Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলাদেশ-ভারত ৫ম সাংস্কৃতিক মিলনমেলা-২০২২ শুরু

রাজশাহী ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৬:৩৭ পিএম

বর্নাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে রাজশাহীতে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত ৫ম সাংস্কৃতিক মিলনমেলা-২০২২। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর ৫০ বছর পূর্তিতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের উদ্যোগে রাজশাহীতে উপলক্ষে আগত ভারতের মন্ত্রী, অভিনেতা, কবি, শিল্পী, সাংবাদিক সহ মোট ৩৬জন অতিথিকে বর্ণাঢ্য আয়োজনে নাগরিক সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় নগর ভবনের গ্রিন প্লাজায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক অনুষ্ঠানে অতিথিদের উত্তরীয়, ক্রেস্ট ও প্রীতি উপহার প্রদানের মাধ্যমে সংবর্ধিত করেন রাসিক মেয়র। এরআগে নগর ভবনের প্রধান ফটক থেকে শিশুদের নৃত্য আর গানের তালে তালে অতিথিদের মঞ্চে নিয়ে এসে ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেওয়া হয়। দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা সহ মহান মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভারত বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের জনগণ ও সরকার নিস্বার্থভাবে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেছেন, আত্মত্যাগ করেছেন। ভারত অনেক বড় দেশ, অর্থনৈতিকভাবে ও সামরিকভাবে শক্তিশালী দেশ। কাজেই তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক গভীর, আন্তরিকতা ও বিশ্বস্ততার হওয়া উচিত। রাজশাহীতে আয়োজিত ৫ম সাংস্কৃতিক মিলনমেলা ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক আরো বিকশিত করবে, আরো শক্তিশালী করবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক যদি আরো সুদৃঢ় হয়, তাহলে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি দুর্বল হবে, তাদের অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যাবে। বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারত আমাদের পাশে আছে। আমরাও তাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করি।
সভাপতির বক্তব্যে মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বাংলাদেশ-ভারত ৫ম সাংস্কৃতিক মিলনমেলার আয়োজন করতে পেরে রাজশাহীবাসী আনন্দিত ও গৌরবান্বিত। এই সুযোগে সমবেত সকলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের পাশে থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছে। সেই সম্পর্ক এখনো অটুট রয়েছে। সাংস্কৃতিক মিলনমেলার মাধ্যমে দুই দেশের আরো সুদৃঢ় হবে। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে ভুমিকা রাখবে।
মেয়র আরো বলেন, ভারতের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান থেকে রাজশাহী হয়ে পাবনার ঈশ্বরদী পর্যন্ত পদ্মা নদীতে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নৌরুট চালু করা সম্ভব। এটি হলে রাজশাহীতে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। এই সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের মাধ্যমে পরবর্তীতে বাণিজ্য সম্প্রসারণে কাজে লাগাতে চাই। আগামীতে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক নতুন জায়গায় নিয়ে যেতে চাই।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের মন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল বলেন, ৫ বছর ধরে দুই দেশের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভারত-বাংলাদেশের মানুষের মাঝে সম্পর্ক আরো যেন গভীর হয়, সেক্ষেত্রে এই ধরনের মিলনমেলা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়ে বলেছিলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ সেই আওয়াজ এখনো আমাদের কানে বাজে। সেই আওয়াজে আমরা ভারতবাসী সাড়া দিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা প্রদানের পাশাপাশি ভারতের ত্রিপুরা সহ সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে বাংলাদেশের মানুষকে আশ্রয় প্রদান করে ভারত। দুই দেশের সম্পর্ক এখনো অটুট আছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক অবনতি ঘটাতে নানা সময় ষড়যন্ত্র হয়েছিল। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়নি। বাংলাদেশ-ভারত একে অপরের উন্নয়নের সহযোগী হিসেবে কাজ করে চলেছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, এই সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন দুই দেশের সম্পর্কে নতুন উচ্চতায় পৌছে দেবে। শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখতে সংস্কৃতির বিনিময় আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
স্বাগত বক্তব্য দেন ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের (কো-অর্ডিনেটিং চ্যাপ্টার) প্রধান সমন্বয়ক এসএম সামছুল আরেফীন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নে এই সাংস্কৃতিক মিলনমেলার উভয় দেশে আয়োজন করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহীতে ৫ম সাংস্কৃতিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হবে। এই মেলার মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরো সমন্নুত হবে।
অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিভাগের সংসদ সদস্যবৃন্দ, ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, বিচারকবৃন্দ, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ ও সাংস্কৃতিক, প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও বিশিষ্ট শিক্ষকবৃন্দ, বিভাগের বিভিন্ন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ, রাজশাহী মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ীবৃন্দ, আইনজীবীবৃন্দ, সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাবৃন্দ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এরআগে সকালে সিএন্ডবি মোড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে শ্রদ্ধা জানান ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের মন্ত্রী রামপ্রসাদ পালসহ ভারতীয় অতিথিবৃন্দ এবং রাসিক মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন।এরপর কাদিরগঞ্জে জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, ২৫ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ-ভারত ৫ম সাংস্কৃতিক মিলনমেলায় অংশ নিতে ৩৬ জনের একটি প্রতিনিধি দল গতকাল রাজশাহীতে এসেছেন। তারা হলেন, ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের মন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল ও তাঁর সহধর্মিণী মঞ্জু পাল, খ্যাতিমান কবি ও শিল্পী মৌসুমি রায় চৌধুরী, খ্যাতিমান অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা চক্রবর্তী সেনগুপ্ত, সুভপ্রসন্ন ভাট্টাচার্য, ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ