Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খোঁটা দেয়ার পরিণাম

মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০২২, ১২:০৯ এএম

যে ব্যক্তি পরোপকার করে আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের জন্য, পার্থিব স্বার্থে নয়, সে কখনও এদিকে লক্ষ করে না যে, সে যার উপকার করেছে তার পক্ষ হতে কি রকম আচরণ পাচ্ছে। তাই তার খোঁটা দেয়ারও কোনো অবকাশ আসে না।

খোঁটা দিতে পারে তো কেবল সেই, যে উপকার করে পার্থিব প্রাপ্তির আশায়। সে যখন তার আশানুরূপ ফল না পায়, তখন হতাশ হয়। সেই হতাশারই প্রকাশ ঘটে খোঁটাদানের মাধ্যমে। অনেক সময় ইখলাসের সঙ্গে উপকার করার পরও নগদপ্রাপ্তির দিকে নজর চলে যায়। ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে যে বিনিময় তার পাওয়ার ছিল, তা থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। কাজেই পরোপকারের সুফল লাভের জন্য শুরুর ইখলাসই যথেষ্ট নয়, পরবর্তী সময়ে সেই ইখলাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকাও জরুরি। অন্যথায় তার ইখলাসের সঙ্গে কৃত পরোপকারও নিষ্ফল হয়ে যায়। তাই তো আল্লাহ তা’আলা বলেন : ‘যারা নিজ সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে আর ব্যয় করার পর খোঁটা দেয় না এবং কোনো কষ্টও দেয় না, তারা নিজ প্রতিপালকের কাছে তাদের প্রতিদান পাবে। তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’ (সূরা বাকারা : ২৬২)।

এ আয়াতে জানানো হচ্ছে- আল্লাহর পথে কৃত ব্যয়ের সুফল লাভের জন্য শর্ত হলো, পরবর্তীকালে সেই দানের জন্য কোনোরূপ খোঁটা না দেয়া এবং কোনো কষ্ট না দেয়া। বলা বাহুল্য, কোনো দান আল্লাহর পথে হয় তখনই, যখন তাতে ইখলাস থাকে। তাহলে এই আয়াত দ্বারা বোঝা গেল, কেবল দানকালীন ইখলাসই যথেষ্ট নয়, বরং দানের পরও ইখলাস রক্ষা জরুরি। খোঁটা দেয়া ইখলাসের পরিপন্থী। কেননা খোঁটা দেয়াই হয় পার্থিব প্রত্যাশা পূরণ না হলে।

খোঁটা দ্বারা কেবল দান-খয়রাত ও পরোপকারের ছওয়াবই নষ্ট হয় না; বরং এটা একটা কঠিন পাপও বটে। কেননা এর দ্বারা উপকৃত ব্যক্তির অন্তরে আঘাত দেয়া হয়। মানুষের মনে আঘাত দেয়া কবীরা গুনাহ। সুতরাং খোঁটা দেয়া ইসলাম ও ঈমানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কেননা মুসলিম বলাই হয় তাকে, যার হাত ও মুখ থেকে সকল মুসলিম নিরাপদ থাকে (সহীহ বুখারী : ১০)। আর মু’মিন সেই, যার ক্ষতি থেকে সকল মানুষ নিরাপদ থাকে (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ১২৫৬১)। এজন্যই খোঁটা দেয়াকে কুরআন মাজীদে কাফের-বেঈমানের কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইরশাদ হয়েছে : ‘হে মু’মিনগণ! খোঁটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-সদকাকে সেই ব্যক্তির মতো নষ্ট করো না, যে নিজের সম্পদ ব্যয় করে মানুষকে দেখানোর জন্য এবং আল্লাহ ও পরকালে বিশ^াস রাখে না। সুতরাং তার দৃষ্টান্ত এরকম, যেমন এক মসৃণ পাথরের ওপর মাটি জমে আছে, অতঃপর তাতে প্রবল বৃষ্টি পড়ে এবং তা সেই মাটিকে ধুয়ে নিয়ে যায় এবং সেটিকে পুনরায় মসৃণ পাথর বানিয়ে দেয়। এরূপ লোক যা উপার্জন করে, তার কিছুমাত্র তারা হস্তগত করতে পারে না। আর আল্লাহ এরূপ কাফেরদের হেদায়াতপ্রাপ্ত করেন না।’ (সূরা বাকারা : ২৬৪)।

অর্থাৎ খোঁটা দেয়া কাফেরদেরই বৈশিষ্ট্য। তারা যেহেতু আখিরাতে বিশ্বাস করে না, তাই ছওয়াবেরও কোনো আশা থাকে না। আশা থাকে কেবল নগদপ্রাপ্তি। হয় সে ব্যক্তি তাকে আরো বেশি দেবে, নয় তার অনুরূপ উপকার তারও করবে। অন্ততপক্ষে তার গুণগান করে তো বেড়াবেই। যখন এর কোনোটা পায় না, তখন মনে করেÑ বৃথাই টাকা-পয়সা নষ্ট করল।

এভাবে সে হতাশার শিকার হয় আর নিমকহারাম, অকৃতজ্ঞ ইত্যাদি বলে গালাগাল করে। এখন মু’মিন ব্যক্তিও যদি খোঁটা দিয়ে বসে, তবে তা কাফেরসুলভ আচরণই হলো। এর দ্বারা প্রমাণ হবেÑ দান বা উপকার করার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি তার উদ্দেশ্য ছিল না। যেমন কাফের ব্যক্তির সেরকম উদ্দেশ্য থাকে না। আর যে দান-খয়রাত আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির জন্য হয় না।

তার পরিণাম সম্পর্কে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে : হাশরের দিন আল্লাহ তা’আলা এরূপ ব্যক্তিকে বলবেনÑ তোমাকে আমি যে অর্থ-সম্পদ দিয়েছিলাম, তা দ্বারা তুমি আমার জন্য কী করেছ? সে বলবে, হে আল্লাহ! আমি তা তোমার পথে ব্যয় করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। তুমি তো এ জন্য করেছিলে যে, লোকে তোমাকে দাতা বলবে। তা বলাও হয়েছে। অর্থাৎ যে উদ্দেশ্যে দান করেছিলে তা পেয়ে গেছ। আজ আমার কাছে তোমার কোনো বদলা নেই। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসতাদরাকে হাকেম : ২৫২৮)।



 

Show all comments
  • Nurul Islam Nur ১১ মার্চ, ২০২২, ৭:৩৭ এএম says : 0
    কারো উপকার করে খোঁটা দেওয়া একটি বিশ্রি অভ্যাস। এটা মানুষের ব্যক্তিত্বকে ছোট করে দেয়। দেখা যায়, একশ্রেণীর মানুষ দান-খয়রাত করে এবং ঋণকর্জ দিয়ে পরক্ষণেই খোঁটা দেয়।
    Total Reply(0) Reply
  • মনিরুল ইসলাম ১১ মার্চ, ২০২২, ৭:৩৭ এএম says : 0
    কাউকে উপকার করতে চাইলে, নিঃস্বার্থভাবেই করবো। উপকার করে খোঁটা দিতে যাবো না। নিজের ব্যক্তিত্ব ছোট করার পাশাপাশি উপকারের সওয়াব নষ্ট করবো না। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Umar Faruk ১১ মার্চ, ২০২২, ৭:৩৭ এএম says : 0
    হাদিসে আছে, তিনজন বেহেশতে যেতে পারবে না। তারা হচ্ছে মাতাপিতার অবাধ্য সন্তান, মাদকসেবী, উপকার ও দানদক্ষিণার প্রচার ও খোঁটাদাতা। (নাসায়ি শরিফ)
    Total Reply(0) Reply
  • Nishi Islam ১১ মার্চ, ২০২২, ৭:৩৮ এএম says : 0
    মূলত যারা সংকীর্ণমনা তারাই উপকার করে অপরকে খোঁটা দেয়। আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তাদের সাথে কথা বলবেন না বলে হাদিসে এসেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Jahangir Hossain ১১ মার্চ, ২০২২, ৭:৩৮ এএম says : 0
    খোঁটা দিলে উপকারের সওয়াব বিনষ্ট হয়ে যায়। তাই খোঁটা দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য অন্যায় ও কবিরা গুনাহ হিসেবে বিবেচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • Helal Masud ১১ মার্চ, ২০২২, ৭:৩৮ এএম says : 0
    কাউকে সহযোগিতা কিংবা উপকার করে খোঁটা দেওয়া ইসলামে নিকৃষ্ট অপরাধ।
    Total Reply(0) Reply
  • Yousman Ali ১১ মার্চ, ২০২২, ৯:১৫ এএম says : 0
    আল্লাহ আমাদের সকলকে ধৈর্য ও বোঝার তৌফিক দিক আমিন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খোঁটা

১২ মার্চ, ২০২২
আরও পড়ুন