পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে গত দুই বছর ঘরে বসে প্রান্তিক মানুষের ব্যাংকিংয়ে সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে সোনালী ব্যাংক। বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধা ও পেনশনার। যারা সরকারি এ ব্যাংক থেকে ভাতা নেন তাদের জন্য এটি একটি নিরাপদ মাধ্যম। ‘কোর ব্যাংকিং সলিউশনে’র (সিবিএস) মাধ্যমে এখন নন-স্টপ ব্যাংকিং সার্ভিস দিচ্ছে সোনালী ব্যাংক। ইনকিলাবকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন সোনালী ব্যাংকের সিইও অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আতাউর রহমান প্রধান। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারে আমরা অনেক সাফল্য পেয়েছি। সবার উচিত তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারে মনোযোগী হওয়া। মো. আতাউর রহমান প্রধান ২০১৯ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংকটিতে যোগদান করেই বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা চালু করার উদ্যোগ নেন।
মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেন, করোনার দুই বছরে আমরা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছি। বলা চলে ৫ বছরের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮০ শতাংশ এ দুই বছরে সম্পন্ন হয়ে গেছে। আমাদের সিবিএস থেকে শুরু করে অনলাইন ব্যাংকিং, ঘরে বসেই বিভিন্ন সেবার সুযোগ, রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আগে যেখানে ৭২ ঘণ্টা লাগত, বর্তমানে তা ব্লেইজ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মাত্র ৫ সেকেন্ডে বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে চলে আসছে। মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেন, দেশের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এ ব্যাংকটি জাতীয় অর্থনীতিতে বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এটাকে ব্যাংকটির স্বাভাবিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই দেখছেন তিনি।
দেশের বৃহত্তম এই ব্যাংকটিকে একটি আদর্শ ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০২০ সালের মার্চ মাসে সোনালী ই-সেবা অ্যাপস চালু করা হয়। বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের এই অ্যাপস চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৯৯ হাজার ৩৩টি হিসাব খোলা হয়েছে। এছাড়া গত বছরের মার্চে চালু হওয়া সোনালী ই-ওয়ালেটের মোট হিসাব সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৮১টি। সোনালী ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে গড়ে প্রতিদিন ৬ হাজার লেনদেন হচ্ছে। সোনালী ব্যাংকের ‘ব্লেজ অ্যাপস’ ব্যবহার করে প্রবাসী গ্রাহকেরা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ মাত্র ৫ সেকেন্ডের মধ্যে তাদের হিসাবে জমা করতে পারেন। সোনালী ব্যাংকের আইটি খাতে বর্তমানে ৩০১ জন কর্মী নিয়োজিত আছেন- যারা সার্বক্ষণিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
করোনার সময়ে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের ফলে গ্রাহকরা ঘরে বসেই সব ধরনের সেবা পাচ্ছেন, বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধা, বিধবা, সিনিয়র সিটিজেন যারা সরকারি এ ব্যাংক থেকে ভাতা নেন তাদের জন্য এটি একটি নিরাপদ মাধ্যম। তিনি বলেন, সময় এখন ভার্চুয়াল এবং স্মার্ট ব্যাংকিংয়ের। ‘কোর ব্যাংকিং সলিউশনে’র মাধ্যমে এখন নন-স্টপ ব্যাংকিং সার্ভিস দেয়া হচ্ছে। অনলাইন ব্যাংকিং সফটওয়্যার যুগোপযোগী করে আমরা ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছি। অচিরেই সরকারি সব ভাতা আমরা ডিজিটালি দেবো। একই সঙ্গে অচিরেই বৃহত্তর পরিসরে ইন্টারনেট ও এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মো. আতাউর রহমান প্রধান। তিনি বলেন, করোনার সময়ে সরকারের যে গাইডলাইন ছিল এগুলো আমরা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। ব্যাংকের ২ হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। ৩২ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। তারপরও ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় ছিল। সরকারিভাবে পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছি। বাংলাদেশ বিমানকে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছি। এছাড়া সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ ভালোভাবেই বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। বলা যায়, ব্যাংকার হিসেবে আমাদের ওপর যে অর্পিত দায়িত্বগুলো ছিল আমরা তা যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করেছি। একই সঙ্গে গভর্ন্যান্সের বেশ কিছু ইস্যুতে আমরা উন্নতি করেছি। বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের একটি ভালো বোর্ড (পরিষদ) রয়েছেÑ যারা প্রতিনিয়ত ভালো কাজ করছে। একই সঙ্গে ব্যাংকের কর্মচারীদের যে অভাব-অভিযোগ বা সমস্যা ছিল তার অনেকটাই সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি বলে উল্লেখ করেন মো. আতাউর রহমান প্রধান।
সোনালী ব্যাংক ২০২১ সাল শেষে রেকর্ড ২ হাজার ২০৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে। ২০২০ সাল শেষে ব্যাংকটির এই মুনাফা ছিল ২ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। বিদায়ী বছর শেষে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকটির শ্রেণিকৃত লোনের পরিমাণও কমেছে প্রায় ১ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংকটির শ্রেণিকৃত লোনের পরিমাণ নেমে এসেছে ১৪ দশমিক ১৪ শতাংশে, যা ২০২০ শেষে ছিল ১৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। অর্থাৎ গত এক বছরে শ্রেণিকৃত লোন কমেছে ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। বর্তমানে ব্যাংকটিতে শ্রেণিকৃত লোন আছে ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যা ২০২০ সাল শেষে ছিল ১০ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা। এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের সিইও অ্যান্ড ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব কাটিয়ে দেশের ব্যাংকিং খাত এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, করোনা না থাকলে বিগত বছর শেষেই শ্রেণিকৃত ঋণ আমরা সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে পারতাম। আগামী বছর শ্রেণিকৃত ঋণ সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনাই হবে আমাদের লক্ষ্য। তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংকের এই সাফল্যই প্রমাণ করে ব্যাংকে এখন সুশাসন নিশ্চিত হয়েছে। তবে মুনাফা নয়, গ্রাহক সন্তুষ্টিই আমাদের মূল লক্ষ্য। ২০২১ সাল শেষে সোনালী ব্যাংকের মোট বিতরণকৃত ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ ৬৯ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালের চেয়ে ১০ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা বেশি। বর্তমানে ব্যাংকটিতে মোট আমানতের পরিমাণ ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে সোনালী ব্যাংক কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেÑ এ প্রশ্নের উত্তরে মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেন, আমরা ধাপে ধাপে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি করেছি। আশা করছি, আমরা এ বছরেই আরো উন্নতি করতে পারব। একই সঙ্গে ইতোমধ্যেই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স পেয়েছে সোনালী ব্যাংক। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সেবার পরিধি আরো বাড়াতে চাই। এজন্য ইতোমধ্যেই একজন প্রজেক্ট ম্যানেজার নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
ব্যাংকটিতে যোগদানের পর গত ২ বছরে ডিপোজিট বেড়েছে। ২০২০ সালে ডিপোজিট বেড়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা। আর ২০২১ সালে বেড়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা। একই সঙ্গে লোকসানি শাখা ২৯টি থেকে কমে ১৬টিতে এসেছে।
উল্লেখ্য, সোনালী ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান এ ব্যাংকে যোগদানের আগে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। সেখানে তিনি সাফল্যের সঙ্গে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন। সুশাসন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঠিক সময়ে পদোন্নতি এবং অনলাইন ব্যাংকিং সেবার ক্ষেত্রে রূপালী ব্যাংককে তিনি অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেন। সোনালী ব্যাংকে এসেও আগের ধারাবাহিকতায় তিনি নানা সংস্কারমূলক কাজের মাধ্যমে নিজেকে ব্যাংকিং খাতে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।