Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অপ্রতুল যাত্রী সুবিধার বরিশাল বিমান বন্দরের নিরাপত্তা ও অব্যস্থাপনার উন্নতি হচ্ছেনা

সিভিল এভিয়েশন অথোরিটি’রও হতাশা

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৮:০৫ এএম

বরিশালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র বিমান বন্দরে নানা অনিয়ম ও ত্রুটির পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যাবস্থা নিয়ে খোদ বেসামরিক বিমান চলাচল কতৃপক্ষের মধ্যে উদ্বেগ থাকলেও পরিস্থিতির উন্নয়ন এখনো আশাব্যাঞ্জক নয়। ১৯৯৫ সালের ৩ ডিসেম্বরে চালু করা দেশের অন্যতম এ অভ্যন্তরীন বিমান বন্দরটির তেমন কোন উন্নয়নও হচ্ছেনা গত কয়েক বছর ধরে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে সরকারীÑবেসরকারী ৪টি ফ্লাইট ওঠা নামা করে এ বিমান বন্দরে। এমনকি এ বিমান বন্দরে গত ২৬ বছরেও আবাহাওয়া পর্যবেক্ষনের কোন যন্ত্রপাতি বসেনি। এরমধ্যে যখন দুটি ফ্লাইট একসাথে বিমান বন্দরে থাকে তখনই কনকর্স হলে যাত্রীদের বিড়ম্বনার শেষ থাকে না। এখানে দুটি ফ্লাইটের যাত্রীদের বসার মত কোন ব্যবস্থা নেই। কনকর্সহলের এরাইভেল ও ডিপার্চার লাউঞ্জে পর্যাপ্ত শৌচাগার পর্যন্ত নেই।
এমনকি গত কয়েক বছর ধরে এ বিমান বন্দরের উন্নয়নের অনেক কথা নেতাদের বক্তৃতায় শোনা গেলেও বস্তবতার সাথে তার কোন মিল খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বছর দুয়েক আগে রানওয়ে লাইটিং ছাড়াও টার্মিনাল ভবনে লাগেজ ব্যাবস্থায় কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কতৃপক্ষের পরিকল্পনায় এখানের ৬ হাজার ফুট দৈর্ঘের রানওয়েটি সম্প্রসারনে জমি অধিগ্রহনের একটি প্রকল্পের কথাও বলা হয়েছে।
কিন্তু পুরো বিমান বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে খোদ কতৃপক্ষের মধ্যেই উৎকন্ঠা রয়েছে। সাম্প্রতিকালে বরিশাল বিমান বন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে দৈনিক ইনকিলাব সহ বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরে বিষয়টি নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কতৃপক্ষের উচ্চ পর্যায় থেকে সরেজমিনে অনুসন্ধান চালান হয়েছে। সে অনুসন্ধানে বেশ কিছু পর্যবেক্ষন সহ গুরুতর অনিয়ম ও অব্যস্থার কথা বলা হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব বিষয়ে বরিশাল বিমান বন্দরের ব্যবস্থাপকের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়ার পাশাপাশি কর্ম পরিকল্পনাও চাওয়া হয়।
এ বিমান বন্দরে উড়জাহাজের নিরাপদ পরিচালন নিশ্চিতে নিরাপত্তা প্রশ্নে যেসব পূর্বশর্ত পূরন অত্যন্ত জরুরী তার ১৫টি-ই অনুপস্থিত বলে প্রবিবেদনে বলা হয়েছে। সম্প্রতি বিমান বন্দরের রানওয়ের পূর্বপাশ ঘেষে থাকা ঘাসের জঙ্গলে রহস্যজনক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। বিমান বন্দরের দমকল কর্মীদের প্রায় আধা ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রনে এলেও একটি মহা নিরাপত্তা এলাকায় আগুনের উৎস্য সম্পর্কে কেউ কিছু বলতে পারেন নি। তবে বিমান বন্দর কতৃপক্ষ এ ব্যাপারে থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করেছেন।
এ বিমান বন্দরের রানওয়েতে ফ্লাইট পরিচালনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরী ‘লাইন মার্কিং’ পর্যন্ত এতদিন ঘাসে ঢাকা ছিল । অতি সম্প্রতি রানওয়ের দু পাশের ঘাস কাটা শুরু করেছেন স্থানীয় কতৃপক্ষ। তবে এসব বিষয়ে বিমান বন্দর ব্যবস্থাপক আব্দুর রহিম তালুকদারকে তার দপ্তরিক সেল ফোনে একাধীকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
গত মাসে বেসমরিক বিমান চলাচল কতৃপক্ষ-বেবিচক’এর পরিদর্শন টিম সরেজমিনে অনুসন্ধান শেষে তাদের রিপোর্ট জমা দেন ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড রেগুলেশন এবং আইএ বিভাগের পরিচালক-এর কাছে। পরে পরিচালক মুকিত উল আলম গত ১৮ জানুয়ারী এ সংক্রান্ত একটি চিঠিতে বরিশাল বিমান বন্দরের ব্যবস্থাপকের কাছে সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন বলে জানা গেছে। বেবিচক’র প্রকৌশল দপ্তর থেকেও একটি নির্দেশনা পাঠানো হয় বরিশালের ব্যবস্থাপককে।
পরিদর্শন প্রতিবেদনে ত্রুটি সমুহ দূর করতে তাকে ২০ কর্ম দিবসের মধ্যে ঢাকায় একটি কর্ম পরিকল্পনা পাঠাতেও বলা হয়। পরিদর্শন রিপোর্ট অনুযায়ী, ফ্লাইট ওঠানামাসহ বিমান বন্দর সর্ম্পকিত যাবতীয় তথ্য সংরক্ষনের যে ‘এরোড্রাম ম্যানুয়াল’ থাকার কথা, তা না পাবার কথাও বলা হয়েছে। সিভিল এভিয়েশন এ্যাক্ট ২০১৭’র সেকশন ৩ অনুযায়ী প্রতিটি বিমান বন্দরে এই ম্যানুয়াল থাকা বাধ্যতামূলক। এমনকি এ বিমান বন্দরে ‘ইর্মাঞ্জেসি অপারেশন সেন্টার (ইওসি)’ না খাকার কথাও বলা হয়েছে। এখানে কোন ‘আইসোলেটেডে এয়ারপোর্ট-বে’ নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধীক এয়ারলাইন্সের ক্যাপ্টেন জানিয়েছেন, ‘বিমান বন্দরের জন্য এই আইসোলেটেড বে অত্যন্ত জরুরী। বিস্ফোরক দ্রব্য কিংবা সংক্রামক রোগী থাকাসহ নানা কারণে একটি এয়াক্রাফটকে আলাদা করে সেইফ জোনে রাখতে হতে পারে। এমনকি এ বিমান বন্দরের অগ্নিনির্বাপক দলকে কোন প্রশিক্ষন দেয়া হয়না বলেও জানিয়েছে পরিদর্শন টিম। ফলে একটি উড়জাহাজের জরুরী অবতরন সহ যেকোন আপতকালীন সময়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালন করতে পারবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছে পরিদর্শক দল।
এমনকি এ বিমান বন্দরে ‘ডিজঅ্যাবল এয়ারক্র্যাফট প্ল্যান’ না পাবার কথাও বলা হয়েছে রিপোর্টে। ফলে ‘যে কোন কারণে এয়ারক্রাফট অচল হলে সেটিকে রানওয়ে বা এ্যাপ্রোন থেকে সরানো না গেলে ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ হয়ে যাবার আশংকা রয়েছে এ বিমান বন্দরে।
রানওয়েতে উড়জাহাজ অবতরনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরী ‘টিএইচআর’ এবং ‘সেন্ট্রাল লাইন মার্কিং’ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। সেন্ট্রাল লাইন থেকে প্রস্থের উভয় প্রান্তে ১৫০ মিটার দূরত্বে যে ‘আর ডব্লিউ ওয়াই সাইড স্ট্রিপ’ থাকার কথা তারও অস্তিত্ব নেই রানওয়েতে। পর্যবেক্ষন দলের প্রতিবেদনে রানওয়ের পাশের ঘাস বড় হয়ে স্ট্রিপ ঢাকা পড়ার কথাও উল্লেখ রয়েছে ।
এমনকি এয়ারপোর্টের এ্যাপ্রোন’র মার্কিং-ও খুজে পায়নি পরিদর্শন দল। আর ডব্লিউ ওয়াই সাইড স্ট্রিপ গ্রেড অনুযায়ী না থাকার পাশাপাশি এই বিমান বন্দরে ‘রানওয়ে এন্ড সেফটি এরিয়াÑআর ই এস’ এ নেই। রানওয়ের দুই প্রান্তে ৬০ মিটার জুড়ে এই সেফটি এরিয়া থাকার কথা। অবতরনের সময় দুর্ঘটনাজনিত কারণে বড় ধরনরে সমস্যা হলে যা উড়জাহাজ এবং তার যাত্রীদের বাঁচাতে সহায়তা করে। পরিদর্শন প্রতিবেদনে এ বিমান বন্দরের সিঙ্গেল লাইন ল্যাম্প না থাকা, ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের প্রশিক্ষন না দেয়া, দমকল কর্মীদের প্রয়োজনীয় গামবুট ও হেলমেট না থাকা সহ নিরাপত্তা দেয়াল ভাঙ্গা, নিরাপত্তা দেয়ালের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে উন্মুক্ত হয়ে পড়া এবং এয়ারপোর্টের চারদিকে থাকা নিরাপত্তা বাতিগুলো অকেজো থাকার কথাও উল্লেখ রয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পরে সিভিল এভিয়েশন অথারেটি’র সদস্য (অর্থ) মোঃ শফিকুল ইসলাম, পরিচালক (অর্থ) মোয়াজ্জেম হোসেন এবং রক্ষনাবেক্ষন ও উন্নয়ন বিভাগ-৩’র নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল হাসিব ইতোমধ্যে বরিশাল বিমান বন্দর পরির্দন করেছেন। বিমান বন্দরের সার্বিক পরিস্থিতি ও প্রয়োজনীয় উন্নয়নের বিষয়গুলো দেখতেই বরিশালে এসছেন বলে সংবাদ কর্মীদের জানিয়েছেন তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ