পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, অনেকেই আমাকে বলছে ডা. জাফরুল্লাহ এই নির্বাচন কমিশনকে অনেক ভালো বলেছেন, আপনারাও মেনে নেন। আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই ডা. জাফরুল্লাহর সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। এটা তার নিজস্ব মন্তব্য। তিনি সবার শ্রদ্ধার মানুষ, জ্ঞানী মানুষ। কিন্তু এই বিষয়ে তিনি বিএনপির পক্ষে কথা বলার কেউ নন। তার বক্তব্য বিএনপির বক্তব্য নয়।
গতকাল সোমবার ময়মনসিংহ নগরীর নতুন বাজার দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর বিএনপি আয়োজিত বিদ্যুৎ, গ্যাস, চাল, ডাল তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
দ্রব্যমূল্য উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ১১ দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বিভাগীয় ও মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিএনপি।
এরই অংশ হিসেবে ময়মনসিংহে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন যাই হোক, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে নির্বাচন সুুষ্ঠু হবে না। আওয়ামীলীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে জনগণের সাথে বেঈমানী করেছে। শেখ হাসিনা মাথায় হিজাব পড়ে, হাতে তসবি নিয়ে বলেছিল দশ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে, ঘরে ঘরে চাকরি দিবে, বিনা পয়সায় সার দিবে। কিন্তু তারা কিছুই দেয়নি। এটাই হচ্ছে আওয়ামীলীগ। সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখনো সময় আছে চাল, ডাল, তেলের দাম কমাও, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির দাম কমাও এবং জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করুন।
উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, আপনারা যাতে ভোট দিতে না পারেন, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে তাদের মতো সীল মেরে ইভিএম দিয়ে তাদের সরকার গঠন করবে। এটাকে বলা হচ্ছে ‘হাইব্রিড রিগিং’। বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করেছে। সরকার যা হুকুম দেয়, তাই রায় হয়। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। কোনো সত্যতা নাই। দুই কোটি ৩৩ লাখ টাকা এখন সেই ব্যাংকে হয়েছে আট কোটি। একটা পয়সাও সরানো হয়নি। অথচ হাজার হাজার কোটি টাকা সরকারের মন্ত্রী, আমলা ও নেতারা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে সেখানে একটি মামলাও হয় না। বর্তমানে ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। এমন কোনো নেতা নেই, যার নামে মামলা নেই। মামলা আর পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য অনেকেই পালিয়ে ঢাকায় গিয়ে রিকসা চালায়, ভ্যান চালায়, নৈশপ্রহরীর কাজ করে।
তিনি বলেন, ইলিয়াস আলীসহ ৬শ’ নেতাকর্মীকে গুম করেছে। অসংখ্য মানুষ হত্যা করেছে। ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা দিয়েছে। অনেক শিশু তাদের পিতাকে দেখেনি। সেই শিশু এখন বড় হয়ে বাবাকে দেখতে চায়। এসব হত্যাকান্ডের জন্য আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তাদের অর্থবিত্ত বাজেয়াপ্ত করেছে। এটা প্রধানমন্ত্রীর জন্য অপমানজনক। আওয়ামী লীগ এখন জনগণের টাকায় প্রতিমাসে ২০ হাজার ডলার দিয়ে লবিস্ট নিয়োগ করে নিজেদের পাপ ধোয়ার জন্য। কিন্তু পাপ কোনোদিন ধোয়া যাবে না। ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। এদেরকে জবাব দিতে হবে। নির্দেশদাতাসহ যারা এদেরকে হুকুম দিয়েছে এই রক্ত বন্যার জন্য তাদেরকে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জনগণ ভোট দিতে চায়। সে জন্যই তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে কোনো মতে ভোট দিয়ে আবার ক্ষমতায় চলে যাবা সেটা আর এবার হবে না। ‘বারবার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, এইবার ঘুঘু তোমার বধিব পরাণ।’
মহানগর বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে যুগ্ম-আহবায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ ও অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলীর যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ ওয়ারেস আলী মামুন ও শরীফুল আলম, মাহমুদুল হক রুবেল, শাহ শহীদ সারোয়ার, শাহ নূরুল কবীর শাহীন, কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম মিলন, কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সভাপতি হাসান জাকির তুহিন, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলার ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন, জাকির হোসেন বাবলু, উত্তর জেলার মোতাহার হোসেন তালুকদার, মহানগরের অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী ও কাজী রানা প্রমুখ।
সরকারের দুর্নীতির কারণে দ্রব্যমূল্য সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনার সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সরকারের দুর্নীতির কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহিতা নেই, দায়বদ্ধতা নেই বলেই দফায় দফায় পানি, তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনজীবনে নাভিশ্বাস সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, এই সরকার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া জনগণের হারানো অধিকার সমূহ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। আর তাই ফ্যাসিস্ট অপশক্তিকে হঠাতে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সকল পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ করে চ‚ড়ান্ত আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহŸান জানান তিনি। গতকাল নগরীর কেডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে চত্বরে কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা।
আমির খসরু বলেন, দুর্নীতি আর লুটপাটের বদৌলতে সরকার ও তার অনুসারীরা ফুলেফেঁপে বড়লোক হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা প্রতিনিয়ত কমছে। নূন্যতম পুষ্টিকর খাবার সংগ্রহ করতে পারছেনা অধিকাংশ পরিবার। সরকার যখন মধ্যম আয়ের দেশের মিথ্যা দাবি তুলছে, সেই সময় একটি প্রজন্ম বেড়ে উঠছে প্রয়োজনীয় পুষ্টিচাহিদা প‚রণ না করে। তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সরকার জনগণের পকেট কাটছে, আর সরকারি সিন্ডিকেট মুনাফা লুটে নিয়ে যাচ্ছে।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা আলহাজ রকিবুল ইসলাম বকুল, বিভাগীয়সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামিমুর রহমান শামীম, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু। জেলা বিএনপির আহŸায়ক আমির এজাজ খান, সদস্য সচিব এসএম মনিরুল হাসান বাপ্পী, আবু হোসেন বাব।ু মহানগরের মো. তারিকুল ইসাম জহির।
এদিকে দুপুরের পর থেকেই বিশাল বিশাল মিছিল আসতে থাকে সমাবেস্থলের দিকে। স্বল্প সময়ের মধ্যে কানায় কানায় ভরে যায় কর্মসূচিস্থল। কে ডি ঘোষ রোড ছাড়াও আশেপাশের রাস্তায় বিপুল সংখ্যক মানুষ দাঁড়িয়ে বক্তব্য শোনেন। এ সময় সেখানে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
দ্রব্যমূল্যে দিশেহারা মানুষ লুটে ব্যস্ত আ.লীগ নেতারা
এদিকে চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। আর সরকারের নেতারা ব্যস্ত লুটপাটে। এ এক অদ্ভুত দেশ। সাধারণ মানুষ খেতে পায়না, মফস্বলের ছাত্রলীগ নেতার অ্যাকাউন্টে পাওয়া যায় দুই হাজার কোটি টাকা। তিনি গতকাল সোমবার বিকেলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে নগরীর পলোগ্রাউন্ড স্কুল মাঠে মহানগর বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় গেছে তখনই তাদের নেতাকর্মীরা লুটপাট করেছে। ১৯৭৩-৭৪ সালে তারা গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল কায়েম করেছিল। গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলায় ৩৫ হাজার নেতাকর্মীকে খুন করেছিল। তাদের সে চরিত্র এখনো বদলায়নি। এরা জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে।
নগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপি নেতা মাহবুবের রহমান শামীম, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, এ এম নাজিম উদ্দিন, শহীদুল ইসলাম বাবুল, আবুল হাশেম বক্কর, আবু সুফিয়ান, এম এ আজিজ, মো. মিয়া ভোলা, এস এম সাইফুল আলম, মহিলাদলের ফাতেমা বাদশা, মনোয়ারা বেগম মনি প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।