বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মহান রাব্বুল আলামীন উম্মতে মোহাম্মাদীকে মধ্যমপন্থী উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব ও গৌরব প্রদান করেছেন। আল কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে : এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যমপন্থী উম্মত করেছিÑ যাতে করে তোমরা মানবমণ্ডলির জন্য সাক্ষ্যদাতা হও এবং রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষ্যদাতা হন। (সূরা বাকারাহ : ১৪৩)। এই আয়াতে কারীমায় ‘ওয়াছাত’ অর্থাৎ মধ্যমপন্থী শব্দটির মাঝেই রয়েছে সমুজ্জল এক দিকে নির্দেশনা এবং ‘শুহাদা’ শব্দের মাঝেও রয়েছে সত্যের এক বাস্তব রূপ। আসুন, এবার সে দিকে নজর দেয়া যাক।
আল কোরআনে ‘ওয়াছাত’ শব্দটি পাঁচটি রূপে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন : (ক) ওয়াছাতান রূপে সূরা বাকারাহ-এর ১৪৩ নং আয়াতে। (খ) আওছাতি রূপে সূরা মায়েদাহ-এর ৮৯ নং আয়াতে। (গ) আওছাতুহুম রূপে সূরা কলম-এর ২৮ নং আয়াতে। (ঘ) ওয়াছাতনা রূপে সূরা আদিয়াত-এর ৫নং আয়াতে। (ঙ) আর আল বুছতা রূপে সূরা বাকারাহ-এর ২৩৮ নং আয়াতে।
‘ওয়াছাত’ শব্দের ব্যবহারিক অর্থ হলো-উৎকৃষ্ট বিষয়, মধ্যমপন্থী ও ন্যায় পরায়ন। এই তিনটি অর্থই ওয়াছাত শব্দটির অর্থ ও মর্মকে বিস্তৃতভাবে তুলে ধরেছে। এতদপ্রসঙ্গে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : কিয়ামতের দিন হযরত নূহ (আ.) ও তাঁর উম্মাতকে আল্লাহপাকের দরবারে হাজির করা হবে। তখন আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত হযরত নূহ (আ.)-কে জিজ্ঞেস করবেন, তুমি কি আবার বাণী পৌঁছিয়েছ? তিনি বলবেন, হে আমার পরওয়ারদিগার! হ্যাঁ, আমি পৌঁছিয়েছি।
তখন আল্লাহ জাল্লা শানুহু তাঁর উম্মতকে জিজ্ঞেস করবেন : নূহ কি আমার বাণী তোমাদের নিকট পৌঁছিয়েছে? তারা বলবে, না, আমাদের নিকট কোনো নবীই আগমন করেননি। তখন আল্লাহ তায়ালা নূহকে বলবেন, তোমার জন্য সাক্ষ্য দিবে কে? তিনি বলবেন, হযরত মোহাম্মাদ (সা.) এবং তাঁর উম্মত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তখন আমরা সাক্ষ্য দেব। নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহ পাকের বাণী পৌঁছিয়েছেন। আর এটিই হলো আল্লাহ তায়ালার বাণী-আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে মধ্যমপন্থী উম্মত করেছি, যেন তোমরা মানব জাতির ওপর সাক্ষী হও। আর ‘আল ওয়াছাত’ শব্দের অর্থ হলো ন্যায়পরায়ণ। (সহীহ বুখারী : ৪/৩৩৩৯)।
অনুরূপভাবে সকল নবীগণের উম্মতেরা তাঁদের প্রচারকার্য, চেষ্টা ও পরিশ্রম, সাধ্য সাধনাকে অস্বীকার করে উচ্চ স্বরে বলতে থাকবে-দুনিয়ার জীবনে আমাদের নিকট কোনো নবী ও রাসূল আগমন করেননি, কোনো আসমানী কিতাবও পৌঁছেনি। তখন উম্মতে মোহাম্মাদী পয়গাম্বরগণের পক্ষে সাক্ষ্যদাতা হিসেবে উপস্থিত হবেন এবং এই সাক্ষ্য প্রদান করবেন যে, নবী ও রাসূলগণ সকল যুগেই আল্লাহ পাকের নিকট হতে প্রাপ্ত কিতাব ও হেদায়েত তাদের উম্মতগণের নিকট পৌঁছিয়েছেন এবং তাদেরকে হেদায়েতের পথে আনয়ন করার জন্য সকল প্রকার চেষ্টা ও পরিশ্রম করেছেন।
তখন পূর্ববর্তী আম্বিয়াগণের অবাধ্য উম্মতেরা উম্মতে মোহাম্মাদীর সাক্ষ্যে আপত্তি উত্থাপন করে বলবে আমাদের যুগে উম্মতে মোহাম্মাদীর কোনো অস্তিত্বই ছিল না, তাদের নাম নিশানাও ছিল না। আমাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তাদের জানার বা দেখার কোনো প্রশ্নই আসে না। সুতরাং তাদের সাক্ষ্য আমাদের ব্যাপারে কেমন করে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?
এ সময়ে উম্মতে মোহাম্মাদী এই উত্তর প্রদান করবে যে, যদিও পূর্ববর্তী উম্মতগণের সময়ের আমাদের অস্তিত্ব ছিল না, তবুও আমাদের নিকট তাদের অবস্থার কথা, তাদের যাবতীয় তথ্যাবলি আল কোরআন তুলে ধরেছে এবং বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ মুস্তাফা আহমাদ মুজতাবা (সা.) তাদের অবস্থার কথা বিবৃত করেছেন। তাই, আমরা শ্রেষ্ঠ নবীর বাণী ও আল কোরআনের ওপর সর্বাত্মক ঈমান আনয়ন করেছি এবং সত্য বলে স্বীকার করেছি।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দেয়া তথ্য এবং আল কোরআনের দিক নির্দেশনা আমাদের চাক্ষুষ দেখার চাইতেও অধিক সত্য। অতএব আমাদের দেয়া সাক্ষ্য অবশ্যই গ্রহণ যোগ্যতার দাবি রাখে। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) উপস্থাপিত হবেন এবং উম্মতের সাক্ষ্যের সমর্থন করবেন এবং আল্লাহপাক তা কবুল ও মঞ্জুর করে নেবেন। উপরোক্ত আয়াতে কারীমায় এই বিশেষত্বটির কথাই তুলে ধরা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।