Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নোয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের বেহাল দশা

নোয়াখালী ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০২২, ৪:২৮ পিএম

 ২৫০শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী সরকারি জেনারেল হাসপাতালে জরুর ওষুধপত্রের পাশাপাশি চিকিৎসক ও সেবিকাদের ভালো সেবার প্রত্যাশায় সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন রোগী সাধারন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। এক শ্রেনীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও গাফিলতির কারণে সুস্থ হতে এসে আরেক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন রোগীরা।

জেনারেল হাসপাতালের ভেতর-বাইরে ময়লা-আবর্জনা এবং ওষুধের বৈজ্যের কারনে খোদ কর্মচারীরাও চিকিৎসাসেবা নেয়ার ভরসা পান না।

হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, চিকিৎসক, নার্স, আয়া ও সুইপার থেকে শুরু করে কেউ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে অনীহা পরিলক্ষিত হয়।। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আশ্চর্যজনকভাবে ভূমিকাহীন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, শয্যা সংখ্যার চাইতে অতিরিক্ত রোগী ও তাদের স্বজনদের কারণেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যায় না।

জানা গেছে, ১৯৭২ সালে নির্মিত হাসপাতালটি ক্রমান্বয়ে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। ঐতিহ্যবাহী ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি নিম্ন আয়ের লোকজন ও মধ্যবিত্তদের চিকিৎসাসেবার জন্য অন্যতম ভরসাস্থল ছিল। প্রতিদিন নোয়াখালী ও এর আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলার শতশত রোগী সেখানে আসে সেবা নিতে। তবে হাসপাতালটির যে চিত্র তাতে রোগীরা সুস্থ হওয়ার চাইতে নতুন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিই বেশি।

গত কয়েক বছর হাসপাতালটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও পরিবেশগত মান উল্টো দিকে। নোংরা টয়লেট, যত্রতত্র ছড়ানো ময়লার স্তূপ, বিছানাপত্রে ছারপোকা-তেলাপোকাসহ বিভিন্ন পোকামাকড়ের বসতি। নোংরা পরিবেশের কারণে শুধু যে রোগীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা নয়। রোগীর স্বজনরাও আক্রান্ত হচ্ছেন নানা সংক্রামক রোগে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে তেলাপোকা, ছারপোকা, মশা, মাছিসহ বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়ের উৎপাত। জরুরি বিভাগের ঠিক পাশেই রয়েছে খোলামেলা ময়লার ডাস্টবিন। ডাস্টবিনের চারপাশের রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে আবর্জনা। হাসপাতালে আসা রোগীদের যেন এই আবর্জনার স্তূপ দিয়েই স্বাগত জানানো হচ্ছে!

হাসপাতালে ঢোকার পর অবস্থা প্রায় একই রকম। ওয়ার্ডগুলোর মেঝেতে টিস্যু, ফলের খোসা, তুলা, কাগজের টুকরো যেখানে সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ভবনগুলোর দেয়ালগুলোও নোংরা। যেখানে সেখানে কফ থুতু পানের পিকের ছোপ।

তবে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হাসপাতালের টয়লেটগুলোর। নাকে-মুখে কাপড় না চেপে সেগুলোর সামনে দিয়েই যাওয়া দায়। আর ভেতরের অবস্থা ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়। টয়লেট উপচে পড়ছে ময়লা পানি। বেসিন উপচে পড়েছে ময়লায়। মেঝে খাবারের উচ্ছিষ্ট থেকে শুরু করে মল-মূত্রে সয়লাব।

রোগীদের বেডের বিছানো চাদরগুলোও নোংরা। কয়েক রোগী জানালেন, অনেক সময় সপ্তাহ পেরিয়েও চাদরগুলো পরিবর্তন করা হয়না।

কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাও ঠিকমতো কাজ করে না। তারা শুধু লোক দেখানো পরিষ্কার করে। তারা তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করলে হাসপাতাল আরও বেশি পরিষ্কার থাকত।

হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রিনা আক্তার নামে এক তরুণী বলেন, খরচ কম বলেই নিরুপায় হয়েই সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে আসি। কিন্তু হাসপাতালের যা পরিবেশ এখানে রোগী সুস্থ্য হওয়ার বদলে আরও অসুস্থ্য হয়ে পড়বে। এর চাইতে ডাস্টবিনের পাশের ফুটপাতে থাকাও ভালো।
তবে প্রশাসনিক এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সেখানকার পরিবেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন। হাসপাতালের এই অংশটি দারুণ পরিষ্কার, কিছুটা পরিপাটি।

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ে হাসপাতালের তত্বাবধায়ক বলেন, আউটডোরে সেবা নিতে আশা রোগী এবং যারা করোনার টিকা নিতে আসে তাদের জন্য নতুন টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। আউটডোরের রোগীদের অসন্তোষ থাকার কথা নয়।

তিনি বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে বেড ৪০টি হলেও রোগী ভর্তি থাকে ১২০ জন। এই রোগীদের সঙ্গে ২-৩ জন করে অ্যাটেনডেন্সও থাকে। বাথরুমটা করা হয়েছে কিন্তু ৪০ জনের জন্য। ব্যবহার করছে ৩০০ জনের বেশি মানুষ। এত বেশি লোক হলে তাদের মেইনটেন করাও কষ্টকর। এ ছাড়া উন্নয়ন কাজ চলার কারণে কিছু বাথরুম বন্ধ আছে। এজন্য হয়তো একটু কষ্ট হচ্ছে।

অতিরিক্ত রোগীর চাপের কারণে বিছানার চাদর অনেক সময় ঠিকমতো দেয়া যায় না স্বীকার করে তত্বাবধায়ক হেলাল উদ্দিন বলেন, অতিরিক্ত রোগী এবং তাদের স্বজনদের চাপ সামলাতে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতায় মাঝে মাঝে এমনদশা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ