দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
পূর্ব প্রকাশিতের পর
মসজিদে শেষে প্রবেশ করেও সমাজের নামধারী বিত্তশালীরা অহংকার বশত সামনের কাতারে না বসতে পারলে যেনো তাঁদের মানসম্মানে ভাঁটা পড়বে সে লক্ষে টপকেই নয় প্রয়োজনে হাতে, শরীরে, কাঁধে এমনকি মাথায় পর্যন্ত আঘাত দিয়ে সামনে চলে যায়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত; আল্লাহ্ রসূল (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুনার দিন জানাবাত গোসলের ন্যায় গোসল করে এবং সালাতের জন্য আগমন করে সে যেন একটি উট কুরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে সে যেন একটি গাভী কুরবানী করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কুরবানী করল। চতুর্থ পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। পরে ইমাম যখন খুতবাহ দেয়ার জন্য বের হন তখন মালাইকা (ফেরেশতাগণ) যিকর শ্রবণের জন্য উপস্থিত হয়ে থাকে। [সহিহ বুখারী- ৮৮১] হাদিসের বর্ণনায় মিলে, আগে পরে আসার পুরুস্কার ফেরেস্তাগণের উপস্থিত থেকে লিপিবদ্ধ করছেন অথচ একশ্রেণির লোক পরে এসেও সামনে কাতারে বসার চেষ্টায় জুম’আর দিনের আমল পালনের বদৌলতে অগহেতুক কোরআন হাদিসকে অবজ্ঞা করার গুনাহ-তে লিপ্ত হচ্ছেন। তৃতীয়ত; খুতবার সময় একদম চুপ থাকতে বলা হয়েছে কারণ খুতবা এতোটা গুরুত্ববহ যা শোনার জন্য ফেরেস্তাগণের মানুষের সারিতে অবস্থান করে শুনতে থাকে। সুতা রাং কথা বলে নিজে খুতবা থেকে বিরত থেকে গুণাহ-গার হওয়া,অন্য মুসুল্লি কে শুনতে না দেয়া এবং ফেরস্তাগণকেও শুনতে বাঁধা দেয়ার গুণাহে লিপ্ত না হওয়ার তাগিদ এসেছে এখানে। চতুর্থ;জুমার দিনে মসজিদে প্রবেশের পর পরই সালাত আদায় করা, এরপর ইমামের পিছনে ফরয সালাত আদায় শেষে আবার সুন্নত সালাত আদায় করে নিতে হবে। মসজিদে প্রবেশ করে সালাত আদায় করে নেয়ার বিষয় হাদিসে বর্ণনা আছে;আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত: রসূল (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ মসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন বসার পূর্বে দু’রাক’আত সালাত পড়ে। (বুখারী ও মিশকাত)। আবার ফরয সালাতের পরেও দুই রাকাত সালাতের বিষয় স্পষ্ট করেছেন আমাদের রাসুল (সাঃ) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী (সাঃ) জুমআর সালাতের পর দু’রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। [সহিহ মুসলিম - ১৯২৬] পরিতাপের বিষয় হচ্ছে নামাজের ক্ষেত্রে আমরা এসকল আমল থেকে প্রায়শই বিচ্যুত ও উদাসীন। জুমার দিনে সঠিক নিয়মে নামাজ পর্যন্ত আদায় করার মতো স্থিতিশীলতা তৈরি করতে অক্ষম হয়ে পড়েছি আমরা। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দিনে শরীয়াহ-পন্থী ইবাদতের ধার না ধরে চলেছে মনগড়া সিস্টেম। আমাদের মৃত্যুর পর থেকে আল্লাহর সিদ্ধান্তের উপরে দুনিয়ার কোনো ওজর, খামখেয়ালিপণার, নিজের মনগড়া পদ্ধতিতে একারনে করতে সক্ষম হইনি ঐকারণে হয়ে ওঠেনি যত্তো সব আপত্তি স্থান পাবে কি বোকার দল?তোমার মুখে-তো কুলুপ আঁটানো থাকবে। কাজে আসবে আজকের দুনিয়ার কোনো বাতুলতা?জুমার দিনে আরেকটি বিশেষ সময় বিশেষ দোয়া সমূহ এতো দ্রুত কবুল করা হয়ে থাকে যে বান্দা তার রব-এর কাছে কিছু চাইলে ফিরিয়ে দেন না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আমাদের সঙ্গে একদিন শুক্রবারের ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, সেই সময়টায় যদি কোনো মুসলিম নামাজ আদায় রত অবস্থায় থাকে এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা বা দোয়া কবুল করবেন এবং এরপর রাসুল (সা.) তার হাত দিয়ে ইশারা করে সময়টির সংক্ষিপ্তকার ইঙ্গিত দেন। ’ (বুখারি)আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইমাম মিম্বরে বসা থেকে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত। (মুসলিম, ইবনু খুজাইমা, বয়হাকি) জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন, জুমার দিনে ১২ ঘণ্টা রয়েছে,তাতে এমন একটা সময়ে রয়েছে, যাতে আল্লাহর বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায় আল্লাহ তাই দেন। অতএব তোমরা আছরের শেষ সময়ে তা তালাস করো। [আবু দাউদ-১০৪৮, নাসাঈ- ১৩৮৯] অতএব জুমার দিনে দোয়া কবুলের সময়টা আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিবের নামাজ পর্যন্ত সময়টিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন ফিকহ শাস্ত্রবিদ গণ। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে;আসরের পর যে সময়টিতে যিকর, দোয়া, দরুদকে মশগুল থেকে মহান রবের নিকট পানাহার চাওয়া বা নিজ মন-বাসনা পূরণের দোয়া করার জন্য রাসুল (সাঃ) উল্লেখ করছেন আর আমরা ঠিক সেই সময় ইবলিশের বানানো নিয়মে পশ্চিমা ইহুদী,খ্রীষ্ট্রীয় সাংস্কৃতিকসহ পক্ষাঘাতে জরাজীর্ণ আনন্দে মেতে উঠছি।প্রত্যেকটা মুসলিম পরিবার এই আছরের পর সময়টিতে ব্যস্ত থাকে শুক্রবারের বিশেষ আয়োজন টিভিতে সিনেমা দেখার জন্য। আবার এই দিনটি আমাদের দেশে সাপ্তাহিক ছুটি থাকার কারণে দম্পতি, যুবক,যুবতীর, ছোট-বড় সবাই মিলে সিনেমা হলে যাচ্ছে সিনেমা দেখতে,যাচ্ছে সেজেগুজে মে-টেল, পার্ক, বেহায়া স্থানসমূহে ঘুরতে।আমাদের কর্ম ও লক্ষ্য হচ্ছে মহান রব-এর কুরআন ও রাসূলের হাদিসের বিপক্ষে যত কাজ আছে সেগুলোর বিপরীতে অবস্থান নিয়ে গর্হিত কর্মকে স্বীকৃতি দেয়া, যুতসই ভাবে করা,অন্যকে করতে উৎসাহিত করা। শয়তানকে খুশির জন্য যতো রকম শরীয়াহ নিষিদ্ধ কর্ম আছে সেগুলো করতে অতি মাত্রায় প্রণোদিত হওয়া,বিধর্মী কালচারে নিপতিত হয়ে তৃপ্তিবোধ করা। কিন্ত এসব কর্ম ও লক্ষ্যের ভয়ানক পরিণাম কখনো তলিয়ে দেখা হয়নি। জুমার দিনের আরেকটি বড় নেয়ামত হচ্ছে কোনো মুমিন বান্দার এই দিনে মৃত্যু বরণ করা। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন,‘যে মুসলমান জুমার দিনে কিংবা জুমার রাতে মৃত্যুবরণ করবে, নিশ্চয় আল্লাহ তা›য়ালা তাকে কবরের ফেতনা থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন। [তিরমিজি-১০৯৫; মিশকাত-১৩৬৭, মুসনাদে আহমদ-১১/১৪৭] কবরে মুনকার-নাকী রে সওয়াল জওয়াব থেকে শুরু করে কবরের যাবতীয় ফেতনা থেকে মহান আল্লাহ কবর-বাসীকে নিরাপদে রাখবেন। উল্লেখ্য আমার পিতা মরহুম আঃখালেক মল্লিক আজ থেকে দুই বছর আগে শুক্রবার মসজিদে জুমার সালাতে সিজদারত অবস্থায় ইন্তেকাল করেন এবং তার মাতা অর্থাৎ আমার দাদী যিনিও সাতাশ বছর পুর্বে শুক্রবার ৮ রমজান মৃত্যুবরণ করেন। পরিশেষে,বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে শুরু হওয়া চব্বিশ ঘন্টার শুক্রবারে প্রত্যেকটা ঘন্টা-মিনিট-সেকেন্ডে রয়েছে মহান আল্লাহ সুবাহানাল্লাহু›তায়ালার অলৌকিক নেয়ামত। সুতারাং এ দিনে যত পারি ইবাদত করি।বেশি বেশি সালাত আদায় করি, যিকির করি, দোয়া-দরুদ পাঠ করি। মহান রবের খুশিতে অন্তরে পরকালের ভয় এনে ইসলাম পরিপন্থী কাজসমূহ প্রত্যাখ্যান করি। আর সকলে আশা করি,মহান আল্লাহ যেনো আমাদের প্রত্যেকটি শুক্রবারকে ইবাদত হিসেবে গন্য করে নেন এবং এই রহস্য তম শুক্রবারেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করান।
লেখকঃ সাংবাদিক, গবেষক ও সাবেক প্রভাষক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।