মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
এম এইচ খান মঞ্জু
হতদরিদ্রদের ১০ টাকা কেজির চাল নিয়ে চালবাজি কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। প্রতিদিনই সংবাদমাধ্যমে এ সংক্রান্ত দুর্নীতির খবর প্রকাশ পাচ্ছে। দুর্নীতি বন্ধে প্রধানমন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও চোরার দল ও চাটার দলের বেপরোয়া মনোভাবে বাদ সাধা যাচ্ছে না। হতদরিদ্র ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা কেজিতে চাল সরবরাহের কর্মসূচি গরিব মানুষের খুব একটা কাজে লাগছে না। বিতরণকৃত চালের বড় একটি অংশ চলে যাচ্ছে বিত্তবানদের পকেটে। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় রাজনৈতিক টাউটরা নানা কৌশলে ১০ টাকা কেজির চাল আত্মসাতের চক্রান্তে লিপ্ত হচ্ছে। হতদরিদ্রদের বদলে রাজনৈতিক দলের টাউট নেতাকর্মী, চেয়ারম্যান, মেম্বারদের নামেও কার্ড বরাদ্দ করা হয়েছে। হতদরিদ্রদের মধ্যে যারা ১০ টাকা কেজি চালের কার্ড পেয়েছেন তাদের অনেকের কাছ থেকে উৎকোচ নেয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বার বার হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে এ কর্মসূচির কোনো দুর্নীতি বরদাশত করা হবে না। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে হতদরিদ্রদের তালিকা পরীক্ষা করে তাতে অবস্থাপন্নদের নাম থাকলে বাদ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। দুর্নীতির সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু নির্দেশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব যাদের, তাদের কারো কারোর সঙ্গে চাল চোরদের সম্পর্ক গড়ে ওঠার কাক্সিক্ষত সুফল অর্জিত হচ্ছে না। ফলে তাদের সমালোচিত হতে হচ্ছে। তাই বলছি নিজেদের স্বার্থেই ১০ টাকার কেজি চাল বিতরণের কর্মসূচির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান পেতেই সরকারকে লুটেরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি এ ক্ষেত্রে সরকারি দল এ যাবৎ সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারেনি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ১০ টাকা কেজিতে চাল বিতরণের কর্মসূচিতে যে শত শত কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে তার প্রায় সবটুকুই অপচয় ঘটছে। যা বন্ধ না হলে এ কর্মসূচির ফসল সরকারের ঘরে না গিয়ে দুর্নামই শুধু সঞ্চিত হবে। যা না চাইলে সময় থাকতেই সতর্ক হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
অন্যদিকে রাজধানীর খুচরা ও পাইকারি বাজারে চালের দাম বাড়ছে। বিশেষ করে গত এক মাসে অন্য চালের তুলনায় মোটা চালের দাম আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় অসুবিধায় পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন। রাজধানীর কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, গুটি স্বর্ণা, পাড়ি, বিআর আটাশ, হাচকি নাজিরসহ মোটা চালের ৫০ কেজির বস্তা কিনতে ভোক্তাদের ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২শ’ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে। মাস দুয়েক আগেও যা ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টাকায় পাওয়া যেত।
বাজারে রোজার ঈদের পর থেকে মোটা চালের দাম কেজিতে ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা করে বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে মোটা চাল ও চিকন চালের দামের ব্যবধান বর্তমানে খুবই সামান্য। বাজারে চিকন চালের মধ্যে মিনিকেট চালের ৫০ কেজির বস্তা পাইকারি ২২শ’ থেকে ২৪শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল (ভালো) ২৩শ’ টাকা এবং জিরা নাজির ৫০ কেজির বস্তা ২২শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আমাদের প্রধান খাবার ভাত। আর দাম কম হওয়ার কারণে তারা মূলত মোটা চালই কিনে থাকেন। কিন্তু মোটা চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে এখন প্রায় চিকন চালের কাছাকাছি। মোটা চালের দাম অবিলম্বে সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তারা। চালের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে চাল ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকারের কিছু নীতির সুযোগ গ্রহণ করে চাতাল ও মিল মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে লাভ কম হওয়ায় তাদের ব্যবসাতেও ক্ষতি হচ্ছে। অচিরেই চালের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা বন্ধ করতে সরকারের প্রতি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তারা।
এবারে মোটা চালের দাম সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২২ টাকার চাল ৪০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। কেজিপ্রতি এক টাকাও লাভ হচ্ছে না। যারা মোটা চাল কিনত তারা, অধিকাংশই চিকন চালের সঙ্গে ব্যবধান কম হওয়ায় বাধ্য হয়ে চিকন চাল কিনছেন। রাজধানীতে মোটা চালের সরবারহ কম, আর বন্যার সময় সরকার মোটা চাল সংগ্রহ করায় এখন বাজারে চালের সংকট দেখা দিয়েছে। মিল মালিকরা চাল মজুত করার কারণেও মোটা চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ নিলে চালের দাম কমতে পারে। তা না হলে আমন ধান ওঠার আগে চালের দাম আর কমবে না। সরকারের উচিত এ বিষয়গুলো মাথা রেখে কাজ করা।
ষ লেখক : প্রিন্সিপাল, এমএইচ খান ডিগ্রি কলেজ গোপালগঞ্জ, সাবেক সংসদ সদস্য ও গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।