Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কোটি মানুষকে টিকা দেয়া হবে আজ : স্বাস্থ্য অধিদফতরের ব্যাপক প্রস্তুতি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:২০ এএম

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকাদানে আজ সারা দেশে বিশেষ ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একদিনে কমপক্ষে এক কোটি ডোজ টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পূর্বের মতো এবারও সারা দেশে স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রায় সাত হাজার কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ ক্যাম্পেইন। এ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমেই করোনা প্রতিরোধী টিকার প্রথম ডোজের কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রাখা হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এবিএম খুরশীদ আলম ইনকিলাবকে বলেন, চলমান কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ন্ত্রণে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৭০ শতাংশকে প্রথম ডোজের আওতায় আনতে আগামী ২৬ ফেব্রæয়ারি দেশব্যাপি ‘একদিনে ১ কোটি কোভিড-১৯ টিকা কার্যক্রম’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ বিশেষ কার্যক্রমের মাধ্যমে সরকার দেশের উদ্দীষ্ট জনগোষ্ঠীর সকলকে প্রথম ডোজ কোভিড-১৯ টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ প্রদান কার্যক্রম জোরদার করা হবে।

গত ২২ ফেব্রæয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, আগামী ২৬ ফেব্রæয়ারি সারা দেশে এক কোটি মানুষকে করোনার টিকা দিতে চায় সরকার। জনগণ টিকা নিতে আসলে আরও বেশিও দেয়া হবে। সেদিন টিকাদানের মূল লক্ষ্য শ্রমজীবী মানুষ। কারণ, তাদের অনেকেই এখনও টিকা নেননি। ২৬ ফেব্রæয়ারি দেশের সব ইউনিয়নে টিকা দেয়া হবে। কেন্দ্রের নাম ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জানিয়ে দেয়া হবে। ওইদিন ভোটার আইডি কার্ড, জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়ে গেলেই টিকা পাবেন নাগরিকরা। এছাড়া যাদের ভোটার আইডি কার্ড, জন্মনিবন্ধন নেই, তারা নিজের ব্যবহৃত মোবাইল নম্ব^^র দিয়েও টিকা নিতে পারবেন। মোবাইল না থাকলে তার নাম-ঠিকানা নিয়ে টিকা দেয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনা প্রতিরোধী টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধমানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ৭ ফেব্রæয়ারি সারা দেশে টিকা কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ কার্যক্রমের আওতায় এ পর্যন্ত ১০ কোটি ৬৫ লাখের বেশি মানুষকে প্রথম ডোজ এবং ৮ কোটি ১৭ লাখের বেশিজনকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে। দেশে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে টিকার প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার পর গত ২৮ ডিসেম্বর শুরু করোনা টিকার বুস্টার ডোজ প্রদান করা হয়।
গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ব্যাপক পরিসরে গণটিকাদান কার্যক্রম চলছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ার পরও শুক্রবার সব টিকাদান কেন্দ্র খোলা ছিল। প্রতিটি টিকা কেন্দ্রে দেখা গেছে দীর্ঘ লাইন। হাজার হাজার মানুষ টিকার প্রথম ডোজ নেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তবে কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন তারা তিন থেকে চার ঘণ্টা লাইন দাঁড়িয়ে থেকেও টিকা নিতে পারেননি।

মূলত বিগত কয়েকদিন ধরেই টিকা নিতে মানুষের আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। গণটিকা কার্যক্রম শুরুর আগেই শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীর পূর্ব রামপুরা হাইস্কুলে দীর্ঘসারি দেখা গেছে। সকাল ৯টা থেকে টিকা কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও অনেকেই এসেছেন ফজরের নামাজের পরপরই। একই চিত্র দেখা গেছে মাতুয়াইল মা ও শিশু হাসপাতালের টিকা কেন্দ্রে। হাজার হাজার মানুষ কয়েক লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নেয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন।

সরেজমিনে কয়েকজন টিকা নিতে আগ্রহীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অধিকাংশই প্রথম ডোজ টিকা নেননি। আইডি কার্ড জটিলতাসহ নানা ধরনের জটিলতার কথা বলেছেন তারা। আগামী ২৬ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত টিকা নিতে কোনো ধরনের নিবন্ধন, জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট কিংবা পাসপোর্ট প্রয়োজন হবে না- এ খবরে এখন টিকা নিতে এসেছেন।
টিকা নিতে আসা মোছা. সেলিনা বেগম বলেন, ভোটার আইডি কার্ড না থাকায় আগে টিকা নিতে পারিনি। এখন নাকি আইডি কার্ড ছাড়া টিকা দেওয়া হচ্ছে। এজন্য সকালে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। শহিদুল ইসলাম বলেন, টিকা নিতে এসে দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর টিকা পেয়েছি। টিকা নিতে পেরে ভালো লাগছে এবং নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।

লাইনের প্রথম দিকে থাকা কয়েকজন জানিয়েছেন, তারা ফজরের নামাজের পরপরই এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। আগের দিন এ কেন্দ্রে প্রচন্ড ভিড় থাকায় অনেকে টিকা পায়নি। এজন্য তারা আগেভাগেই এসেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঘোষণা অনুযায়ী, ছুটির দিনে টিকার কার্যক্রম চলার ঘোষণা থাকলেও টিকা দেওয়া হবে কি-না এ নিয়ে অধিকাংশের মধ্যে ছিল সংশয়। রাজধানীর পূর্ব রামপুরা হাইস্কুলে দীর্ঘসারিতে শত শত মানুষ থাকলেও সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত এ কেন্দ্রে টিকা প্রদানকারী কোনো কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি। লাইনে দাঁড়িয়ে মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ছুটির দিন টিকা দেওয়া হবে সেটা আমরা খবরে শুনেছি। কিন্তু এখানে কেউই নেই। বুঝতে পারছি না টিকা দেওয়া হবে কি-না।

গত কয়েকদিন থেকেই করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক প্রথম ডোজের টিকা নিতে রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন টিকাকেন্দ্রে স্রোতের মতো নানা বয়সি নারী ও পুরুষরা ছুটে আসছেন। ২৬ ফেব্রæয়ারির পর প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া বন্ধ থাকবে- এমন খবরে প্রতিটি কেন্দ্রে ভিড় বাড়ছে।
বর্তমানে যারা টিকা নিতে আসছেন তাদের নাম, বয়স, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর রেখে টিকা দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান, গত কয়েকদিন ধরে কেন্দ্রগুলোতে প্রথম ডোজের টিকা নিতে মানুষের ভিড় ক্রমশ বাড়ছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়াধীন স্বাস্থ্য অধিদফতরের টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে এক কোটি জনসংখ্যাকে প্রথম ডোজের টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকাদানের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে ২৬ ফেব্রæয়ারি এক কোটি জনসংখ্যাকে টিকা দেওয়া হবে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজের কার্যক্রম জোরদার করা হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ