পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দুই বছরে অনেকটা অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়েছে সুপ্রিম কোর্ট বার। করোনাসহ নানা কারণে এ সময় ইন্তেকাল করেছেন বারের বহু প্রথিতযশা সিনিয়র আইনজীবী। এ কারণে আকস্মিকভাবেই সুপ্রিম কোর্টে সৃষ্টি হয়েছে সিনিয়র আইনজীবী সঙ্কট। আইনি ঝামেলায় পড়লেই বিচার প্রার্থীরা ছুটতেন সিনিয়র আইনজীবীদের কাছে। দীর্ঘকর্ম অভিজ্ঞতা, জ্ঞান আর কৌশল দিয়ে বিচারপ্রার্থীদের সুবিচার পাইয়ে দিতেন তারা। মামলায় উদ্ভুত সাংবিধানিক প্রশ্ন কিংবা জটিল কোনো বিষয় এলে সিনিয়র আইনজীবীদের ‘অ্যামিকাস কিউরি’ নিয়োগ করে আদালতও পেতেন সহযোগিতা।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে হারিয়ে গেছে অতি চেনা সেই দৃশ্য। টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি। প্রথিতযশা আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হক একই সঙ্গে লড়ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং বিএনপি’র চেয়াপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার হয়ে। আদালতের করিডোর কিংবা গ্যাংওয়ে ধরে হেঁটে যাচ্ছেন। সঙ্গে তার তরুণ আইনজীবী অ্যাসোসিয়েট। উচ্চ আদালতভিত্তিক গণমাধ্যম কর্মীদের নতুন নতুন সংবাদের যোগান দিতেন তিনি। একইভাবে সাংবাবিধানিক প্রশ্নে গণমাধ্যমকে ব্যাখ্যা দিতেন ড. এম. জহির। সংবাদকর্মীরা তার কাছে ছুটে গেলেই পেতেন নতুন কোনো সংবাদের হেডিং। সংবাদকর্মীদের কাছে এসব এখন শুধুই স্মৃতি।
এদিকে করোকালে অনেক প্রথিতযশা আইনজীবীর ইন্তেকালে উচ্চ আদালতও বিভিন্নভাবে তাদের অভাব বোধ করছেন বলে জানা গেছে। আদালতও অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগের মতো সিনিয়র আইনজীবীদের তেমন কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিকে ‘বড় ধরণের শূন্যতা’ বলে মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন।
একই প্রশ্নে নিজেকে ‘অভিভাবক হীন’ বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার রূহুল কুদ্দুস কাজল। তিনি বলেন, জানিনা এ শূন্যতা কিভাবে পূরণ হবে। যাদের আমরা হারিয়েছি তারা ছিলেন আমাদের সিনিয়র ও দীক্ষাগুরু। অনেক ‘কোর্ট-প্রাক্টিস’ আমরা তাদের কাছ থেকে শিখেছি। সুপ্রিম কোর্ট বার প্রাঙ্গনে তারা নানা ইস্যুতে মুখর ছিলেন। তারা এখন নেইÑ এটা ভাবতেই বুকটা হাহাকার করে ওঠে।
সুপ্রিম কোর্ট বার সূত্র জানায়, শুধুমাত্র করোনাজনিত কারণে ৫০ জনেরও বেশি আইনজীবীর মৃত্যু হয়েছে গত দুই বছরে। এছাড়া ৪ জন বিচারপতিও ইন্তেকাল করেছেন। সিনিয়র আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, আব্দুল মতিন খসরু, অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার রফিক উল হক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, আব্দুল বাসেত মজমুদার, বর্ষীয়ান আইনজীবী টি এইচ. খান অন্যতম।
অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্বরত অবস্থায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হলেও আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণের আগেই ১৪ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু।
দল, মত নির্বিশেষ সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য প্রথিতযশা আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক উল হক। ২০২০ সালের ২৪ অক্টোবর করোনা আক্রান্ত হয়ে তিনি ইন্তেকাল করেন। রাজধানীর আদ-দ্বীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। অ্যাডভোকেট এবিএম নূরুল ইসলাম ইন্তেকাল করেন ২০২০ সালের ৯ ফেব্রæয়ারি। ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর ইন্তেকাল করেন অ্যাডভোকেট মীর মিজানুর রহমান।
প্রখ্যাত আইনজীবী ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ইন্তেকাল করেন ২০২১ সালের ১৬ মার্চ। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল’র কেন্দ্রীয় সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম ইন্তেকাল করেন গত বছর গত ১৫ জুলাই। ২০২০ সালের ২৪ জুন ইন্তেকাল করেন অ্যাভোকেট মোহাম্মদ ইদ্রিসুর রহমান। চলতিবছর ২৭ অক্টোবর ইন্তেকাল করেন অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট জেয়াদ আল মালুম ইন্তেকাল করেন ২০২১ সালের ২৭ জুন। এর আগে একই বছর ২৪ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন সিনিয়র আইনজীবী ও রাজনীতিক ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান। ২৫ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন অ্যাডভোকেট শেখ ইউনূস আলী। একই দিন ইন্তেকাল করেন অ্যাডভোকেট নাজমুল হাসান। একই দিন বিকেলে ইন্তেকাল করেন সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট নাজমুল হাসান। ২৪ মার্চ ইন্তেকাল করেন অ্যাডভোকেট আলী হায়দার কিরণ। অ্যাডভোকেট খন্দকার আব্দুল মান্নান ইন্তেকাল করেন গতবছর ১৩ জানুয়ারি। ৫ এপ্রিল মারা যান অ্যাডভোকেট রশিদ আহমেদ। গতবছর ৭ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন অ্যাডভোকেট মমতাজ আলী ভ‚ঁইয়া, ১০ এপ্রিল অ্যাডভোকেট মো. ওবায়দুল্লাহ (জাকির), ১৩ এপ্রিল অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোকাদ্দাস আলী। ১৫ এপ্রিল অ্যাডভোকেট মনজুর কাদের, ১৬ এপ্রিল অ্যাডভোকেট রেজিনা চৌধুরী জেনি, ২৩ এপ্রিল মারা যান অ্যাডভোকেট লিও সাহা কেনেডি। গত ১৬ ডিসেম্বর মারা যান অ্যাডভোকেট পরিমল চন্দ্র (পিসি) গুহ। ২০২১ সালের ১৪ আগস্ট ইন্তেকাল করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি মো. আমির হোসেন, এর আগে একইবছর ১৩ জুলাই ইন্তেকাল করেন বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ, সর্বশেষ গত ৪ ফেব্রæয়ারি ইন্তেকাল করেন আপিল বিভাগের বিচারপতি এএফএম নাজমুল আহসান।
এছাড়াও নানা কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইন্তেকাল করেছেন সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট হরিসাধন দেব বর্মণ, হুমায়ুন হোসেন খান, খন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমাদ, অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান (চাটখিল), ড. এম. জহির, খান সাইফসুর, মাহমুদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আরশেদ আলীসহ অনেকে। এখনও সিনিয়র আইনজীবীদের মধ্যে যারা রয়েছেন তাদের অনেকেই অসুস্থ, শযাশায়ী, চিকিৎসাধীন। কেউবা বয়সের ভারে ন্যূব্জ হওয়ায় করোনা পরিস্থিতিতে সতর্কতার কারণে আদালতে আসছেন না। বারের সম্পাদক রূহুল কুদ্দুস কাজল জীবীত সিনিয়রদের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।