Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণাঞ্চলে ১৫ লক্ষাধিক টন শীতকালীন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যে মাঠে মাঠে কৃষি যোদ্ধাগন

বছরে উৎপাদন ২১ লাখ টন

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০২২, ৮:৪০ এএম

প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করেই বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলার কৃষি যোদ্ধাগন সবজি আবাদ ও উৎপাদনে বিশেষ অবদান রাখছেন। দেশে যে প্রায় ১ কোটি ৯৮ লাখ টন শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সবজি উৎপাদন হচ্ছে তার প্রায় ২১ লাখ টনই আসছে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলা থেকে। নিকট অতীতেও দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের সবজির ওপর যে নির্ভরতা ছিল এ অঞ্চলের, তা ইতোমধ্যে অনেকটাই হ্রাস পেতে শুরু করেছে। গত দেড় দশকে এ অঞ্চলে সবজির আবাদ ও উৎপাদন বেড়েছে তিনগুনেরও বেশী। কৃষিবীদদের মতে, ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট-বারি’ উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ও উন্নত মানের সবজি বীজ সহ আবাদ প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছে পৌছলে উৎপাদন প্রায় দ্বিগুনে পৌছানো সম্ভব হবে।

চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৭১ হাজার ২৩৪ হেক্টরে শীতকালীন সবজির আবাদ হচ্ছে। উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে প্রায় ১৬ লাখ ২০ হাজার টন। ভাটি এলাকার পাশাপাশি এবার অগ্রহায়নের অকাল বর্ষনে বিভিন্ন ফসল বিনষ্ট হওয়ায় এঅঞ্চলে এখনো শীতকালীন সবজির আবাদ হচ্ছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন বাড়ীÑঘরের আঙিনায়ও বিপুল পরিমান সবজির আবাদ হচ্ছে। ডিএই’র মতে, বিগত অগ্রহায়নের শেষভাগে অকাল বর্ষনে এ অঞ্চলে শতাধীক কোটি টাকার ফসল বিনষ্ট হওয়ায় কৃষকরা মারাত্মক ধাক্কা খেলেও সে ধকল কাটিয়ে ঘুরে দাড়িয়েছে। ইতোমধ্যে পুনরায় মাঠে মাঠে সবজির আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে উৎপাদন ১৬ লাখ টন অতিক্রম করবে বলেও আশাবাদি কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই।

চলতি রবি মৌসুমে কৃষি মন্ত্রনালয় দেশে প্রায় ১০ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে ২ কোটি টনেরও বেশী শীতকালীন সবজি উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারন করেছে। এরমধ্যে শুধু দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলাতেই প্রায় ৭১ হাজার হেক্টরে শীতকালীন সবজি আবাদে ১৬ লক্ষাধিক টনের বাইরে আরো প্রায় ৩৬ হাজার হেক্টরে গ্রীষ্মকালীন সবজি আবাদের মাধ্যমে সোয়া ৪ লাখ টন শাক-সবজি উৎপাদন হয়েছে। ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদিত লালশাক, পালংশাক, সিম, ফুলকপি, বাধা কপি, গাজর, মুলা ও শালগম সহ বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজি বাজারে এসেছে। তবে এর বাইরে লাউ সহ বেশ কিছু সবজি ১২ মাসই আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে। যা বাজারে রয়েছে। তবে এবার অগ্রহায়নের অকাল বর্ষনের রেশ ধরে বাজারে সব ধরনের সবজির দাম গত কয়েক বছরের তুলনায় কিছুটা বেশী। কৃষকরা এবার কিছুটা বেশী দাম পেলেও অগ্রহয়নের বর্ষনে যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠার বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়।
দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় শীতকালীন সবজি ছাড়াও বোরো ধান, গম ও ভুট্টা সহ বিভিন্ন দানাদার খাদ্য ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে মাঠে রয়েছেন কৃষি যোদ্ধাগন। চলতি রবি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় ১২ লাখ হেক্টরে বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ হচ্ছে। এরমধ্যে শুধু সাড়ে ৩ লাখ হেক্টরে বোরো ধান আবাদের মাধ্যমে ১৫ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে।

ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, ‘দেশে গত বছর ১ কোটি ৯৭ লাখ ১৮ হাজার টনের মত শীতকালীন সবজি উৎপাদন হয়েছে। দেশে উৎপাদিত সবজি ‘অভ্যন্তরীন পূর্ণ চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রপ্তানী বাজার আরো সম্প্রসারিত হচ্ছে’ বলে আশা করছে কৃষি মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র। ডিএই’র মতে ‘বিশে^র প্রায় ১১০টি দেশে বর্তমানে বাংলাদেশের কৃষি পণ্য রপ্তানী হচ্ছে। এরমধ্যে শীতকালীন সবজিই অন্যতম। এ বাজার আরো সম্প্রসারনে সরকার দেশে সবজি আবাদ সম্প্রসারনে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে’ বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রনালয়। যেখানে দক্ষিণাঞ্চলেরও যথেষ্ঠ অবদান রয়েছে।
তবে ভাটির এলাকা হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলে শীতকালীন সবজির আবাদ কিছুটা বিলম্বিত হওয়ায় তা বাজারেও আসে কিছুটা বিলম্বে। ফলে দক্ষিণÑপশ্চিমাঞ্চলের সবজি বরিশাল অঞ্চলের বাজারে আগে আসলেও পরিবহন ব্যায় জনিত কারনে দামও থাকে চড়া। তবে ইতোমধ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন বরিশালের পাইকারী সিটি মার্কেটের সবজির আড়তদারগন।

এদিকে আমাদের ‘বারী’ মাঠ পর্যায়ে গবেষনা কার্যক্রমের মাধ্যমে অন্যসব ফসলের মত বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজিরও উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে। ফলে কম জমিতে অধীক ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। এতেকরে কৃষকগন লাভবান হলেও মাঠ পর্যায়ে বারি’র বীজ ও প্রযুক্তির ব্যাবহার কাঙ্খিত সম্প্রসারন ঘটছে না। অথচ বারি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল বীজ ও আবাদ প্রযুক্তি কৃষকের কাছে পৌছে দিতে পারলে, দেশ কৃষিতে আরো এগিয়ে যাবার পাশাপাশি রপ্তানী বাজার সম্প্রসারনেরও সুযোগ ঘটবে বলে মনে করছেন কৃষিবীদগন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ