Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বইমেলায় উপজাতিদের কথা

রাহাদ উদ্দিন | প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০২২, ১২:০৩ এএম

বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা প্রায় শেষের দিকে। দু’দিন পর বাজবে বিদায়ের ঘণ্টা। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছরের মেলা হয়েছিল অনেকটাই অগোছালো, জরাজীর্ণ। তবে অন্যবারের চেয়ে এবারের বইমেলা বেশ জমজমাট ছিল। লেখক-প্রকাশক-পাঠকদের মহামিলনের উৎসবে পরিণত হয়েছে এবারের মেলা। প্রতিদিনই মেলা ঘুরে দেখা গিয়েছে পাঠকদের বই কেনা, পড়া ও প্রিয়জনকে উপহার দেয়ার হিড়িক। দেশসেরা প্রকাশনীগুলোও প্রকাশ করেছেন পাঠক চাহিদায় থাকা নানা বিষয়ের বই। এগুলোর মধ্যে রয়েছে দেশের উপজাতিদের নিয়ে লিখা বইও।

তবে এবছর মেলায় উপজাতিদের নিয়ে লেখা বই থাকলেও তা অপ্রতুল। যা আছে তাও বেশিরভাগ বাঙালি লেখকদের লেখা বই। ফলে এসব বই পড়ে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ এসব উপজাতিদের জীবনের নানা দিক ও দর্শন সম্পর্কে সম্মক ধারণা লাভ করতে সক্ষম হলেও তেমন একটা উপকৃত হচ্ছেন না। তাদের ভাষায় লেখা বই অপ্রতুল হওয়ায় তাদের ভাষা হচ্ছে না সমৃদ্ধ। আবার বাঙালি পাঠকশ্রেণিও পাচ্ছে না এসব ভাষার সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ।

গতকাল রোববার বইমেলা ঘুরে দেখা যায়, বিগত কয়েক বছর ধরে উপজাতিদের নিজস্ব কয়েকটি প্রকাশনী মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে স্থান পেলেও এবছর নেই সেসব প্রকাশনী। মেলার তথ্যকেন্দ্র বলছে তাদের নিয়ে লেখা বই প্রকাশ করে থাকে ৪ থেকে ৫টি প্রকাশনী। এগুলোর মাঝে মাওলা ব্রাদার্স, গতিধারা ও শোভা প্রকাশ উল্লেখযোগ্য।

উপজাতিদের নিয়ে মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত বই রয়েছে ১৫টি। তবে এগুলোর মধ্যে অধিকাংশ বই লিখেছেন বাঙালি লেখকরা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ড. মুস্তাফা মজিদ সম্পাদিত ‘আদিবাসী সংস্কৃতি’, ‘মারমা জাতিসত্তা’, ‘আদিবাসী রাখাইন’, ‘বাংলাদেশের মঙ্গোলীয় আদিবাসী’, ‘দ্য রাখাইনস’, ‘গারো জাতিসত্তা’, ‘হাজং জাতিসত্তা’, মাহমুদা ইসলামের ‘সমাজ ও ধর্ম’, ড. রতন লাল চক্রবর্তীর ‘সিলেটের নিঃস আদিবাসী পাত্র’, কাবেদুল ইসলামের ‘প্রাচীন বাংলার জনপদ ও জনজাতিগোষ্ঠী’, সেলিনা হোসেনের ‘আদিবাসীদের মেঘ ও শিশির’, ‘মাযহারুল ইসলাম তরুর আদিবাসী লোকজীবন’, শোভা ত্রিপুরার ‘ত্রিপুরাজাতি’, সৌরভ সিকদারের ‘বাংলাদেশের আদিবাসীঃ ভাষা সংস্কৃতি- অধিকার’ ও মনোয়ার আহমদের লিখা ‘বাংলাদেশের উপজাতীয় সংস্কৃতি’।
শোভা প্রকাশে রয়েছে সাইফুল আহসান বুলবুলের লিখা ‘বাংলাদেশের সমতল ভূমির নৃ-তাত্বিক জনগোষ্ঠী’, ‘বাংলাদেশের রাখাইন জনগোষ্ঠী’, ‘বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চলের নৃ-তাত্বিক জনগোষ্ঠী’, আলী আহাম্মদ খান আইয়োবের ‘গারো পাহাড় অঞ্চলের আদিবাসী’, ‘বাংলাদেশের হাজং স¤প্রদায়’, ‘গারো স¤প্রদায়ঃ ধর্মের উৎস ও প্রভাব’, ড. মাজহারুল ইসলাম ‘তরুর গারো স¤প্রদায়ঃ সমাজ ও সংস্কৃতি’, ‘গারো ও হাজং স¤প্রদায়ের লোকসাহিত্য’ ও নাজমুন নাহার লাইজু রচিত ‘বাংলাদেশের বেদে স¤প্রদায়’।

গতিধারা প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে বিলু কবীরের সম্পাদনায় ‘আদিবাসী ভ‚মি ও সঙ্গত প্রসঙ্গ’। ব্যবস্থাপক মাসুদ বলেন, উপজাতিদের নিয়ে লেখার চাহিদা আছে মোটামুটি। তবে অনলাইনে রকমারিতে আমাদের বইগুলো পাওয়া যায়। ওখানেই বেশি বিক্রি হয় বইটি। নন্দিতা প্রকাশে রয়েছে ২টি বই। এগুলো হলো গারো থিওফিল নকরেকের লিখা ‘গারো সংস্কৃতির জীবনবাদ পর্যালোচনা’ ও ‘গারোদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম -যুগের দাবি’। গারো সংস্কৃতির জীবনবাদ পর্যালোচনা বইটি বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রয় প্রতিনিধি সাকিল আহসান।

অন্যদিকে গণপ্রকাশনে উপজাতিদের নিয়ে লিখা বই রয়েছে কেবল ১টি। তবে আবদুস সাত্তার লিখিত দলিত দ্রোহী ড. আম্বেদকর বইটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে বলে জানান বিক্রয়কর্মী সাদাত। গণপ্রকাশনের প্রকাশকের বক্তব্য, বাংলাদেশে ছোট - বড় প্রায় আশিটি স¤প্রদায় রয়েছে যারা দলিত বলে পরিচিত। এসব দলিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। মোগল ও ইংরেজ শাসকরা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এদের পূর্ব পুরুষদের এদেশে নিয়ে আসে। আজীবন তারা রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে নানা বৈষম্য , নিপীড়ন - নির্যাতনের শিকার। দীর্ঘকাল তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই ’ এই চিরন্তন সত্যটি আধুনিক সভ্যতার যুগে দলিতদের জন্য এক নির্মম উপহাস। দলিতদ্রোহী ড.আম্বেদকর বইটি দলিতদের জীবনের এক করুণ অথচ বাস্তব আলেখ্য। দলিতদের প্রতিভূ ড.আম্বেদকর তাদের জীবনমান উন্নয়ন ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য যে আন্দোলন - সংগ্রাম ও ত্যাগের স্বাক্ষর রেখেছেন, ভারতবর্ষের ইতিহাসে তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাছাড়া এদেশের দলিতদের সমস্যা , সঙ্কট , দাবি , অধিকারের বিষয়টি লেখক অত্যন্ত নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এই গ্রন্থে।

গতকাল রোববার অমর একুশে বইমেলার ২৭তম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ৬৮টি। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া : নির্ভীক সাংবাদিকতার পথিকৃৎ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দেলওয়ার হাসান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মোফাকখারুল ইকবাল, মো. মিনহাজ উদ্দীন এবং শেখ আদনান ফাহাদ। সভাপতিত্ব করেন আবেদ খান। লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজের বই নিয়ে আলোচনা করেন আনোয়ারা সৈয়দ হক এবং নাদিরা মজুমদার।

অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মুনা চৌধুরী, সোহাগ সিদ্দিকী এবং ফেরদৌসী কুঈন। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী বদরুল হুদা জেনু, মেহেদী হাসান আকাশ, লালটু হোসাইন এবং সামিয়া রহমান লিসা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল নীহার দে আকাশ-এর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সুরের আলো সংগীত একাডেমী’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী কাদেরী কিবরিয়া, ফেরদৌস আরা, ইয়াকুব আলী খান, লুনা ফাতিমা, জয়ন্ত আচার্য্য, শিল্পী বিশ্বাস, রেজা রাজন। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন কাজী ইমতিয়াজ সুলতান (তবলা), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশি), জুয়েল আল্ধসঢ়; দ্বীন (কী-বোর্ড) এবং দীপঙ্কর রায় (অক্টোপ্যাড)।

আজ সোমবার অমর একুশে বইমেলার ২৮তম দিন। মেলা চলবে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের আলোকবর্তিকা এবং ড. মুহম্মদ এনামুল হক : জীবন ও সৃজন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন হাকিম আরিফ এবং সৌরভ সিকদার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন আনোয়ারুল হক, ললিতা রানী বর্মন এবং মাসুদ রহমান। সভাপতিত্ব করবেন সৈয়দ আজিজুল হক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বইমেলা

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ