Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আমরা আছি স্বস্তিদায়ক অবস্থায়

করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০২২, ১২:০০ এএম

দেশের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় অনেকটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছেন জানিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনায় আমরা অনেকটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছি। গত বৃহস্পতিবার শনাক্তের হার ১ শতাংশে ছিল; মৃত্যুও ছিল ৩ জনে। করোনাকে আমরা শ‚ন্যের কোটায় নামাতে চাই। এ জন্য সবাইকেই স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর তেজগাঁও কলেজে নার্সিং পরীক্ষা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে বুস্টার ডোজের ক্যাম্পেইন করা হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে এ মুহ‚র্তে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে। আমরা এটিকে নিয়ন্ত্রণেই রাখতে চাই। এ লক্ষ্যে আমরা টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এমনকি টিকা কর্মসূচি ভালোভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। ইতোমধ্যেই আমাদের ২২ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। যার সাড়ে ১২ কোটি প্রথম ডোজ ও সাড়ে ৮ কোটি দ্বিতীয় ডোজ।

জাহিদ মালেক বলেন, বিশেষ ক্যাম্পেইনে এক দিনে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে টিকাদানে ২০০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম স্থানে পৌঁছেছে। এসবের সব কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তার গাইডলাইনে আমরা কাজ করেছি। তিনি বলেন, কয়েকদিনের মধ্যেই দেশে করোনা প্রতিরোধে বুস্টার ডোজের ক্যাম্পেইন শুরু হবে। যারা বুস্টার ডোজ নেয়নি, তারা যেন অতিদ্রæত নিয়ে নেয়, এটাই আমাদের উদ্দেশ্য। দেশে টিকার কোনো অভাব নেই। সরকারের টিকা কিনতে ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। তিনি সবাইকেই স্বাস্থ্যবিধি মানতে এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার আহŸান জানান।

এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব এবং বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মো. সাইফুল ইসলাম বাদল, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট নীতিশ চন্দ্র সরকার, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সিদ্দিকা আক্তারসহ প্রমুখ।

খুলনায় প্রতিদিন একটি আত্মহত্যা
নেপথ্যে দারিদ্র্য হতাশা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার
ডিএম রেজা, খুলনা থেকে
খুলনায় করোনাকালে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়ে গেছে। দারিদ্র্য, প্রেমে ব্যর্থতা, হতাশা পারিবারিক কলহ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার এবং ভারতীয় আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবসহ বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট কারণে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত ৩ বছরে খুলনায় ১৭৩৩টি অপমৃত্যুর ঘটনার মধ্যে ১০৩৬টি ছিল আত্মহত্যা। করোনার মাঝে আত্মহত্যার প্রবনতা অনেকটাই বেড়েছে- এমন তথ্য জানিয়েছেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র। সাধারণ গড় হিসাব করলে খুলনায় প্রতিদিন একজন আত্মহত্যা করছে।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্য মতে, অপমৃত্যুর ঘটনাগুলোর মধ্যে ৬০ থেকে ৬৫ ভাগই আত্মহত্যা। ২০১৯ সালে খুলনায় ৬২৫ টি অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে আত্মহত্যা ছিল ৩০০টি। ২০২০ সালে খুলনায় অপমৃত্যু হয়েছিল ৪৪৫টি, আত্মহত্যা ছিল ২৮০টি। ২০২১ সালে অপমৃত্যু ৫৫৯টি আত্মহত্যা ছিল ৩৮৭টি । ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অপমৃত্যু সংখ্যা ৫৩ টি যেখানে আত্মহত্যার সংখ্যা ৩৫ টি, ফেব্রæয়ারিতে ৫১টি অপমৃত্যুর মধ্যে আত্মহত্যা ৩৪টি।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আরএমও ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের তথ্য মতে করোনার পূর্বে যেখানে আত্মহত্যার ছিল ৪৫ শতাংশ সেখানে ২০২২ সালে তা এসে দাঁড়ায় ৬৬ শতাংশে। মানসিক দুশ্চিন্তা, পারিবারিক কলহ, বেকারত্ব, প্রেমে ব্যর্থতা ইত্যাদি আত্মহত্যার মূল কারণ। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা বেশি।

খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান আল মামুন বলেন, আত্মহত্যার ঘটনাগুলোর নেপথ্যে অনেক সময়ই দেখা যায় খুব তুচ্ছ ঘটনা থাকে। এমন দেখা গেছে, বাবা মা মোবাইল ফোন কিনে না দেয়ায় সন্তান আত্মহত্যা করেছে। প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না পেয়ে আত্মহত্যা, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে আত্মহত্যা, পরিবারের সদস্যদের উপর অভিমান করে আত্মহত্যা করে টিনএজাররা। আবার ঋণগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করার মত ঘটনাও রয়েছে। পরকিয়ার জেরে আত্মহত্যা করার অসংখ্য নজির রয়েছে।

খুলনা সরকারি বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, যারা আত্মহত্যা করেন তারা সামাজিক ও মানসিকভাবে অতিরিক্ত বিষন্নতায় ভুগেন। আত্মহননকারী ব্যক্তি নিজেকে পৃথিবীতে অর্থহীন মনে করেন। দারিদ্র্য, প্রেমে ব্যর্থতা, হতাশা পারিবারিক কলহ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার এবং ভারতীয় আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবসহ বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট কারণে আত্মহত্যার ঘটনাগুলো ঘটছে। সারাদেশেই করোনাকালে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে।

মহিলা অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক হাসনা হেনা বলেন, নারী স্বাবলম্বী না হলে পরিবারের নানামুখী অশান্তি সৃষ্টি হয় আর এ কারণেই নারীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। স¤প্রতি, শিশু কিশোরদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবনতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে শিশু-কিশোরদের সামাজিক দক্ষতা বাড়াতে, তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ দেওয়া, আত্মহত্যার উপকরণ, যেমন ঘুমের ওষুধ ও কীটনাশকের সহজলভ্যতা কমানো, প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রি বন্ধ করা, যে কোনো ধরনের মানসিক সমস্যা বা আত্মহত্যার ইঙ্গিত পেলে দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিকটজনকে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

খুলনা নাগরিক আন্দোলনের মহাসচিব এসএম দেলোয়ার হোসেন বলেন আমাদের সমাজে পিতা মাতা তাদের সন্তানদের সময় দিচ্ছেন না। অনেক ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীকে রেখে বিদেশ চলে যাচ্ছে আর এতে করে ঘরে অশান্তি বাড়ছে। এছাড়া করোনাকালীন সময়ে চাকরি বা রোজগার হারানোর কারণে হতাশা থেকেও আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বাস্থ্যমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ