Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মানববন্ধনে অবিলম্বে উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি

রাজশাহী ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০২২, ৬:৪৪ পিএম

রাজশাহী অঞ্চলের কৃষি এখন প্রায় পুরোটিই ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল। ভূ-গর্ভস্থ পানি তুলে চাষাবাদের কারণে পানিশূন্য হয়ে পড়ছে পাতাল। আবার পদ্মায় পানি না থাকার কারণে খাল-বিলগুলোও থাকে পানিশূন্য। এই সংকট সমাধানে এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ‘উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প’ বাস্তবায়ন। সেই দাবি আবার উঠে এল বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) রাজশাহী জেলা কমিটির মানববন্ধন ও সমাবেশে।
সোমবার দুপুরে নগরীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের কাছে দাবি জানান।
আন্তর্জাতিক নদী কৃত্য দিবস উপলক্ষে ‘পদ্মা নদী বাঁচাও, রাজশাহী বাঁচাও’ শ্লোগানে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাপার জেলা কমিটির সভাপতি মো. জামাত খান।
তিনি বলেন, ‘গোটা উত্তরাঞ্চলের পাতাল প্রায় পানিশূন্য। সরকারি সংস্থার জরিপেই এ চিত্র উঠে এসেছে। আমরা দুই দশক ধরে উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আজও তা আলোর মুখ দেখেনি। আমরা অবিলম্বে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানাই। এটি না হলে উত্তরাঞ্চলের মানুষ আমলাদের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে।’
রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে এখন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ পানি তুলে চাষিদের সরবরাহ করে। এতে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিনিয়ত নিচে নামছে। এই সংকট কাটাতে উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্পের পরিকল্পনা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এটি বাস্তবায়ন হলে ৭৪ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমির চাষাবাদ সম্ভব হবে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার করে।
সমাবেশে এ তথ্য তুলে ধরে জামাত খান বলেন, ‘শুধু রাস্তা আর বিল্ডিং মানে উন্নয়ন নয়। উন্নয়নের পূর্বশর্ত পানি। কিন্তু পদ্মায় পানি নেই। চার বছর পরই ফারাক্কা চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার আগেই পানির নায্য হিস্যা নিশ্চিত করে নতুন চুক্তি করতে হবে।
পদ্মায় প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে। তা না হলে কৃষিভান্ডার নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা অনাহারে থাকব। দেশ খাদ্য সংকটে পড়বে। তাই পদ্মায় পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। বাস্তবায়ন করতে হবে উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প।’
বাপার জেলা কমিটির উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবদুল মান্নান সমাবেশে বলেন, ‘রাজশাহী অঞ্চল সব সময় অবহেলিত। কিন্তু আমরা সুষম উন্নয়ন চাই। সরকারকে বলব, এখনও সময় আছে। উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে এ অঞ্চলকে বাঁচান। নইলে এর মূল্য দিতে হবে। তিনি পদ্মা নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত করারও দাবি জানান।
আরেক উপদেষ্টা দেবাশিষ প্রামানিক দেবু বলেন, ‘২০০১ সাল থেকেই আমরা বলে আসছি ভূ-গর্ভস্থ পানিতে চাষাবাদ বন্ধ করুন। তা না হলে উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হবে। আমাদের কথা কোন সরকারের কানেই পৌঁছে না। এখন ঠিকই এ অঞ্চলে মরুকরণ শুরু হয়েছে।’ তিনিও উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানান।
অন্যান্য বক্তারা পরিবেশ রক্ষায় রাজশাহী শহরের পুকুর ভরাট বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া, যত্রতত্র গাছ কাটা বন্ধ করা এবং পদ্মা নদীকে জাতীয় ড্রেজিং কর্মসূচির আওতায় নিয়ে ড্রেজিং করার দাবি জানান। এসব উদ্যোগ নেওয়া না হলে রাজশাহী অঞ্চলকে বাঁচাতে তাঁরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেন। বাপার জেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ জোবায়েদ হোসেন জিতুর পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাসার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন, আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু, তরুণ সংগঠক গোলাম নবী রনি, নারী নেত্রী সেলিনা হোসেন, সুফিয়া বেগম, বাপার জেলা কমিটির সহসভাপতি শ.ম সাজু প্রমুখ। কর্মসূচিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মিনহাজ উদ্দিন মিন্টু ও বাপার জেলা কমিটির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক জাহিদ হাসানসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ