পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অল্প সময়ে ধনী হওয়ার নেশা। আর এই নেশা বাস্তবায়নে সহজ রাস্তা প্রশ্নফাঁস। প্রশ্নফাঁস করে অবৈধ এই টাকা কামানোর নেশায় নেমেছে সংঘবদ্ধ ১০ চক্র। ফলে গত পাঁচ বছরে গ্রেফতার করা হয় এসব চক্রের প্রায় তিন শতাধিক সদস্য। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কে নেই? শিক্ষার্থী ও শিক্ষক থেকে শুরু করে রয়েছে জনপ্রতিনিধিসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও। কিন্তু একাধিকবার গ্রেফতার হলেও জামিনে মুক্ত হয়ে ফের একই অপরাধ করছে তারা। এক্ষেত্রে বিচার কার্যক্রমের ধীরগতির সুবিধাও নিচ্ছে এসব চক্রের সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সম্প্রতি ডিবির হাতে গ্রেফতার আল আমিন রনি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে র্যাব-১১ এর হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। সে এসএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ছিল। প্রত্যেকেই নিজের জন্য প্রশ্ন খুঁজতে গিয়ে দালাল হয়ে যায়। বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার আলোচিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেত্রী মাহবুবা নাসরিন রুপাও নিজের ও তার ভাইয়ের চাকরির জন্য প্রশ্নপত্র খুঁজতে গিয়ে প্রশ্ন বিক্রির সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ে। ডিবির হাতে গ্রেফতার চক্রের কোনো কোনো সদস্য ২০১২ সাল থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত।
তারা বিভিন্ন সময় ব্যাংক, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, জ্বালানি বিভাগ, বাংলাদেশ রেলওয়ে, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর, সমবায় অধিদফতর, কৃষি অধিদফতর, খাদ্য অধিদফতরের অডিটর, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন হিসাব নিরীক্ষক কার্যালয়, জ্বালানি অধিদফতর, সাধারণ বীমা করপোরেশনসহ অন্তত ১৮টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে। গ্রেফতার মাহমুদুল হাসান ও নোমান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থেকে অপরাধ করে আসছে। গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন সংস্থার প্রতিটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং উত্তরপত্র সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে গোয়েন্দাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার আহসান হাবীব পলাশ জানান, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা ফেসবুক, ভাইবার, টুইটার ও ইমোসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া প্রশ্নপত্র বিক্রি করতো। তারা এইচএসসি পরীক্ষা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা এবং একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে নিয়োগ পরীক্ষার ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁস করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত রয়েছে বেশ কয়েকটি চক্র।
তিনি আরো বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত অনেকেই একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছে। তারা জামিনে মুক্ত হয়ে ফের একই অপরাধ করছে। আল আমিন, আজাদ ও নাহিদ এর আগেও গ্রেফতার হয়েছিল, কিন্তু তারা সংশোধন হয়নি, পুনরায় অপরাধে জড়িয়েছে।
সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো একটি সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের নভেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় বুয়েটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান নিখিল রঞ্জন ধরের নাম আসে পুলিশের তদন্তে। এরপর বুয়েট কর্তৃপক্ষ তাকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়। পাশাপাশি তাকে কোনো পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন না করার নির্দেশ দেয়া হয়। নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতিতে সহায়তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক মো. আলমাছ আলী ও আবদুল্লাহ আল মাবুদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রশ্নফাঁসে একটি চক্রের হোতা হিসাবে গ্রেফতার করা হয় বিকেএসপির সহকারী পরিচালক অলিপ কুমার বিশ্বাসকে।
একই অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরীন রুপা ও মহা হিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের (সিজিএ) বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান আজাদ। রূপা ইডেন মহিলা কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। একই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে ২০১৮ সালে দুপচাঁচিয়া উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানসহ ১০ জনকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রশফাঁসে উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ কয়েকজন ভিআইপির সম্পৃক্ততাও পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সংস্থার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান আজাদ, নাহিদ হাসান, আল আমিন সিদ্দিকী এর আগেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৩, ২০১৭ এবং ২০১৯ সালে গ্রেফতার হয়েছিল। তখন তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বিচার এখনো শেষ হয়নি। এ কারণে তারা জামিনে ছিল, জামিনে বের হয়ে পুনরায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। আরো মানুষকে চক্রের সঙ্গে যুক্ত করছে তারা।
সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে ৪৮ জন। মেডিক্যাল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ২০ জনকে। গত বছর রাষ্ট্রায়ত্ব পাঁচ ব্যাংকের সমন্বিত নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা গ্রেফতার করা হয়েছে ১৪ জন।
প্রশ্ন ফাঁসের মামলা তদন্ত ও জড়িতদের গ্রেফতারে ভূমিকা রেখেছেন এমন একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, সাধারণত প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় দুভাবে। একটি পদ্ধতি হলো-ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে। এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই হল থেকে বাইরে প্রশ্ন পাঠানো হয়। আর ওই প্রশ্নের উত্তর লিখে একই ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠায় চক্রের সদস্যরা। সম্প্রতি অডিটর নিয়োগ পরীক্ষায় এভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হয়। দ্বিতীয় পদ্ধতি হলোÑ প্রশ্ন ছাপা কিংবা বিতরণের সময় এক বা একাধিক কপি সরিয়ে ফেলা। পরে সেই প্রশ্ন কিংবা উত্তরসহ বিভিন্নজনের কাছে মোটা অঙ্কে বিক্রি করা। রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন এভাবে ফাঁস হয়েছিল।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণের সঙ্গে জড়িত থাকার শাস্তি ন্যূনতম তিন বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। পাবলিক পরীক্ষার (অপরাধ) আইন, ১৯৮০ এবং সংশোধনী ১৯৯২-এর চার নম্বর ধারায় এই শাস্তির বিধান আছে। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হওয়া আসামিদের অপরাধের শাস্তির রায় হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।