Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মন্ত্রী-আমলাদের দুর্নীতি নিয়ে লিখলে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হচ্ছে

বিটিআরসি-তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিবর্তনমূলক নীতিমালা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০২২, ১২:০৬ এএম

আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্র এবং সরকারকে এক করে দেখে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সরকারের মন্ত্রী-আমলাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ কিছু লিখলেও তারা সেটাকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রচার বলে মনে করে। এজন্য রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাসহ ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা দিয়ে হয়রানির করা হয়। তাই সরকারের মন্ত্রী-আমলাদের দুর্নীতি যাতে মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা না হয় সেটার রক্ষাকবচ হিসেবে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) ও তথ্য মন্ত্রণালয় দুটি নিবর্তনমূলক নীতিমালা করছে।

গতকাল শনিবার দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। নীতিমালা দুইটি হচ্ছে- ‘দ্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন কমিশন রেগু্েলশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্ল্যাটফর্মস-২০২১’ এবং ‘ওভার দ্য টপ (ওটিটি) কনটেন্টভিত্তিক পরিসেবা প্রদান এবং পরিচালনা নীতিমালা-২০২১’। এই দুটিকে নিবর্তনমূলক উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই নিবর্তনমূলক নীতিমালাটি তৈরি করা হয়েছে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি-অপশাসন, তাদের ভোট ডাকাতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম ও বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ডের বিষয়গুলো প্রচার ঠেকাতে। শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার যে পরিমাণ ইতিহাস বিকৃতি করেছে সেই বিষয়ে কথা না বলার জন্যও তারা এই নীতিমালা ব্যবহার করবে।

তিনি বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট পোক্ত করতেই এই দুইটি নীতিমালা প্রনয়ন করা হয়েছে যাতে করে আরো শক্ত করে ধরা যায়। দেশের জনগণের বাক স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখতে, সংবাদপত্র, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, সামাজিক মাধ্যম এবং দেশি-বিদেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখতে বিটিআরসি এবং তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয়ের এই দুই নীতিমামলাসহ ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন তো খসড়া করেছে। সরকার যদি এই নীতিমালাকে গ্রহন করে তখন তো আমরা অবশ্যই কর্মসূচি দেবো। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই দুইটি নীতিমালা শুধুমাত্র বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের সাথে সাংঘর্ষিকই নয়, বরং জাতিসংঘ ঘোষিত ইউনিভার্সেল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটস(ইউডিএইচআর) এবং ইন্টারন্যাশনাল কনভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস (আইসিসিপিআর) এর পরিপন্থি। সেই সাথে জাতিসংঘের অনুমোদিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ম্যানিলা প্রিন্সিপাল এবং সান্তা ক্লারা প্রিন্সিপালের সিদ্ধান্তের দৃষ্টিতে দেখলে এই দুইটি নীতিমালা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

তিনি বলেন, এই নীতিমালা প্রণয়নের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হচ্ছে সত্যকে আড়াল করে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে জনগনের কন্ঠরুদ্ধ করে একদলীয় বাকশালী কায়দায় ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা। এই নিবর্তনমূলক নীতিমালা কার্যকর হলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দেশি-বিদেশী অনলাইন ভিত্তিক মিডিয়াগুলোর মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং গোপনীয়তার অধিকারকে বাধাগ্রস্থ করবে। পাশাপাশি অনলাইন এনক্রিপশন অকার্যকর করে নিরাপত্তাকে দূর্বল করে ফেলবে। এর ফলে মানবাধিকারের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। সাংবাদিক, বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদ, মানবাধিকার কর্মী এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠি আরো বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক না হয়ে রাষ্ট্রের সাথে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্ব হয় রাষ্ট্রের। কিন্তু আমরা দেখতে পাই, দুই একটি রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্ব হয় আওয়ামী লীগ নামক একটি রাজনৈতিক দলের। এমন কোন রাষ্ট্র যখন বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয় তখন স্বাভাবিকভাবেই দেশের জনগণ এবং মিডিয়ায় সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হতে পারে। বিটিআরসির প্রস্তাবিত নীতিমালার মাধ্যমে সেই প্রতিবাদের মুখে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, নীতিমালার সবচেয়ে আশ্চর্যজনক অংশটি হচ্ছে- ‘কোনো ব্যক্তির প্রতি আক্রমণাত্মক, মিথ্যা, হুমকি বা ভীতি-প্রদর্শক ও অপমানজনক বা মানহানিকর’ বিষয় প্রচার করা যাবে না। অথচ গত এক যুগে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মিথ্যা, মানহানিকর এবং নোংরা অপপ্রচার করা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে। কিন্তু আইনি পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করা হলেও প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, একথা নিশ্চিত যে, আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ওয়ার্ড পর্যায়ের কোনো নেতার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও যদি কোনো কিছু লেখা হয় বা প্রকাশ করা হয় তাহলেও বিটিআরসির এই নীতিমালার মাধ্যমে সেই লেখার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নীতিমালাটি তৈরি করা হয়েছে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি-অপশাসন, তাদের ভোট ডাকাতি, তাদের মানবাধিকার লংঘন এবং গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিষয়গুলোর প্রচার ঠেকাতে।



 

Show all comments
  • Muneer ১৩ মার্চ, ২০২২, ১:০৫ এএম says : 0
    Dhaka to Dubai air ticket 135,000 taka , Nothing to say , this is sonar Bangla ,
    Total Reply(0) Reply
  • Muneer ১৩ মার্চ, ২০২২, ১:০৫ এএম says : 0
    Dhaka to Dubai air ticket 135,000 taka , Nothing to say , this is sonar Bangla ,
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ