরি হতো। স্কুল শুরু হওয়ায় রাতে দ্রæত ঘুমাতে যাওয়াসহ রুটিনে পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। তিনি জানান, সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মেয়ে ক্লাসে থাকবে। তাই টিফিন কিনে দিতে হয়েছে। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সীমিত আয়ের মানুষের ওপর চাপ আরো বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।
রাজধানীর ঝিগাতলার বাসিন্দা উদয়ন স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মনজুরুল হোসেনের বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, নতুন এক যুদ্ধ শুরু হলো। সকালে স্কুলে দৌড়ানো, ছুটি শেষে বাসায় নিয়ে যাওয়া, সেখান থেকে কোচিংয়ে নেয়া। কথা হয় আজিমপুর গার্লস স্কুলের ছাত্রী স্নেহা সুলতানার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের বাসা খিলগাঁও। সেখান থেকে প্রতিদিন স্কুলে আসি। আজ রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল। অনেক দিন পর স্কুল খুলেছে এ জন্য রাস্তায় যানজট হয়েছে। শাহবাগ মোড়ে কথা হয় রাকিব হোসেনের সঙ্গে। তিনিও বলেন, মোহাম্মদপুর থেকে হেঁটে শাহবাগে এসেছি। রাস্তায় ব্যাপক যানজট।
পল্টন এলাকার অফিসগামী নজরুল ইসলাম বলেন, আমার বাসা মিরপুরে। রাস্তার সব জায়গায় আজ গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, আসতে অনেক কষ্ট হয়েছে। স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার কারণে রাস্তায় অনেক জ্যাম হয়েছে।
আজিমপুর বাসস্ট্যান্ডের ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মো. রাজু বলেন, প্রতিদিনই কমবেশি রাস্তায় যানজট থাকে। তবে মঙ্গলবার পুরো স্কুলের ক্লাসের কারণে রাস্তায় বেশি যানজট সৃষ্টি হয়।
মালিবাগের বাসিন্দা সৈয়দ মনিরুল বলেন, মালিবাগ থেকে চৌধুরীপাড়া ছেলের স্কুলে যেতে যেখানে ৩০ মিনিট সময় লাগত, আজ এক ঘণ্টা সময় লেগেছে। সকাল থেকে পুরো এলাকায় যানজট লেগেই ছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ফার্মগেট-কাওরান বাজার : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার তীব্র যানজটের কবলে পড়েছেন রাজধানীর ফার্মগেট, কাওরান বাজার, পান্থপথসহ আশপাশ এলাকার বাসিন্দারা। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকায় যানজট ছিল লক্ষণীয়। মঙ্গলবার সকালে ওসব এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের দাবি, অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে যানবাহন।
মঙ্গলবার সকাল ৮টার পর থেকে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার বিভিন্ন সড়কে যান চলাচলে ধীরগতি দেখা যায়। বিভিন্ন স্কুলের সামনে ছিল যানজট। এদিকে অন্যান্য দিনের মতো মঙ্গলবারও বিজয় সরণি মোড়ে দীর্ঘ যানজট দেখা গেছে। ট্রাফিক সিগন্যালের কারণে প্রত্যেকটি লেনে গাড়ির চাপ বেড়ে যায়।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিজয় সরণি মোড়ে দেখা যায়, ট্রাফিক পুলিশ সড়কে গাড়ির চাপ সামলাতে দু’টি লেনের গাড়ি একসঙ্গে ছেড়েছে। যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও নির্বিঘœ করতে তাদের তটস্থ থাকতে দেখা যায়।
শিকড় পরিবহনের যাত্রী মাসুদ রানা বলেন, মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ী যেতে বাসে উঠেছি। মিরপুর থেকে ফার্মগেট আসতেই এক ঘণ্টা শেষ। যাত্রাবাড়ী যেতে কতক্ষণ লাগবে জানি না।
ফার্মগেট ট্রাফিক বক্সে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, মঙ্গলবার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। তাই বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছি। যে ধারণা করা হয়েছিল; তার চেয়ে অনেক কম যানজট। যানবাহন স্বাভাবিকই চলছে।
চট্টগ্রামেও দুর্ভোগ : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, দুই বছর পর স্কুল, কলেজ, মাদরাসাসহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতভাগ ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর গতকাল মঙ্গলবার প্রথম দিনে যানজটে পড়ে নাকাল হতে হয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। এমনিতেই যানজটে বেহাল মহানগরী। তার ওপর পুরোদমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দিনে যানজট আরো তীব্র হয়। গণপরিবহন সঙ্কটে বিড়ম্বনার শিকার হন শিক্ষার্থীরা। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নগরজুড়ে তৎপর ছিলেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা।
নগরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সকাল থেকেই যানজট আর জনজট শুরু হয়। বিশেষ করে স্কুলগুলোর সামনে ছিল প্রচÐ জটলা। গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত যানবাহনের চাপ ছিল অন্যদিনের চেয়ে বেশি। সন্তানদের নিয়ে অভিভাবকদের অনেকে আসেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এতে প্রতিটি স্কুলের সামনে ছিল জনজট। যানজটের কারণে গাড়ি থেকে নেমে শিক্ষার্থীদের হেঁটে যেতে দেখা যায়। সবচেয়ে বেহাল অবস্থা ছিল নগরীর জামালখান থেকে চকবাজার পর্যন্ত এলাকা।
এ এলাকায় রয়েছে ২০টির বেশি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। চট্টগ্রাম কলেজ, মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, কাজেম আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসা, মহসিন স্কুল, আইডিয়্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সেন্ট মেরিস স্কুল, চিটাগাং ভিক্টোরি ন্যাশনাল স্কুল, সলিমা সিরাজ মাদরাসা, এজি চার্জ, শাহ ওয়ালীউল্লাহ ইনস্টিটিউটসহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পদভারে মুখরিত ছিল পুরো এলাকা।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড় সেই সাথে যানজটে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। নগরীর বাওয়া স্কুল, নাসিরাবাদ বালক উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজিয়েট স্কুল, সরকারি মুসলিম হাই স্কুলসহ প্রতিটি স্কুলের সামনের সড়কে ছিল যানবাহনের জটলা। এমনিতেই নগরীতে যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে। তার ওপর অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়িতে বেশিরভাগ সড়কের অবস্থা বেহাল। রাস্তায় নেমে ধুলায় নাকাল হতে হচ্ছে নগরবাসীকে। পুরোদমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দিন শিক্ষার্থীদেরও আসা-যাওয়ার পথে বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয়।
তবে দীর্ঘদিন পর পুরোদমে ক্লাস পরীক্ষা শুরু হওয়ায় খুশি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা। একসাথে সব শিক্ষার্থীকে বরণ করে নিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নানা আয়োজন করা হয়। কয়েকটি স্কুল ও কলেজে তোরণ নির্মাণ করা হয়। কোথাও আবার শিক্ষার্থীদের বরণ করা হয় ফুল দিয়ে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।