Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সাভার টিকা কেন্দ্রে উপচেপড়া ভীড় নিয়ন্ত্রনে লাঠিপেটা, আহত ১৫

সাভার থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৬:০১ পিএম

আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে করোনাভাইরাসের প্রথম ডোজের টিকা প্রদান এই ঘোষণা জানার পর থেকেই সাভার টিকা কেন্দ্রে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর শুরু হয় হট্টগোল। এ সময় টিকা নিতে আসা লোকজন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিপেটা শুরু করে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকরা। এ ঘটনায় স্বাস্থ্যকর্মীসহ আহত হয়েছে অন্তত ১৫।

তবে লাইনে অতিরিক্ত মানুষের চাপে সামাজিক দূরত্বের বালাই না থাকায় বাড়াচ্ছে সংক্রমণের শঙ্কা। নেই কোন স্বাস্থ্যবিধি।
বুধবার দ্বিতীয় দিন নির্ধারিত সময় সকাল ৮টা থেকে টিকা দেওয়ার কথা থাকলেও ভোর চারটা থেকেই সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যানেজমেন্ট (বিআইএইচএম)’ কেন্দ্রে ভীড় করতে থাকেন হাজার হাজার মানুষ। যাদের অধিকাংশই গার্মেন্টস শ্রমিক।
সরেজমিনে টিকা কেন্দ্রে এক সিরিঞ্জ একাধিক ব্যক্তির শরীরে পুশ করতেও দেখা গেছে।
কোভিড-১৯ টিকা নিতে আসা সাধারণ মানুষের অভিযোগ, টিকা নিতে ভোর থেকেই কেন্দ্রের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়েছেন তারা। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে গেলেও ভীড়ের কারণে তারা টিকা নিতে পারেননি। এসময় প্রচন্ড গরম ও মানুষের ভীড়, হুড়োহুড়ি ও লাঠিপেটায় আহত হয়েছে অনেকেই। মেয়েদের গায়ের ওড়না, পায়ের স্যান্ডেল, মোবাইল ও মানিব্যাগসহ মূল্যবান জিনিস খুইয়েছেন টিকা নিতে আসা অনেকেই। কতৃপক্ষের শৃঙ্খলা না থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাকেই দুষছেন তারা।
টিকা প্রত্যাশী আমেনা বেগম বলেন, ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। হুড়োহুড়ি ধাক্কা ধাক্কিতো আছেই, কত মানুষ পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। একজনতো ধাক্কা সামলাতে না পেরে ড্রেনে পড়ে রক্তাক্ত জখম হয়েছে। তিনি বলেন, বয়স্ক অনেক মহিলাদের লাইনে বেশিক্ষণ দাড়িয়ে থাকা খুবই কষ্টকর। মহিলাদের জন্য আলাদা টিকা কেন্দ্র হলে ভালো হতো। তিনি বলেন, ভীড় সামলাতে না পেয়ে লাঠিপেটাও করেছে দায়িত্বরত লোকজন।
আশুলিয়ার ডেকো গার্মেন্টসের শ্রমিক ইসমাইল হোসেন ভোর ৬টায় এসে লাইনে দাড়িয়েছেন। বেলা ১২টা বাজলেও টিকা দিতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ভোর ৬টায় এসেও দেখি আমার আগেই আরও অনেকেই লাইনে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু হাজার হাজার মানুষের ভীড়ে বিশৃঙ্খলায় দুপুর হয়ে গেলেও টিকা নিতে পারিনি। কখন দিতে পারবো এরও নিশ্চয়তা নেই। হুড়োহুড়ি আর গরমে অনেকে অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এরমধ্যে পুলিশ ও সেচ্ছাবেকরা লাঠিপেটা করেছে টিকা নিতে আসা নারী পুরুষদের।
আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকা মমিনুল ইসলাম বলেন, টিকা দেওয়ার জন্য ভোর থেকে লাইনে দাড়িয়ে আছি দুপুর হলেও এখনও দিতে পারি নাই। এরমধ্যে হুড়হুড়িকে কয়েকবার পড়েও গেছি। এতো ভয়াবহ অবস্থা জানলে তো আর আসতাম না এই ঝামেলার মধ্যে।
লিজা আক্তার বলেন, ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এরমধ্যে ধাক্কাধাক্কিতে জীবন শেষ। টিকা নিতে আইসা তো বিপদে পরছি। কেন যে ঢুকলাম এইখানে এখন বাইর হমু ক্যামনে তাই ভাবতেয়াছি।
এদিকে টিকা কেন্দ্রের মাইকে বেশ কয়েকটি শিশু হারিয়ে যাওয়ার সংবাদও ঘোষনা দিতে শুনা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ সদস্যও দায়িত্ব পালনের সময় তার মোবাইল হারিয়েছেন বলে জানান।
টিকা কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সোহাগ মিয়া বলেন, মানুষের চাপে অসুস্থ্য হয়ে পরা ৩-৪ জনকে আমি উদ্ধার করে নিজ পকেট থেকে টাকা দিয়ে পানি কিনে খাইয়েছি। নিজে ভীর ঠেলেঠুলে বাইরে নিয়ে রিক্সায় তুলে দিছি।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সায়েমুল হুদা বলেন, আমাদের সক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি জনগণ এখানে টিকা নিতে আসছে। সরকারের ঘোষনার পর ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার পর সাধারণ মানুষ টিকা নিতে আসছেন। এতে আমরা খুবই খুশি। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি মোকাবিলা আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। ভীড়ে কিছু কিছু লোক আহত হয়েছেন। তাদের কেউ কেউ হাসপাতালে ভর্তিও আছেন। সংখ্যাটা স্বাস্থ্যকর্মীসহ ১০-১২জন হবে হয়তো।
তিনি আরও বলেন, উর্ধতন কতৃপক্ষের সাথে আমার কথা হয়েছে। উনারা আমাকে জানিয়েছেন, সাভারের চাহিদা অনুযায়ী ২৬ ফেব্রুয়ারীর পরও প্রথম ডোজ কন্টিনিউ করা হবে। তাই আমি সাভারবাসী ও গার্মেন্টস শ্রমিকদের অনুরোধ করবো আপনাদের অস্থির হওয়ার কোন কারণ নাই। ২৬ ফেব্রুয়ারির পরও আমরা কেন্দ্রে নিয়মিত প্রথম ডোজ টিকা প্রদান করবো। সাভারে এ পর্যন্ত ৭০ হাজার শিক্ষার্থীসহ ১২ লাখ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে শুধু মঙ্গলবার এই কেন্দ্রেই ১৮ হাজার লোককে টিকা দেয়া হয়েছে।
সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাইনুল ইসলাম বলেন, আমরা শুধু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করছি। তবে সাভারের মতো জনবহুল এলাকায় হটাৎ হাজার হাজার লোক টিকা নিতে আসায় আমাদেরও বেগ পেতে হচ্ছে।
টিকা নিতে আসা মানুষের ওপর লাঠিপেটার বিষয়টি কোনভাবেই কাম্য নয়। এটা কেন ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান ওসি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ