বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
জামালপুরের সরিষাবাড়ী সাব রেজিস্ট্রার অফিসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রাণনাশের হুমকি ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছেন সাবেক পৌর কাউন্সিলরকে। পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সরিষাবাড়ী অনার্স কলেজের উপাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান এবং ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর সোহেল রানার মুঠোফোনে কথোপকথনের একটি রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে মিজানুর রহমানকে বলতে শোনা যায়, "কুত্তার বাচ্চা তোরে আমি মাইরা ফালামু, তোর কোন বাপ আছে বলিস মিজান প্রফেসর ফোন দিছিলো।"
এদিকে আগামীকাল (শনিবার) সরিষাবাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে উপাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান ফের সভাপতি প্রার্থী। এরআগেই শুক্রবার (১১ মার্চ) সকাল থেকে তার আপত্তিকর কল রেকর্ড ফাঁসের ঘটনায় দলের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সম্মেলন স্থগিতের দাবী করেছেন অনেকেই।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সরিষাবাড়ী সাব রেজিস্ট্রার অফিসে দীর্ঘদিন ধরে দেদার চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দু'টি পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলে আসছে। এ নিয়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ হারুন-অর-রশিদ গ্রুপের পরিচয়ধারী গ্রুপের মধ্যে কয়েক দফায় সংঘর্ষ, হামলা ও পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনা ঘটে। সোহেল রানা সাব রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখক ও স্ট্যাম্প ভেন্ডার। তিনি একপক্ষের সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত থাকায় পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান তাকে ফোন করে মেরে ফেলার হুমকি ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন বলে জানা গেছে।
কল রেকর্ডে শোনা যায়, মিজানুর রহমান প্রথমেই বলেন, রেজিস্ট্রি অফিসে যাও নাকি? সোহেল রানা জি স্যার বলার সাথে সাথে তিনি বলতে থাকেন, 'তুমি আর রেজিস্ট্রি অফিসে ঢুকবা না, ঢুকলে নিজ দায়িত্বে ঢুকবা'। একপর্যায়ে তিনি চিৎকার করে বলেন, 'আমি পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি, ১২টার দিকে আসবো, তোর চাপার দাঁত আমি যে কয়টা আছে সে কয়টা দাঁড়াই থাইকা তুলমু। কুত্তার বাচ্চা তোরে আমি মাইরা ফালামু, কোন বাপ আছে বলিস যে মিজান প্রফেসর ফোন দিছিলো, ফিরাইতে বলিস'। ২ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড রেকর্ডের পুরো সময় জুড়ে সোহেল রানাকে কাঁচুমাচু স্বরে বারবার স্যার স্যার করতে শোনা যায়।
মিজানুর রহমানকে আরো বলতে শোনা যায়, 'তোর হাড্ডি মাংস আমি এক কইরা ফালামু। নিয়ামত, লেবু, তুই থাকিস, আমি আসতেছি। তোর বাপের উপর ভর কইরা, তোর মুকুল বাপ, মুরাদ (সাবেক প্রতিমন্ত্রী) বাপের উপর ভর কইরা... (এরপর বাবা-মা তুলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল এবং পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিতে থাকেন।
বিষয়টি স্বীকার করে পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সোহেল রানা বলেন, কল রেকর্ডটি প্রায় তিনমাস আগের। সরিষাবাড়ী সাব রেজিস্ট্রার অফিসে নিয়ামত আলী, আবু হাসান তরফদার লেবু, জাহাঙ্গীর আলম শাহীন গংদের সাথে না থাকার জন্য আমাকে কল দিয়ে তিনি সাবধান করেছিলেন। ওইসময় যারা আমার সাথে ছিলেন তারাই রেকর্ডটি শোনার ছলে হয়তো রেখে দিয়েছিলেন। শনিবারের পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ওই পক্ষটি রেকর্ডটি ফাঁস করেছে। বিষয়টি ইতোপূর্বে উভয়ের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং বর্তমানে তাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই বলে তিনি দাবী করেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে সরিষাবাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সরিষাবাড়ী অনার্স কলেজের উপাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বলেন, সরিষাবাড়ী সাব রেজিস্ট্রার অফিসে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ চৌধুরীর মনোনিত দুলাল-কামাল কমিটিকে না মেনে একটি চক্র চাঁদাবাজি করে আসছে। এ বিষয়টি সাবধান করার জন্য সোহেল রানাকে ফোন করেছিলাম। তবে আমাদের মধ্যে এখন কোনো ঝামেলা নেই।
তবে তার মতো মানুষের অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও হত্যার হুমকি দেওয়া ঠিক হয়নি বলে স্বীকার করেন।
এব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ হারুন-অর-রশিদ বলেন, কল রেকর্ড ফাঁসের বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছি, রেকর্ডটি শুনিনি। এটি না শুনে মন্তব্য করতে পারবো না।
তবে সাব রেজিস্ট্রার অফিসের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, চাঁদাবাজি করা অপরাধ, চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য সাবধান করাও অপরাধ!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।