পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেড় দশক ধরে বাংলা একাডেমির বহেড়াতলায় স্থান পাওয়া বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ ‘লিটল ম্যাগ চত্বর’ এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল অংশে। গত দুই বছর ধরে এই চত্বরের জন্য জায়গা বরাদ্দ হয়ে আসছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের পার্শ্ববর্তী স্থানে। গতবছর মেলার পূর্বাংশে রমনা কালীমন্দিরের পেছনে স্থান হলেও পরে আন্দোলনের মুখে আগের জায়গায় ফিরে আসে লিটল ম্যাগ চত্বর। কারণ সে জায়গাটিকে ‘বিচ্ছিন্ন স্থান’ হিসেবে উল্লেখ করেন প্রকাশক-সম্পাদকেরা। স্থান পরিবর্তন হলেও ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি এই চত্বরের। বাংলা একাডেমিতে থাকা সেই অবহেলিত চত্বর সোহরাওয়ার্দীর মূল অংশে এসেও অবহেলিতই রয়ে গেছে । তাইতো ক্রেতাহীন এ চত্বরের বিক্রেতাদের দেখা যায় গিটারের সুর আর গান-গল্পে কাটাতে বিকেল সন্ধ্যা। কিছুতেই যেন সুফল মিলছে না লিটল ম্যাগের।
মূলত উনিশ শতকের শুরুর দিকে আমেরিকা ও ইউরোপে লিটল ম্যাগাজিনের যাত্রা শুরু হয়। বাংলায় একে সর্বপ্রথম পরিচিত করান বুদ্ধদেব বসু। ১৯৫৩ সালে ‘সাপ্তাহিক দেশ’ পত্রিকার মে সংখ্যায় তিনি তার সাহিত্যপত্র প্রবন্ধে সর্বপ্রথম লিটল ম্যাগাজিনের সাথে এদেশের সাহিত্য প্রেমীদের পরিচয় করিয়ে দেন।
লিটল ম্যাগ বা লিটল ম্যাগাজিনগুলো সাধারণত গতানুগতিক ধারার বাহিরে লেখা প্রকাশ করে থাকে। আর এইসব ম্যাগাজিনের লেখকরাও সাধারণত অতটা পরিচিত হননা। মূলত যারা খুব বেশি প্রথা বিরোধী সাহিত্য চর্চা করেন বা গতানুগতিক ধারার লেখনীতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না তারাই প্রধানত লিখে থাকেন এইসব লিটল ম্যাগাজিনে। এইসব ছোট পত্রিকায় নানা ধর্ম, দর্শন, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজতত্ত¡ নিয়ে নানা লিখা স্বাধীনভাবে লিখতে পারেন এর লেখকরা। এর বেশিরভাগই আবার প্রচলিত বিশ্বাস বা রাজনৈতিক ধারা বিরোধী। লিটল ম্যাগের লেখকরা সাধারণত সমাজের প্রচলিত অন্যায় অত্যাচার আর নানা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে খুব সাবলীলভাবে তাদের লেখা প্রকাশ করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এর লেখক ও সম্পাদকরাই এইসব ম্যাগাজিনে প্রকাশক হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। বিভিন্ন প্রকাশনা বা ব্যক্তি উদ্যোগে এইসব লিটল ম্যাগ বাজারে আসে। এগুলো মূলত অনেকটা অবাণিজ্যিক ও আদর্শবাদী হয়ে থাকে। আমাদের দেশে এর বিস্তার ঘটতে শুরু করে মূলত ষাটের দশক থেকে। পরবর্তীতে এই লিটল ম্যাগ তরুণ লেখকদের সাহিত্য চর্চার প্রধান মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। পশ্চিমের আদলে আমাদের দেশে সর্বপ্রথম লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন প্রমথ চৌধুরী। তার সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘সবুজপত্র’কে (১৯১৪) সর্বপ্রথম লিটল ম্যাগ হিসেবে গণ্য করা হয়। ষাটের দশকে আমাদের দেশে লিটল ম্যাগাজিনকে কেন্দ্র করে একপ্রকার সাহিত্য আন্দোলন গড়ে উঠে। সেসময় মানুষ তাদের চেতনা ও স্বাতন্ত্রধর্মী লেখার জন্য অনেকাংশেই নির্ভর ছিল এইসব লিটল ম্যাগাজিনের উপর। পরবর্তীতে দৈনিক পত্রিকাগুলোর সাহিত্য সংখ্যা সেই জায়গা দখল করে নিলে আস্তে আস্তে কমতে থাকে লিটল ম্যাগের কদর। তবে যুগের সাথে যুদ্ধ করে আজও টিকে আছে অনেক লিটল ম্যাগ। যারা এখনো সমাজের নানা অসঙ্গতি নিয়ে কথা বলে। সরকারের নানা বিতর্কিত সিদ্ধান্তের সমালোচনা নির্ভয়ে করে যায়। এইসব কারণে অনেক সময় লিটল ম্যাগগুলোর উপর নেমে আসে প্রকাশনা বন্ধের খড়গও।
লিটল ম্যাগের জরাজীর্ণ অবস্থা ও এর থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে গতকাল বুধবার লিটল ম্যাগ চত্বরের বেশ কিছু প্রকাশকের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। জানতে চাইলে ভাবনা প্রকাশনীর সম্পাদক ও প্রকাশক কাজী ছাব্বির বলেন, লিটল ম্যাগ আসলে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়। এখানে তরুণ লেখকরা লিখে আনন্দ পায়। আদতে এমন কোনো লেখক খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি লিটল ম্যাগে লিখেননি। তবে তরুণ এই লেখকদের লিখায় পাঠক চাহিদা না থাকার কারণ হচ্ছে পরিচিতির অভাব। মানুষ আসলে অপরিচিত কারো লিখা পড়তে চায় না।
কাজী ছাব্বির বলেন, গতানুগতিক ধারার বিপরীতে যারা মুক্ত চিন্তায় ভিন্ন ধারায় কিছু লিখতে চায় তারাই মূলত এসব ম্যাগাজিনে লিখে থাকেন। তাই অনেক সময়ই এ ধরনের লিখাগুলো স্রোতের প্রতিক‚লে হয়ে যায়। যে কারণে পাঠক চাহিদা কম থাকে। সরকারের উচিত যারা লিটল ম্যাগে লিখে তাদের কিছু অনুদান দেওয়া। আমরা যারা এখানে লিখি বা প্রকাশ করি তারা কিন্তু লেখকদের কোনো টাকা পয়সা দেই না। নিজের টাকায় লেখকরা এগুলো প্রকাশ করে থাকেন। বাংলা ভাষার প্রতি যখন মানুষের ভালোবাসা বাড়বে তখনই আমাদের বাংলা ভাষা স্বার্থক ও সমৃদ্ধ হবে। কিন্তু লিটল ম্যাগকে বাদ দিয়ে ভাষার স্বার্থকতা হাসিল করা সম্ভব নয়।
দ্রষ্টব্যের সম্পাদক ও করাতকলের প্রকাশক চারু পিন্ট বলেন, লিটল ম্যাগ চত্বর ততদিন জনপ্রিয় হবে না, মানুষের কাছাকাছি যাবে না যতদিন না লিটল ম্যাগের বাইরে মানুষকে স্টল দেওয়া বন্ধ না করে। আমাদের দেশে হাতে গোনা ১০ থেকে ১৫ টা লিটল ম্যাগ রয়েছে এবং এর বাইরে যা আছে একটাও লিটল ম্যাগাজিন না। সবগুলোই মিডি ম্যাগাজিন অথবা সাহিত্য ম্যাগাজিন। যারা বড় আকারে স্টল পাচ্ছে না তারাই কেবল ছোট আকারের এসব দোকানে নিজেদের বই বিক্রি করছে। বাংলা একাডেমি এ ব্যাপারে কখনো সোচ্চার না। সারাজীবন বিমাতৃসুলভ আচরণ করে আসছে। যে কারণে লিটল ম্যাগের এই অবস্থা। আজকে দেখেন, এত বড় একটা বইমেলা! কোটি কোটি টাকা খরচ করে করলো কিন্তু লিটল ম্যাগকে দেখলে মনে হয় বিরিয়ানির পাশে ছোট পাত্রে এক টুকরো হাড়। আপনি দেখেন, লিটল ম্যাগের অবস্থা। যার কোনো ডিসিপ্লিন নেই, সুন্দর করে সাজানো নেই, মনে হচ্ছে যেন গরুর খামার। যেখানে ছোট আকারের একটা জায়গা বরাদ্দ দিয়ে বলা হলো এটা তোমাদের জায়গা, তোমরা এখানে বসো। অথচ এই লিটল ম্যাগকে বাংলা ভাষার মাতৃগর্ভ বলা চলে। কারণ বাংলাদেশের পূর্বের যতগুলো বড় বড় সাহিত্যক আছে আপনি দেখবেন প্রত্যেকটা লিটল ম্যাগ থেকে আসা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তরুণ লেখিকা তানি তামান্না বলেন, বইমেলার ইতিহাস থেকে আমরা জেনেছি যে একসময় বইমেলা মানেই লিটলম্যাগ ছিলো খুবই রমরমা। তরুণরা তখন নিজেদের লেখা প্রকাশ করতে কিংবা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার অংশ হিসেবে লিটলম্যাগের দ্বারস্থ হতেন। আড্ডায় মুখরিত থাকতো। সেসব এখন অতীত।
লিটলম্যাগের সোনালী সেই অতীত ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নিতে হবে তরুণদের। নিজেদের লেখা প্রকাশ করার পাশাপাশি অন্যদের লেখা পড়া এবং মতামত দেওয়া অথবা নিয়মির আকারে ম্যাগাজিন প্রকাশ করার মাধ্যমে লিটলম্যাগ চত্বরের দুর্দশা কিছুটা কমানো যেতে পারে।###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।