পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোবাইল হ্যান্ডসেটসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইন জুয়া (বেটিং) পরিচালনা করে প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তরিকুল ইসলাম ওরফে বাবু ও রানা হামিদ। তারা দুইজনই অনলাইন জুয়া (বেটিং) চক্রের বাংলাদেশ অঞ্চলের মাস্টার এজেন্ট। বেটিং সাইট থেকে অবৈধভাবে আয় করা এসব অর্থ দিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জমি, গাড়িসহ বিভিন্ন সম্পদও গড়ে তোলেন তারা। আর চক্রের প্রায় ৫০/৬০ জন সদস্যের সহায়তায় বেটিং পরিচালনার এসব অর্থের লেনদেন করা হতো মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে (ই-ট্রানজেকশন)। এদিকে, অনলাইন জুয়ার কারণে বাড়ছে পারিবারিক সহিংসতা। অন্যদিকে বাংলাদেশের টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) এ কে এম হাফিজ আক্তার।
হাফিজ আক্তার বলেন, দেশেরজুয়ার সাইটগুলো রাশিয়া, ইন্দ্রোনেশিয়া ও ভারত থেকে পরিচালিত হয়। আমাদের দেশে যারা থাকেন, তারা মাস্টার এজেন্ট। বিদেশে যারা পরিচালনা করেন, তারা সুপার এজেন্ট। যখন আইপিএল ও বিপিএল খেলাগুলো চলে তখন তারা বাজি ধরে।
এর আগে, গত শনিবার রাতে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান চালিয়ে অনলাইন জুয়া (বেটিং) চক্রের বাংলাদেশের মাস্টার দুই এজেন্ট তরিকুল ইসলাম ওরফে বাবু ও রানা হামিদ ও তাদের সহযোগী সুমন মিয়াসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
অভিযানে তাদের কাছ থেকে ঢাকা মেট্রো-গ-৩৬-০৩৫১ নম্বর প্লেটের একটি প্রাইভেটকার, নগদ ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, চারটি বিভিন্ন মডেলের মোবাইলফোন, পাঁচটি সিম কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ২৩টি মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার তিন আসামির নামে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। একইসঙ্গে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
সংবাদ সম্মেলনে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার হওয়া আসামিরা জানায়, তরিকুল ইসলাম বাবু, রানা হামিদ এবং সুমন মিয়া চক্রের পলাতক আসামি সাথী আক্তারসহ আরও ৫০/৬০ জন পলাতক আসামিদের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরেই অনলাইন জুয়া (বেটিং) পরিচালনা করে আসছে। তারা মোবাইল হ্যান্ডসেটসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহার করে অনলাইনে জুয়া খেলার সাইট পরিচালনা করতেন।
তিনি বলেন, অনলাইন জুয়া সাইট থেকে অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ দিয়ে তারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় জমি, গাড়িসহ বিভিন্ন অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছেন। গ্রেফতার হওয়া তরিকুল, বাবু ও সুমন জুয়ার টাকা মোবাইল ব্যাংকিং/ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন (ই-ট্রানজেকশন) করতেন।
গোয়েন্দা পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, তরিকুল ও বাবু অনলাইন জুয়া (বেটিং) সাইটগুলোর মাস্টার এজেন্ট হিসেবে দেশের বাইরে থাকা সুপার এজেন্টের কাছ থেকে প্রতিটি পিবিইউ (ভার্চ্যুয়াল কারেন্সি) ৬০ টাকার বিনিময়ে কিনতেন। পরে সাইটগুলোর ব্যবহারকারীদের কাছে প্রতিটি পিবিইউ ১৫০ টাকার বিনিময়ে এবং লোকাল এজেন্টের কাছে প্রতিটি পিবিইউ ১শ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতেন। তরিকুল ও বাবু ৮/১০ লাখ টাকার বিনিময়ে লোকাল এজেন্ট নিয়োগ করে যা পিবিইউ কারেন্সিতে দিতেন। পরে লোকাল এজেন্টরা ব্যবহারকারীদের কাছে ১৫০ টাকা বিনিময়ে বিক্রি করতেন।
এ কাজে অবৈধ অর্থের আদান-প্রদান মোবাইল ব্যাংকিং/ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করা হয়। এখানে কারেন্সি হিসেবে পিবিইউ সাইটের নিজস্ব ভার্চ্যুয়াল কারেন্সি ব্যবহার করতো। এভাবে সাধারণ ব্যবহারকারীদের টাকা তরিকুল ও বাবুর মাধ্যমে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছিল বলেও জানান এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তরিকুলের অললাইনে সিয়াম আহমেদ নামে (ছদ্মনামে) দুটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এর মাধ্যমে ওই এজেন্টরা গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকেন। বেটিং সাইটগুলো গ্রেফতার আসামিরা ছাড়াও তাদের অজ্ঞাতপরিচয় প্রায় ৫০/৬০ পলাতক আসামিদের পারস্পারির যোগসাজশে পরিচালিত হয়। গ্রেফতার তরিকুল ও বাবুর প্রকাশ্যে কোন আয়ের উৎস নেই। প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি, জব্দ করা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোতে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, সাইটগুলোতে বিভিন্ন ক্রিকেট খেলায় নির্দিষ্ট ওভার বা বলে কত রান হবে অথবা নির্দিষ্ট ম্যাচটি কোন দল জিতবে তার ওপর ১:৩ অনুপাতে বেটিং করা হয়। সাধারণ ইউজারের নির্দিষ্ট টার্গেট করা রান বা তার নির্দিষ্ট দল জিতলে বেটিংয়ের পিবিইউ পরিমাণের তিনগুণ বা বেটিংয়ের শর্ত অনুসারে পিবিইউ ফেরত পায়। এভাবেই বেটিং/অনলাইন জুয়া পরিচালিত হয়।
এখন পর্যন্ত চক্রটি কত টাকা পাচার করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চক্রটি এখন পর্যন্ত ৩০-৩৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। তবে পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করা গেলে এবং তদন্ত করে সঠিক কত টাকা পাচার হয়েছে তা বলা যাবে।
জুয়া সাইটগুলোর এডমিন কারা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনলাইন জুয়া (বেটিং) খেলাগুলোর সাইটের এডমিন রাশিয়া ইন্দোনেশিয়া ও ভারতে। দেশে থাকা মাস্টার এজেন্টরা তাদের কাছ থেকে পিবিইউ নিয়ে খেলাগুলো পরিচালনা করছে। পুরো চক্রকে ধরতে পারলে ধারণা করা যাবে টাকার পরিমাণ কত বড়।
পারিবারিক সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, অনলাইন জুয়া সাইটগুলো বিটিআরসি বন্ধ করছে। তারপরও বলবো প্রত্যেক পরিবারকে সচেতন হতে হবে। জুয়ার মাধ্যমে অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে। একমাত্র পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমেই তা বন্ধ করা সম্ভব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।