পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে চরম সংকটে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা। দ্রব্যমূল্যের ক্রম ঊর্ধ্বগতিকে কেউ কেউ দাবানলের সঙ্গে তুলনা করছেন। আগে যেখানে প্রচলিত বাক্য ছিল ‘নিত্যপণ্যের বাজারে আগুণ’। চাল-ডাল-তেল থেকে শুরু করে অতি প্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দামের একই অবস্থা। নিত্যপণ্যের দামের এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার জন্য করোনা মহামারিতে উৎপাদন কমে যাওয়া, বিশ্ববাজারে অস্থিরতা, অতিরিক্ত আমদানি নির্ভরতা, সরকারের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ও সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীদের কারসাজিকে দায়ী করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। আবার কেউ কেউ অভ্যন্তরীণ বাজারের সুশাসনের অভাবকেও দায়ী করছেন।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়-গোলআলু, টমেটো, গোল বেগুন, লম্বা বেগুন, করলা, পটল, লাউ, মটরশুঁটি, কাঁচা পেঁপে, শসা, গাজর, ফুলকপি, পাতাকপি, সজনে, বরবটি, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙ্গা, কচুর লতি, ধুন্দল, ঢেঁড়শ, লাউশাক, পালং শাক, লাল শাক, কলমি শাক, কচু শাকসহ বিভিন্ন শাকসবজিতে ভরপুর বাজার। সকাল থেকেই জমে উঠেছে বেচাকেনা।
এরমধ্যে কাঁচামরিচ ৬০-৬৫ টাকা, গোলআলু ২৩-২৫ টাকা, টমেটো ৪০ টাকা, গোল বেগুন ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৭০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৫০-৫৫ টাকা, শসা ৩৫ টাকা, গাজর ৪৫ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কচুর লতি ৬০- ৭৫ টাকা, শালগম ৪০-৪৫ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে। নতুন করে বাজারে উঠেছে সজনে ডাঁটা। বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। পাতাকপির দাম স্থিতিশীল থাকলেও গত সপ্তাহের তুলনায় দাম বেড়েছে ফুলকপি ও ব্রোকলির। পাতাকপি আগের মতোই ৩০-৪০ টাকা পিস বিক্রি হলেও ফুলকপি ও ব্রোকলি ৫০-৬০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহেও এসব সবজি ৪০-৪৫ টাকায় পাওয়া গেছে। আকারভেদে প্রতি পিস লাউ ৯০-১০০ টাকা পর্যন্ত দাম চাইছেন বিক্রেতারা। লাউশাক, পালং শাক, লাল শাক, কলমি শাক, কচু শাক, পুঁইশাক বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকা আঁটি দরে।
মসলার মধ্যে পেঁয়াজ ৫০-৫৫ টাকা, রসুন ১১০-১২০ টাকা, দেশি আদা ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে হালিপ্রতি ডিমের দাম বেড়েছে ২-৩ টাকা। সাদা ডিম পাইকারি বাজারে ক্রয়মূল্য ৩৪ টাকা ও খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৬ টাকা, হাঁসের ডিম পাইকারি বাজারে ক্রয়মূল্য ৬৫ টাকা ও খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিম পাইকারি বাজারে ক্রয়মূল্য ৬৫ টাকা ও খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। মুরগির খাবারের দাম বাড়ায় স¤প্রতি ডিমের দামেও এর প্রভাব পড়ছে।
এছাড়াও মুদি বাজারে মুগ ডাল ১২৫ টাকা, বুটের ডাল ৮০ টাকা, এংকর ডাল ৫৫ টাকা, মসুর ডাল ১১৫ টাকা, ছোলাবুট ৭৫ টাকা, চিনিগুড়া চাল ১০০-১২০ টাকা, মিনিকেট চাল ৫৫ টাকা, নাজিরশাইল চাল ৭০ টাকা, মোটা চাল ৫২ টাকা, মিনিকেট চাল ৬৩ টাকা, চিনি ৭৫ টাকা কেজি ও সয়াবিন তেল ১৬০-১৬৫ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে।
ভোক্তার অধিকার নিয়ে কাজ করে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনটির মতে, সরকারের সব অর্জন ¤øান হয়ে যাবে, যদি সরকার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী লাগাম টেনে ধরতে না পারে কিংবা আয় বৈষম্য কমানো না যায়। ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থনীতি মুদ্রাস্ফীতির নেতিবাচক প্রভাবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপীই এক ধরনের মুদ্রাস্ফীতির প্রবণতা রয়েছে। আমাদের আমদানি ও রফতানি বেড়েছে, বেড়েছে তারল্য প্রবাহ। যার প্রভাব বাজারেও এসেছে।
ক্যাব সভাপতি বলেন, প্রথমত করোনার কারণে অনেক পণ্যেরই উৎপাদন কমে গেছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে জাহাজ ভাড়া বেড়ে গেছে। যার ফলে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি বর্তমানে চাল থেকে শুরু করে সকল পণ্য এখন আমদানিনির্ভর। কোনো কোনো পণ্য ৮০-৯০ শতাংশ, কোনো পণ্য ৫-১০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। কম পরিমাণ আমদানি হলেও সরবরাহ চেইনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
তিনি বলেন, আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ব্যবসায়ীদের সুযোগসন্ধানী আচরণ। আন্তর্জাতিক বাজারে যখন দাম বাড়ে তখন সাথে সাথে দেশের অভ্যন্তরে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যখন দাম কমে, তখন পণ্যের দাম কমার প্রবণতা দেখা যায় না। এ বিষয়টি ব্যবসায়ীদের খাতায়ই নেই।
গোলাম রহমান বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার চেয়ে বর্তমান সরকারের প্রধান ফোকাসের জায়গায় হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রবৃদ্ধি। আয় বৈষম্য বেশ বেড়েছে। যার সাথে আইয়ুব সরকারের মিল পাচ্ছি। তখন ২২ পরিবারের প্রসঙ্গটা বেশ সাড়া ফেলেছিল। বর্তমানে উন্নয়নের মহাসড়কে আছি, কিন্তু উন্নয়নের মহাসড়কে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত যদি পিষ্ট হয়ে যায় তাহলে সেই উন্নয়ন আমাদেরকে পিষ্ট করবে। সরকারের সব অর্জন ¤øান হয়ে যাবে, যদি সরকার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী লাগাম টেনে ধরা না যায়। অথবা আয় বৈষম্য কমানো না যায়। এক সময় আমরা বলতাম নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন, এখন বলি বাজারে দাবানল চলছে।
অন্যদিকে, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আন্তর্জাতিক বাজারের দাম বৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থায় সুশাসনের অভাবকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য দায়ী করছেন। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন এ বিষয়ে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী, এটি সত্যিই উদ্বেগের বিষয়। অতিমারির সময় মানুষের আয় কমে গিয়েছে, কর্মসংস্থান নেই অনেকের। তার ওপরে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি জীবনযাত্রার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণেও পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থায় সুশাসনের অভাব থাকে, যে কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাস্তবতার আলোকে মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য মূল্যস্ফীতির বিরাট ফারাক রয়েছে।
অন্যদিকে লাগামহীন পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সাময়িক সময়ের জন্য কর কাঠামো পুনর্বিন্যাস করার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়েছে। এছাড়া কাঁচামালের বহু কারখানা বিদেশে বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে রাসায়নিক কারখানা। এমন প্রেক্ষাপটে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা আগেই শুল্ক-কর কমানোর সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু সুপারিশ রাখা হয়নি। এসব কারণে এখন বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। সামনে পবিত্র রমজান, এখনই দ্রব্যমূল্য নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।