Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্রহ্মপুত্র ন‌দকে ঘি‌রে বা‌লি উ‌ত্তোল‌নের না‌মে দুর্নী‌তির ম‌হোউৎসব চল‌ছে

ময়মনসিংহ থেকে মো. শামসুল আলম খান | প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০২২, ১২:৩৪ পিএম

ব্রহ্মপুত্র নদের কাচারিঘাটের পূর্বপাড়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোউৎসব চলছে ।
ময়মনসিংহ সিটি ক‌র্পোরেশনের কাউন্সিলর জামাল হোসেন ও আনু মোড়লের নেতৃত্বে সরকারি জমি থেকে বালু উত্তোলন ও মাটিকাটা অব্যাহত রয়েছে। সরকা‌রের নদী শাসন আইন‌কে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন ক‌রে গত এক বছ‌রে প্রায় পাঁচশত কো‌টি টাকার বালু বি‌ক্রি ক‌রে‌ দি‌য়ে‌ছে ব‌লে প্রত‌্যাক্ষদর্শী সূ‌ত্রে জানা গে‌ছে । এতে বাঁধ, ফসলি জমি এবং ঘরবাড়ি হুমকিতে পড়েছে । সরকারী দলের লোকজনও সি‌ন্ডি‌কে‌টের মাধ‌্যমে এ‌তে যুক্ত আ‌ছে ব‌লে অ‌ভিযোগ পাওয়া গে‌ছে । ব্রহ্মপুত্র নদ সংলগ্ন আর পি সি সি এল পাওয়ার স্টেশন‌ এর কা‌ছে আরও এক‌টি পাওয়ার স্টেশন কর‌তে মা‌টি ভরা‌টের জন‌্য কো‌টি কো‌টি টাকার ট্রেন্ডার আহ্বান করা হ‌য়ে‌ছে । এই ট্রেন্ডা‌রে যেসব টিকাদারগণ মা‌টি,বালু সর্বরাহ কর‌ছেন তারা আবা‌র বিনামূ‌ল্যে ব্রহ্মপুত্র থে‌কে মা‌টি উত্তলন পূর্বক সরকারের বালু,মা‌টি সরকা‌রের কা‌ছে বি‌ক্রি করে বিল উত্তোলন ক‌রে নি‌য়ে যা‌চ্ছে । সরকা‌রের কা‌ছে এই চক্রটি যে‌ন হা‌কিম হ‌য়ে সরকার‌কেই হুকুম কর‌ছে ।
এরা আবার ক্ষমতাশীন দ‌লের বড় বড় কর্মকর্তা ব‌টে । জনগ‌নের প্রশ্ন সরকার যে শতশত কো‌টি টাকা ব‌্যয় ক‌রে গো‌য়েন্দা সংস্থা না‌মে একা‌দিক সংস্থা লালন পালন কর‌ছে তা‌দের কি এই ব‌্যপা‌রে দেখবা‌লের কিছুই নেই ?
এই বিষ‌য়ে সরকা‌রের উচ্চ পর্যায়ে রি‌পোর্ট জমা হলে ও তার প্রয়োগ হ‌লে সরকার হ‌াজ‌ার হাজার কো‌টি লোপাট থেকে রক্ষা পে‌তেন এবং এ‌তে লাভবান হ‌তেন দেশের জনগন । সূত্র ম‌তে,বাংলা‌দেশ ‌অভ‌্যান্তরীণ নৌ প‌রিবহন কর্তৃপক্ষ(‌বিআইড‌ব্লিও‌টিএ) ২০১৯ সা‌লের ২৭০০ কো‌টি টাকা ব‌্যয়ে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র ন‌দের সং‌যোগ স্থল থে‌কে জামালপুর,শেরপুর,ময়মন‌সিংহ ও কি‌শোরগ‌ঞ্জের টোক পর্যন্ত নদী খন‌নে বরাদ্ধ দেয়া হ‌য়ে‌ছে । এ বরাদ্ধ দেয়া কাজ ২০২৪ সা‌লের জুন মা‌সে শেষ হওয়ার কথা । কিন্তু,এখা‌নে এক‌টি অসাধু চক্র স্থানীয় প্রশাস‌নের যোগ সাজস ক‌রে অপ‌রিক‌ল্পিত ভা‌বে নদ খনন কর‌ছে । ফ‌লে ব্রহ্মপুত্র খা‌লে প‌রিণত হ‌চ্ছে । এ‌তে ক‌রে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন পূরণ না ক‌রে জনগন‌কে ব‌ঞ্চিত করা হ‌চ্ছে । দীর্ঘদিন যাবৎ বিদ‌্যাগ‌ঞ্জ,বেগুনবা‌ড়ি,সু‌তিয়াখালীর বয়ড়া পর্যন্ত ৫০-৬০টি ড্রেজার ও এস‌কো বেটার দি‌য়ে প্রায় ৫০০ কো‌টি টাকার মা‌টি ও বালু কে‌টে নি‌য়ে যা‌চ্ছে ব‌লে প্রত্যেক্ষ দর্শীরা জানান । বিদ‌্যাগঞ্জ ও বেগুনবা‌ড়ি এলাকার বালু খেকু চক্রটির নেতৃত্ব দি‌চ্ছে আব্দুল হক,কেরামত আলী কেরু । কাচা‌রিঘাট এলাকার কাউ‌ন্সিলর জামাল উ‌দ্দিন,আনু মড়ল সহ প্রায় পঞ্চাশ জ‌নের চক্র ।

মা‌ঝে মা‌ঝে এলাকাবাসী অভিযোগ দি‌লে ভ্রাম‌্যমান আদল‌তের মাধ‌্যমে নাম মাত্র জ‌রিমানা ক‌রে এ‌দের ছেড়ে দি‌চ্ছে । পরব‌র্তিতে তারা আবার প্রশাস‌নের যোগ সাজ‌শে মা‌টি কাটা চা‌লি‌য়ে যা‌চ্ছে । গত ১০ মার্চ(বৃহস্প‌তিবার) ব্রহ্মপুত্র ন‌দের কাচা‌রি ঘা‌টের পূর্ব পা‌র্শে অ‌বৈধ ভা‌বে বালু উত্তল‌নের সময় অ‌ভি‌যো‌গের প্রেক্ষি‌তে সদর উপ‌জেলার সহকারী ক‌মিশনার(ভূ‌মি) এএইচএম ইবনে মিজান ব্রহ্মপুত্র নদের কাচারিঘাটের পূর্বপাড়ে ঘটনাস্থলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় এবং ঘটনাস্থল থেকে ভ্যাকু চালক সোহেল, ফেরদৌস আলমসহ চার জনকে আটক করেন । এ সময় আটক সোহেল ভ্রাম্যমাণ আদালতকে বলেন, বালু তোলা হচ্ছে জামাল হোসেন ও আনু মোড়লের নি‌র্দেশে ।

পরে তাদেরকে এক লাখ টাকা জরিমানা ও এক মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর এসিল্যান্ড এএইচএম ইবনে মিজান । এসময় সিটি করপোরেশনের ৩১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জামাল হোসেন ও আনু মোড়ল জরিমানার টাকা পরিশোধ করে আটক কৃতদের ছাড়িয়ে নেন।

কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালত চলে যাওয়ার আধাঘন্টা পরেই বালু উত্তোলন ও মাটি কাটা শুরু করে এই চক্রটি । এ বিষয়‌টি প্রশাসন‌কে অব‌হিত করার প‌রে মা‌টি ও বালু উত্তল‌নের কাজ বন্ধ হয় নি । এ রি‌পোর্ট লেখা পর্যন্ত মা‌টি ও বালু উ‌ত্তোলন অব‌্যাহত র‌য়ে‌ছে । রি‌পোর্ট তৈ‌রির পূ‌র্বে বি‌কে‌লে জেলা প্রশাসক মোঃ এনামুল হক কে ফোন কর‌লে জরুরী মি‌টিং এ বক্তব‌্যরত অবস্থা তার সা‌থে এ বিষ‌য়ে কথা বলা যায় নি এবং সদর উপ‌জেলার সহকারী কম‌শিনার(ভূ‌মি) এএইচএম ইব‌নে মিজান এর সা‌থে একা‌ধিকবার মোবাই‌লে যোগা‌যোগ কর‌লেও তি‌নি মোবাইল রি‌সিভ ক‌রেন নি ।
নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক নদ তীরবর্তী বাসিন্দারা জানান, প্রভাবশালী ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জামাল হোসেন ও আনু মোড়লের নেতৃত্বে সারা দিনরাত ভ্যাকু, ট্রাক এবং হ্যান্ডট্রলী দিয়ে মাটি ও বালু পরিবহন করায় গ্রামীণ সড়কগুলো ধসে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। আবার বালু তোলার কারণে নদের তীরবর্তী ফসলি জমি ও বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়েছে।
ড্রেজার ও শ্যালো মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু তুলায় নদের তীরে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বালু উত্তোলনের কারণে বিভিন্ন স্থানে ধসের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যেকোনও সময় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধসে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তারা আরো বলেন, স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় এদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলেনা। মাঝে মাঝে প্রশাসন থেকে অভিযান চালিয়ে মেশিনপত্র জব্দ করা হলেও কিছুদিন পর আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। এ অবস্থা বিরাজ করলে আগামী দু’তিন বছরের মধ্যে নদের পাশের ফসলি জমি, ভিটে ও বাড়িঘর ধসে নদগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ