Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘রহস্য উদ্ঘাটনে’ সময় লাগবে

‘নাপা সেবনে’ শিশুর মৃত্যু নিয়ে তদন্ত কমিটি দোষী প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০২২, ১২:০১ এএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় প্যারাসিটামল সিরাপ-নাপা সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় দুই শিশুর মৃত্যুর যে অভিযোগ উঠেছে তা ‘রহস্যজনক’ বলে মনে করছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের তদন্ত কমিটি। ঘটনার তিনদিনের মাথায় গতকাল তদন্ত কমিটির সদস্যরা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে গিয়ে দুই শিশুর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. আকিব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, এই রহস্য উদঘাটন করতে হয়তো সময় লাগবে। গত বৃহস্পতিবার রাতে আশুগঞ্জের দুর্গাপুর গ্রামে ‘প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়ার পর’ ইয়াসিন খান (৭) ও মোরসালিন খান (৫) নামে দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করে তাদের পরিবার। শিশু দুটি ওই গ্রামের ইটভাটার শ্রমিক সুজন খানের ছেলে। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেছেন, প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়ায় শিশু মৃত্যু কোনভাবেই সম্ভব নয়। তারপরও যেহেতু তদন্ত কমিটি হয়েছে তারা অবশ্যই বিষয়টি বের করবে।

ঘটনার বর্ণনায় শিশুদের মা বলেন, দুই ছেলের জ্বর হওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকালে বাড়ির পাশের একটি ফার্মেসি থেকে তারা নাপা সিরাপ এনে খাওয়ান। তারপর দুই ছেলেরই বমি শুরু হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাদের প্রথমে আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, এরপর জেলা সদর হাসাপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে আনার পথে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে ইয়াসিনের মৃত্যু হয়। আর বাড়িতে নিয়ে আসার পর রাত সাড়ে ১০টায় মারা যায় মোরসালিন। এ ঘটনায় এরই মধ্যে সারাদেশের পাইকারি ও খুচরা দোকান পরিদর্শন করে নাপা সিরাপের একটি ব্যাচের ওষুধ পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর।

এ অবস্থার মধ্যেই দুর্গাপুর গ্রামে তদন্তে আসে ওষুধ প্রশাসনের ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি। কমিটির অপর পাঁচ সদস্যের মধ্যে দুইজন উপ-পরিচালক, দুইজন সহকারী পরিচালক ও একজন পরিদর্শক রয়েছেন। তারা দুই শিশুর মা লিমা বেগম, চাচা উজ্জ্বল মিয়া ও দাদী লিলুফা বেগমের সাক্ষ্য নেন। গণমাধ্যমকে ডা. আকিব হোসেন বলেন, শিশুদের স্বজনরা জানিয়েছে, ওষুধ খাওয়ানোর পরই তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। ওষুধটিতে কী এমন উপাদান ছিল, যেটি খাওয়ার ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে রিঅ্যাকশন করল। এটি আসলে রহস্যজনক বিষয়। এই রহস্য উদঘাটনে সময় লাগবে।

তদন্ত কমিটির প্রধান আরও বলেন, যে সিরাপটি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, সেটি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। একই ওষুধের অন্যান্য ব্যাচের ওষুধ সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় আশুগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে পুলিশ। গত শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলার সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ একরাম উল্লাহ। তিনি জানান, যে ওষুধ খাওয়ার পর শিশু দুটির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য জেলা ওষুধ প্রশাসন কার্যালয়ে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়েছে। দুটি তদন্ত কমিটি করে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। পাশাপাশি এই নাপা সিরাপের একটি ব্যাচের ওষুধ পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। গত শনিবার অধিদফতরের আদেশে বলা হয়, সারাদেশে পাইকারি ও খুচরা ফার্মেসি পরিদর্শন করে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালসের প্যারাসিটামল ১২০ মিলি গ্রাম ও ৫ মিলি গ্রাম সিরাপ (ব্যাচ নং ৩২১১৩১২১, উৎপাদন তারিখ ১২/২০২১, মেয়াদোত্তীণের তারিখ ১১/২০২৩) পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করে ন্যাশনাল কন্ট্রোল ল্যাবরেটরিতে প্রতিবেদন পাঠাতে হবে। প্যারাসিটামল বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া ওষুধগুলোর একটি। আর প্যারাসিটামল জেনেরিকের ওষুধগুলোর মধ্যে নাপা সবচেয়ে বেশি পরিচিত।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে প্যারাসিটামল সিরাপ নাপা সেবনে দুই শিশুর মৃত্যুর যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল রাজধানীতে বাংলাদেশে সোসাইটি অব মেডিসিনের সম্মেলন শেষে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ বিষয়ে কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, ওই ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে; যে ফার্মেসি থেকে ওষুধ নেয়া হয়েছিল, সেটি বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া সিরাপগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। আমাদের তদন্ত কমিটি কাজ করছে। অপেক্ষা করছি রিপোর্ট কী আসে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। নাপার ওই ব্যাচের ওষুধ বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দেননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর যা যা করা প্রয়োজন, তা করছে। আমাদের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগও বিষয়টি নিয়ে ওপর কাজ করছে। ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, সেটা আপনারা দেখতেই পারবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিশুর মৃত্যু

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ